• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

তেঁতুলিয়ার টিউলিপে মুগ্ধ পর্যটকরা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

বাহারী রঙের টিউলিপে মজেছে নানান বয়সী পর্যটকরা। গতবারের মতো এবারও দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় টিউলিপের একখণ্ড নেদারল্যান্ডস হয়ে উঠেছে। নানান রঙের ভিনদেশি টিউলিপ দেখতে নানান বয়সী পর্যটকের ঢল নেমেছে জেলার সীমান্তবর্তী টিউলিপ গ্রাম দর্জিপাড়ায়। 

বেসরকারি সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) উদ্যোগে ১৬ জন নারী কৃষাণী নিয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রায় দুই একর জমিতে চাষ করা হচ্ছে এ ভিনদেশি ফুল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এবারও টিউলিপ চাষে পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে।

শুক্রবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করতে ফিতা কেটে টিউলিপ গার্ডেনের উদ্বোধন করেন ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান ও ইএসডিওর পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার দম্পতি। এ সময় ইএসডিও-পিএকেএসের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও টিউলিপ চাষিরা উপস্থিত ছিলেন। বিকেল থেকে শতশত দর্শনার্থী ও পর্যটকের সমাগমে টিউলিপ বাগান দেখতে ব্যাপক সমাগম ঘটে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখে জেলার সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম দর্জিপাড়ায় রোপণ করা হয় টিউলিপ ফুল। মাত্র ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা গজিয়ে কয়েক সারিতে ফুল ছড়িয়ে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে টিউলিপ। এবার ১৯ প্রজাতির টিউলিপের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টার্কটিকা (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ সূর্যোদয় (হলুদ), ষ্ট্রং গোল্ড (হলুদ), জান্টুপিঙ্ক (গোলাপি), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিস্টিক ভ্যান ইজক (গোলাপি), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল শেড) ও গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)।

শুক্রবার ছুটির দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্রমণ ও বনভোজনে আসা পর্যটকদের মন মাতাচ্ছে এই ভিনদেশি রাজসিক টিউলিপ। বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ফাগুনের আগমনে বসন্তের প্রারম্ভে রঙিন টিউলিপে রাজসিক সৌন্দর্যে মজেছে ফুল প্রেমীরা। এসব পর্যটকদের অনেকেই পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে ছুটে এসেছেন টিউলিপ গ্রাম দর্জিপাড়ায়। টিউলিপের রূপে মুগ্ধ হয়ে মোবাইলে ধারণ করছেন টিউলিপের চিত্র। আর টিউলিপময় এ ভালোবাসার রং বহুগুণে ছড়িয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ইএসডিও'র উদ্যোগে তৃতীয়বারের মতো দর্জিপাড়ায় ১৬ জন নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে এ বছর ২৫ হাজার বীজ দিয়ে টিউলিপ চাষ করা হচ্ছে। পর্যটকদের মুগ্ধ করতেই এখানে ইকো ট্যুরিজম গড়ে তোলা হচ্ছে। আগামী মৌসুমে সারা বছরই এ অঞ্চলে ফুলসহ ইকো ট্যুরিজম রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এবার কিছুটা দেরিতে টিউলিপ লাগানো হলেও কয়েকমাস ধরে এটি মুগ্ধতা ছড়াবে।

নারী কৃষাণীরা বলেন, আমরা তৃতীয়বারের মতো নেদারল্যান্ডের রাজকীয় টিউলিপ চাষ করেছি। টিউলিপ ফুল দেখতে এ অঞ্চলে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটতে শুরু করেছে। যদিও এ বছর সবগুলো গাছে এখনো ফুল আসেনি, ফুল ফুটতে শুরু করেছে। আশা করছি গত দুই বছরের মতো এবারও টিউলিপের দৃষ্টি নন্দন সৌন্দর্য ও হাসিতে মুগ্ধ করবে।

টিউলিপ ফুল দেখতে আসা ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, এখানে বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ চাষ করা হচ্ছে। যদিও এখনো সব গাছে ফুল আসেনি, সপ্তাহের মধ্যে ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে এ বাগান। মুগ্ধ করবে আমার মতো সব পর্যটকদের। একই কথা বলেন পুলিশ সুপারের সহধর্মিনী ও জেলা পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী প্রিয়াংকা অধিকারী।

তিনি বলেন, টিউলিপের সৌন্দর্যে মোহিত হয়েছি। আসলে এর সৌন্দর্যের অনুভূতি প্রকাশ করার মতো ভাষা পাচ্ছি না। এতো ভালো লেগেছে। আমি যখনই শুনেছি তেঁতুলিয়ায় টিউলিপের চাষ হচ্ছে, তখন থেকেই মাথায় আসে এ টিউলিপ আমাকে দেখতে হবে। এ জন্য আমার স্বামী ও ইউএসডিওর নির্বাহী পরিচালক জামান ভাইকে বলেছি, আমি যেন টিউলিপ বাগানে এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি। 

রংপুর থেকে নারী দর্শনার্থী সামি বলেন, আমি প্রথমবারের মতো তেঁতুলিয়ায় এসেছি শুধু এই টিউলিপ বাগান দেখতে। অসাধারণ ও সুশোভিত ফুল। সত্যিই খুব মুগ্ধ হয়েছি। এমন সৌন্দর্যের মুগ্ধতার কথা জানান বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকরাও।

জানা যায়, শীত প্রধান অঞ্চলের ফুল টিউলিপ। যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘টিউলিপা’। এটি মূলত নেদারল্যান্ডসের ফুল। যা অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ। এটি বাগানে কিংবা কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়। ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখার জন্য এর আবেদন অনন্য। টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের অসংখ্য সংকর রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিডসহ টিউলিপের সকল প্রজাতিকেই সাধারণভাবে টিউলিপ নামে ডাকা হয়।

ইএসডিওর পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার বলেন, আমরা খুব আনন্দিত যে তৃতীয়বারের মতো তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়ায় টিউলিপ চাষ করতে পেরেছি। নারী ক্ষমতায়ন বৃদ্ধিতে আমরা এ অঞ্চলের প্রান্তিক নারীদের সহযোগিতায় এ বছরও টিউলিপ চাষ করেছি। আজ ফিতা কেটে বাগান উদ্বোধন করা হয়েছে। 

ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান বলেন, বাংলাদেশের খামার পর্যায়ে টিউলিপ চাষে তৃতীয় বর্ষ চলছে। দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া গ্রামে টিউলিপ চাষ করা হচ্ছে। এবারের প্রেক্ষাপটি একটু ভিন্ন ছিল। কেননা টিউলিপের ব্লাব (বীজ) সংগ্রহের বিষয়টি একটু কঠিন ছিল ডলারের সংকটের কারণে। নেদারল্যান্ড থেকে ব্লাব (বীজ) এলসি করে দেশে আনা অনেকটাই চ্যালেঞ্জ ছিল। এ কারণে বিলম্ব হয়েছে। তবে দেরিতে বীজ রোপণ করায় এবারের ফুলগুলো অনেক দিন থাকবে। এ টিউলিপ ঘিরে আগামী মৌসুমে সারা বছরই ইকো ট্যুরিজমের মাধ্যমে উচ্চ মূল্যের ফুল, ফল চাষ করব। যাতে সারা বছরই পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে। এ টিউলিপ চাষে ব্যাপক পর্যটকের আগমনে আমাদেরকে বিস্মিত করে। এবারও করবে আশা করি। 

Place your advertisement here
Place your advertisement here