• সোমবার ০৬ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত পদ্মাসেতু

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ মে ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

পদ্মাসেতুর মূল সেতুতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে।সেতু এখন যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। ২৫ জুন সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

 সেতুতে বাতি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন ল্যাম্পপোস্টে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে। আগামী মাসের মাঝামাঝিতে সেতু আলোকিত হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এখন যেসব টুকিটাকি কাজ বাকি আছে, তা আগামী জুনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা। পদ্মা সেতুতে গত মার্চ থেকে পিচ ঢালাইসহ সেতু চালুর চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়। গতকাল বিকেল চারটার দিকে মূল সেতুতে (নদীর অংশ) পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখনো কিছু জোড়া এবং ভায়াডাক্টে (নদীর পাড়ে) পিচ ঢালাই বাকি আছি। ঈদের পরই তা শেষ হয়ে যাবে।

এরপর সেতুতে সাইন, সংকেত ও মার্কিং বসানোর কাজ শুরু হবে। সেতুর সীমানাদেয়ালের ওপর স্টিলের রেলিং বসানোও বাকি আছে। এই কাজ আগামী মাসে শুরু হতে পারে বলে নির্মাণকাজ তদারকির সঙ্গে যুক্ত সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সেতু বিভাগের সূত্র জানায়, সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের জন্য ম্যুরাল ও ফলক নির্মাণের কাজ চলছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মিত হচ্ছে। দুটি ম্যুরালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে। জুনে সেতুতে যান চলাচল উদ্বোধনের লক্ষ্য নিয়ে দিনরাত কাজ চলছে বলে প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, সেতুতে এখন যেসব টুকিটাকি কাজ আছে, তা আগামী জুনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

২৫ জুন সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের আছে বলে সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে সেতুতে যান চলাচলে কী পরিমাণ টোল দিতে হবে, তা নির্ধারণের শেষ পর্যায়ে আছে সেতু বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার সেতুর টোল হার চূড়ান্ত করার জন্য একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত টোল হার অনুসারে, পদ্মা সেতু পারাপারে বড় বাসে ২ হাজার ৪০০ টাকা এবং মাঝারি ট্রাকে ২ হাজার ৮০০ টাকা লাগবে। পদ্মা ফেরি পারাপার হতে যানবাহনের যে পরিমাণ টোল দিতে হয়, এর দেড়গুণ দিতে হবে সেতু দিয়ে পারাপারের জন্য। ঈদুল ফিতরের পর প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবিত টোল হার অনুমোদন দিতে পারেন। এরপর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

ইতিমধ্যে টোল আদায় এবং সেতু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন (কেইসি) ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। এর মধ্যে কেইসি পদ্মা সেতু প্রকল্পে তদারক পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে। আর এমবিইসি মূল সেতু নির্মাণকাজের দায়িত্বে আছে। তাদের পাঁচ বছরের জন্য ৬৯৩ কোটি টাকায় নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে।

পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি প্রকাশ করেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুসারে, গতকাল পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ এগিয়েছে ৯৮ শতাংশ। নদী শাসনের কাজের অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ।

পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। গতকাল পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৭ হাজার ৩৪১ কোটি টাকার মতো। সেতু চালুর আগে প্রকল্প প্রস্তাব আবার সংশোধন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। তবে ব্যয় বাড়বে কি না এবং বাড়লে কত বাড়তে পারে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের টাকায় সেতুতে রেল চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখনো রেললাইন বসানো শুরু হয়নি। যানবাহন চালুর পর রেললাইন বসানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া রেললাইনের পাশে গ্যাসপাইপ যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রেললাইন মেরামতে হাঁটার রাস্তাও তৈরি করা হয়েছে।

দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলাকে সারা দেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে পদ্মা সেতু। এ সেতুর মাধ্যমে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু। সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

Place your advertisement here
Place your advertisement here