• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

স্বপ্ন ভাঙতে বসেছে মেডিকেলে সুযোগ পাওয়া তিন শিক্ষার্থীর

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

রাব্বী হোসেন, অতুল চন্দ্র বর্মন ও রিফাত আহমেদ মেধা তালিকায় এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও অর্থ সংকটে থেমে গেছে তাদের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন।

নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে মেধা তালিকায় মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওযার সুযোগ পাওয়া ৪০ জনের মধ্যে এই তিনজনই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান।

রাব্বী হোসেন সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়ার আব্দুর রশিদ ও ফাহমিনা আক্তার লাইলী সন্তান। বাবা বিমান বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। পেনশনের টাকায় জোড়াতালি দিয়ে চলে সংসার। রাব্বী চলতি বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সে এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করে। মা একজন গৃহিনী।

সংসারে আয় করার মতো আর কেউ নেই। বাবার পেনশন দিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা তাদের সংসারে।

এদিকে অতুল চন্দ্র বর্মন পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার সাকোঁয়া ইউনিয়নের ছত্র শিকারপুর গ্রামের নব কুমার বর্মন ও বাতাসি রানীর দ্বিতীয় সন্তান। দিনভর খেতে খামারে কাজ করে যা জোটে তা দিয়ে কোনো রকমে চলে সংসার।

বাবা-মা দু’জনই নিরক্ষর হলেও একমাত্র ছেলে অতুল মেধায় পরিপূর্ণ। সে এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয় এলাকায়। এবার বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তাদের ঘরে যেন ধরা দেয় চাঁদের আলো।

অতুল চন্দ্র বর্মন জানায়, মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলাম, কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি হতে বসেছে। এখন বাবার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখটা দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে, আমাদের মতো দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের এমন সুযোগ পাওয়া উচিৎ নয়।

অতুল চন্দ্র বর্মনের বাবা নব কুমার বর্মন জানান, ধার-দেনা ও বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে সন্তানকে পড়িয়েছি। মেডিকেলে ভর্তির ফি, বই, কংকাল ক্রয়, আনুষাঙ্গিক খরচসহ পাঁচ বছরের পড়াশুনায় প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। এজন্য তিনি সমাজের বিত্তশালী লোকদের সহযোগিতা চান।

অপরদিকে রিফাত আহম্মেদ দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার আদর্শপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেন ও রুবিনা বেগমের ছোট সন্তান। বাবা মিল চাতালে শ্রম বিক্রি করে যা পান তা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চালিয়ে দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ যোগান। বড় ছেলে ফজলে রাব্বী তোহান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

আর ছোট ছেলে এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করে এবার এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু স্বল্প আয়ের দরিদ্র এই শ্রমিক মেডিকেলে ভর্তির টাকা যোগান দিতে আজ দিশেহারা।

রিফাত আহম্মেদের মা রুবিনা বেগম জানান, আমাদের মাঠে কোনো জমি নেই। শুধু ভিটেটুকু আছে। স্বামীর শ্রম বিক্রির আয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। না খেয়ে ছেলে দুটিকে লেখাপড়া শিখাচ্ছি। আমার সন্তানের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সকলের সহযোগিতা ও দোয়া চাই।

সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম আহম্মেদ ফারুক জানান, এবার এ কলেজ থেকে শতভাগ পাসসহ ৪০ জন দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানও রয়েছে। এরা অত্যন্ত মেধাবী এবং অসম্ভব পরিশ্রমী। কলেজে পড়ার সময় আমরা তাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছি। এমন প্রতিভা যেন অভাবের কাছে হারিয়ে না যায়। এসব প্রতিভাকে বিকশিত করতে সমাজের বিত্তবানদের হাত প্রসারিত করার আহ্বান জানান তিনি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here