• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

বাজার ঊর্ধ্বগতি, ক্ষেত থেকেই পেঁয়াজ চুরি!

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ মার্চ ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

পেঁয়াজের বাজার ঊর্ধ্বগতির মাঝে নতুন এক কাণ্ড ঘটেছে পঞ্চগড়ে। নিজ পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আর্থিক স্বচ্ছলতা পেতে পেঁয়াজ আবাদ করে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। গেল কয়েকদিনে দুই ইউনিয়নের বেশ কয়েক গ্রামে ক্ষেত থেকে চুরি হয়েছে পেঁয়াজ। চাষিরা বলছেন, রাতের আঁধারে তাদের কষ্টের ফলানো ফসল তুলে নিচ্ছে একটি চোর চক্র। তবে কিছু কিছু এলাকায় এই চুরি ঠেকাতে রাতে পাহারা দিচ্ছেন অনেকেই।

ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ৫-৬টি গ্রামে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) থেকে চুরির এই নতুন কৌশল অবলম্বন করছে বলে জানান স্থানীয়রা। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তবে বিষয়টি এই দুই ইউনিয়নে নতুন এক আতঙ্ক হয়ে উঠেছে।

জানা গেছে, বর্তমানে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ তোলার মৌসুম চলছে। অন্যদিকে চারা পেঁয়াজ তোলা শুরু হবে আর কিছুদিন পরেই। অনেক চাষি ধান বিক্রি করে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। রাতেই ৩ থেকে ৪ কাঠা জমিতে লাগানো পেঁয়াজ তুলে পাতাগুলো কেটে ফেলে রাখে চোরেরা। এক কাঠা জমিতে প্রায় ৮ থেকে ৯ মণ পেঁয়াজ হয়। ৮০ টাকা কেজি দরে বর্তমানে চাষিদের নতুন পেঁয়াজ পাইকারদের কাছে বিক্রি হচ্ছে। এক কাঠা জমিতে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার পেঁয়াজ হয়। পেঁয়াজ চুরি হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা। তবে সকলের দাবি প্রথমবারের মতো এমন কাণ্ড দেখছেন তারা।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলছে, অনেকেই ধান বিক্রি করে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে পেঁয়াজ আবাদ করছেন। এই অবস্থা চললে মাঠে মারা যাবেন কৃষকরা।

সরেজমিনে উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ডাক্তারপাড়, ভদ্রেশ্বর বর্মতোল, প্রধানগছ, বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কাটা পাড়া গ্রামসহ ৫-৬ টি গ্রাম ঘুরে পেঁয়াজ চুরির এই খবর পাওয়া যায়।

ভজনপুর ইউনিয়নের ডাক্তারপাড়া গ্রামের চাষি মকবুল হোসেন বলেন, পেঁয়াজ চাষ করেছি ৩ কাঠা জমিতে। তিন কাঠা মাটিতে অন্তত ৩০ মণ পেঁয়াজ উঠতো। কিন্তু রাতের আঁধারে চোর এসে ক্ষেত থেকে সব পেঁয়াজ তুলে নিয়ে গেছে। সারাদিন কাজ কাম করি। রাতে একটু ঘুমাই, পাহাড়া দেবো কীভাবে। যারা এসব করছে তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।

একই এলাকার হাসিনা বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। দুই কাঠা মাটিতে পেঁয়াজ-রসুন করেছি। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে চোর ক্ষেত থেকে সব পেঁয়াজ ও রসুন তুলে নিয়ে গেছে। শুক্রবার (১ মার্চ) সকালে এসে দেখতে পাই ক্ষেতের ওপর গাছগুলো ফেলে রেখেছে। এখন খুব চিন্তায় আছি আমরা। বড় লোকসান হয়ে গেছে আমাদের।

ভদ্রেশ্বর বর্মতোল গ্রামের শ্রী বিপ্লব চন্দ্র রায় বলেন, আমি আড়াই শতক জমিতে পেঁয়াজ করেছিলাম। চোর সব পেঁয়াজ নিয়ে গেছে। আমরা কৃষির উপর নির্ভর করে চলি। এভাবে যদি আমাদের কষ্টের টাকায় ফলানো ফসল চুরি হয়ে যায়, তাহলে আমরা মাঠে মারা যাবো। বিষয়টি কৃষি বিভাগসহ প্রশাসনকে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।

একই গ্রামের আব্দুল জলিল ও প্রধানগছ গ্রামের হাবিবুরসহ বেশ কয়েকজন চাষি বলেন, আমরা এমন ঘটনা আগে দেখিনি। এতদিন শুনেছি যে গরু চুরি ও ঘরবাড়িতে চুরির কথা। এখন দেখছি ক্ষেত থেকে ফসল চুরি হচ্ছে। বর্তমানে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা। সারাদিন পরিশ্রম করে রাতে এই পেঁয়াজ যদি চুরি হয়ে যায়, আমরা চাষিরা কি করে খাব। এখন আমরা সব চাষিরা মাঠ থেকে ফসল চুরি যাওয়ার ঘটনায় চিন্তায় পড়ে গেছি। তারপরেও আমরা রাতে পেঁয়াজ রক্ষায় ক্ষেত পাহাড়া দিচ্ছি। বিষয়টি প্রশাসনসহ সকলকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।

তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার তামান্না ফেরদৌস বলেন, ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরির ঘটনা বাজার ঊর্ধ্বগতির কারণে মনে হচ্ছে। তবে আমরা এখনো এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি। বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরি যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। তবে এই চুরির ঘটনা রোধে করণীয় বিষয় জানতে চাইলে বলেন, চুরি ঠেকাতে হলে কৃষকদের ফলন উত্তোলনের আগ পর্যন্ত মাঠ পরিদর্শনসহ সচেতন থাকতে হবে। এতে করেই এই চুরি রোধ করা সম্ভব হবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here