• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

নিঃশর্তে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করতে চায় তুরস্ক

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

কোনো ‘রাজনৈতিক শর্ত’ ছাড়াই বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে তুরস্ক প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ঢাকায় তুর্কি রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান। বুধবার বিকেলে ঢাকায় তুরস্ক দূতাবাসে কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিকাব সদস্যের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এ কথা জানান।

তুরস্কের রাষ্ট্রদূত বলেন, তাঁদের বেশির ভাগ প্রতিরক্ষা পণ্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতেই তৈরি করা হয়। তাঁদের ড্রোন ব্যবহার করা হয় লিবিয়া, সিরিয়া, নগরনো কারাবাখে।

মুস্তাফা ওসমান বলেন, ‘তুরস্ক প্রতিরক্ষা শিল্পে বিশাল অগ্রগতি অর্জন করেছে। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো থেকে যখন আমরা কিছু কিনতে চাই তখন সব সময় সেই কেনাকাটার সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক শর্ত থাকে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তুরস্ক সব সময় যৌথ উদ্যোগ বা প্রযুক্তি স্থানান্তরের প্রস্তাব দেয়। জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। আমরা সব সময় বলি, আপনারা চাইলে আমরা একসঙ্গে জাহাজ নির্মাণ করতে পারি। বাংলাদেশের জন্যও এটি অত্যন্ত প্রযোজ্য।’

রাষ্ট্রদূত তুরান বলেন, এই জাহাজ (তুরস্কের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ করা) শুধু সামরিক নয়, নৌযান হিসেবেও ব্যবহার হতে পারে। এটি একটি বড় সুযোগ। তুরস্ক সব সময় রক্ষণাবেক্ষণ, অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ দিয়ে থাকে। আর এখানে কোনো রাজনৈতিক শর্ত নেই।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা একে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারি, গভীর রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রতিফলন হিসেবেও দেখি।’

প্রতিরক্ষা কেনাকাটা বাণিজ্য হিসেবে গণ্য হয় না উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, তুরস্ক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ‘মাল্টি লঞ্চার রকেট’ দিয়েছে। এটি বাণিজ্য ভারসাম্যকে প্রভাবিত করছে না। বাণিজ্য ভারসাম্যের জন্য বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি, ওষুধ, তৈরি পোশাক খাতেও তুরস্ক যুক্ত হতে পারে।

বাংলাদেশ কী ধরনের প্রতিরক্ষা পণ্য কিনতে চাচ্ছে জানতে চাইলে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কোনো একক খাতে সীমিত নয়। তুরস্কের বিভিন্ন কম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের কম্পানিগুলোর আলোচনা চলছে। তবে আমি এখন এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমাদের সমন্বিত অংশীদারি আছে। যা প্রয়োজন তা আমরা দেব। ক্রেতাদের যা প্রয়োজন তাই আমরা দিয়ে থাকি।’

এর উদাহরণ হিসেবে রাষ্ট্রদূত তুরান বলেন, জাহাজ নির্মাণ কম্পানিগুলোও ‘প্যাট্রল ভেসেলস’ নির্মাণ করছে। সেগুলো উন্নত প্রযুক্তির। তিনি বলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। বিমানবাহিনী প্রধান তুরস্ক সফর করে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেছেন। এ মাসের শেষ দিকে আমাদের নৌবাহিনী প্রধান বাংলাদেশে আসছেন। আমরা লেনদেন সম্পন্ন করেছি। বাংলাদেশের প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা প্যাট্রল ভেসেল নির্মাণ করতে পারি।’

ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, চীনের উত্থানের কারণে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা পশ্চিম থেকে এশিয়ায় চলে এসেছে। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ভারসাম্য তৈরির চেষ্টা করছে। ক্ষমতার রাজনীতিতে সব সময় ভারসাম্য থাকে। কিছু দেশ আইপিএসকে সমর্থন করছে। এটি তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।

প্রশ্নোত্তর পর্বে রাষ্ট্রদূত ইঙ্গিত দেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার থেকে জামায়াতে ইসলামী নেতাদের বাঁচাতে চিঠি পাঠানো তুরস্ক এখন পুরোপুরি বদলে গেছে। তিনি বলেন, এ দেশের কোনো দলের সঙ্গে বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই তুরস্কের। বাংলাদেশের আইন কিভাবে চলবে বা কোন রাজনৈতিক দলকে জনগণ গ্রহণ করবে সেটি এ দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় কার্যকর নিয়ে টানাপড়েন দেখা দিয়েছিল তুরস্কের সঙ্গে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রদূতকেও ডেকে নিয়েছিল আংকারা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পুরো সম্পর্কটা আবারও স্বাভাবিক হয়েছে। রাষ্ট্রদূত জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক চিঠিই পুরো সম্পর্কের গতিপথ বদলে দিয়েছে।

রাষ্ট্রদূত তুরান বলেন, ২০১৬ সালে যখন তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়, তখন বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানকে সমর্থন জানিয়ে লিখিত বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তুরস্কের ইউরোপীয় বন্ধুরা, সরব হওয়ার আগেই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রশ্নে তুরস্কের কি অবস্থান পাল্টেছে—এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত তুরান কৌশলী উত্তর দেন। তিনি বলেন, তুরস্ক আগে ভুল করেনি। তৃতীয় পক্ষ দুই দেশের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি সৃষ্টি করেছিল। তিনি আরো বলেন, তুরস্ক মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে। তবে শেষ পর্যন্ত এটি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার বিষয়।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় তুরস্কের সহযোগিতা ও তুরস্কের ফার্স্ট লেডির কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত। ডিকাব সহসভাপতি মাহফুজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here