• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

গেরিলা: মুক্তিযুদ্ধের একটি সারসংক্ষেপ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালির জীবনে নেমে আসে এক ভয়ংকর, নৃশংস ও বিভীষিকাময় অন্ধকার রাত। এই দিনটি অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক ছিল। রাতে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালির ওপর যখন ঝাঁপিয়ে পড়ে ইতিহাসের বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ত তাণ্ডব চালায়, সেদিন থেকে ‘স্বাধীনতা’ কথাটি বাঙালির হয়ে যায়। 

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় ইতিহাসে অত্যন্ত গৌরময় ঘটনা। ১৯৭১ সালের এই যুদ্ধে আমরা পাই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ। যা আমাদের জাতীয় ইতিহাসের গৌরবজ্জ্বল অর্জন। মহান আত্বত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতার ইতিহাস সুনিপুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে গল্প, কবিতায়, গানে, নাটকে, সিনেমা’সহ বিভিন্ন শিল্পকর্মে। তেমনি একটি মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা ‘গেরিলা’। 

সৈয়দ শামসুল হকের নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সিনেমা গেরিলা। এইটি নির্মাণ করেছেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ। নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১০ এর জানুয়ারি থেকে। রাষ্ট্রীয় অনুদান এই সিনেমা নির্মানে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পাওয়া এই সিনেমাটি দর্শক হৃদয়ে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে।

এযাবত কালে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেকটি সিনেমা নির্মিত হয়েছে তাদের ভেতর অন্যতম ‘গেরিলা’। সিনেমাটির মাধ্যমে শহুরে ও গ্রামীণ পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের চিত্র সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গেরিলা চলচ্চিত্রে সহস্রাধিক শিল্পী অভিনয় করেছেন এবং প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব অভিনয় প্রতিভা দিয়ে প্রতিটি চরিত্র নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রের মূল ঘটনা প্রবাহিত হয়েছে বিলকিস বানুকে ঘিরে। এই চরিত্রের জন্য জয়া আহসানকে যেভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে, তা এক কথায় বলতে গেলে অসাধারণ। শ্বশুর বাড়িতে শ্বাশুড়ি এবং ভাসুর (এটিএম শামসুজ্জামান) এর সাথে থাকেন বিলকিস। তার স্বামী শিক্ষিত-সংস্কৃতিমনা-বলিষ্ঠ চিত্তের অধিকারী প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক হাসান (ফেরদৌস),  ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে নিখোঁজ হন। নিজের ব্যাংকের চাকরি, অসুস্থ শ্বাশুড়ির দেখাশোনার পাশাপাশি হাসানের খোঁজে ছুটতে ছুটতে গেরিলাযোদ্ধাদের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে বিলকিস। যুদ্ধে সরাসরি অংশ না নিলেও বিভিন্ন ভাবে গেরিলাযোদ্ধাদের সাহায্য করে। আর তার সাথে জড়িত থাকে সমাজের উচ্চশ্রেণীয় মিসেস খান (শম্পা রেজা), কবি ও গীতিকার আলতাফ মাহমুদ (আহমেদ রুবেল) এবং হাসানের দুধভাই তসলিম সর্দার (এটিএম শামসুজ্জামান)।

এমনি একদিন বিলকিস সিদ্ধান্ত নেয় যে,পাকিস্তানী অনেক বড় কর্মকর্তাদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাবে এবং সেখানে আক্রমন করবে। বিলকিসের টিকেট হিসেবে যাবেন সমাজের প্রভাবশালী মিসেস খান। প্ল্যান খুব সাধারণ, পার্টিতে প্রবেশ করে টয়লেটে বোমা লাগিয়ে বেড়িয়ে পরবে বিলকিস। সফলভাবে বোমা স্থাপন করতে পেরেও এক ভিন্নমুখী সমস্যার শিকার হয় সে। একজন সেনাকর্মকর্তা মিসেস খানকে আসতে দিতে না চাইলে একাই চলে আসতে হয় তাকে। শহীদ হন মিসেস খান। কিন্তু বিলকিসদের এ মিশন সফল হলেও, তার ফল শুভ হয় না মোটেও। ধরা পরে তাদের কয়েক সহযোদ্ধা। আর তাদের মাঝেই একজন ফাঁস করে দেয় আলতাফ মাহমুদ এবং বিলকিসের নাম।

এক সকালে তারা হানা দেয় আলতাফ মাহমুদের বাড়িতে। তারা সেখানে তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। এ খবর বিলকিসের কাছে নিয়ে আসে আলতাফের স্ত্রী। সে বিলকিস কে বলে তাড়াতাড়ি পালিয়ে যেতে। বিলকিস তার শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় তার বাপের বাড়ি জলেশ্বরের দিকে। পথিমধ্যে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয় তাকে। বিলকিসকে বাসায় পৌছাতে সাহায্য করে সিরাজ নামের এক মুক্তিযোদ্ধা । বিলকিসের ভাই খোকনও একজন মুক্তিযোদ্ধা। খোকন বাহিনীর জ্বালায় নাকানি-চুবানি খাওয়া অবস্থা পাকিস্তানীদের। কিন্তু রাজাকারদের সাহায্যে ধরা পরে খোকন এবং রাজাকারদের দ্বারা নৃশংসভাবে নিহত হয়। বিলকিস খোকনের লাশ খুঁজতে গিয়ে ধরা পরে পাক-বাহিনীর হাতে। তবে শেষ পর্যন্ত বীরের মতো আত্বাহুতি দেয় বিলকিস। নিজের সাথে উড়িয়ে দেয় একটি গোটা মিলিটারী ক্যাম্প।

মুভিটির নির্মাণ ছিল এক কথায় অসাধারণ এবং মুভিটি একটি পূর্ণাঙ্গরুপে ৭১ এর ছবি। ৭১ এর মুভি বানানো সম্ভব, কিন্তু ৭১ এর বাংলাদেশ দেখানো সম্ভব নয়। সেই অসাধ্যটি সাধন করেছে পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দীন ইউসুফ। মুভিটিতে যুদ্ধের ভয়াবহতা নৃশংসতা একেবারে পুরোপুরিভাবেই দেখানো হয়েছে।  প্রথম ভাগে শহর ভিত্তিক যুদ্ধ এবং শেষভাগে গ্রামভিত্তিক। সকল ক্ষেত্রেই রাজাকারদের রুপ দেখে অবাক হতে হয়েছে।

একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধের ঘটনাকে সেলুলয়েডে ফুটিয়ে তোলার সার্থকতা মূলত সেই সময়টাকে ধরে রাখার উপর নির্ভর করে এবং নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সার্থক।

পরিচিতি

সিনেমা: গেরিলা
পরিচালক: নাসির উদ্দিন ইউসুফ
প্রযোজক: ফরিদুর রেজা সাগর, ইবনে হাসান, এশা ইউসুফ
রচয়িতা:  সৈয়দ শামসুল হক
অভিনেয় করেছেন: জয়া আহসান, ফেরদৌস আহমেদ, এটিএম শামসুজ্জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ, শম্পা রেজা, আহমেদ রুবেল, গাজী রাকায়েত প্রমুখ।
সিনেমায় গানের সুরকার:  শিমুল ইউসুফ
চিত্র গ্রাহক: সমীরণ দত্ত
সম্পাদক: সামির আহমেদ
পরিবেশক: আশীর্বাদ চলচিত্র
মুক্তি: ১৪ এপ্রিল, ২০১১
নির্মাণব্যয়: ৩ কোটি টাকা (বাংলাদেশী টাকা)

Place your advertisement here
Place your advertisement here