• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

ভরা বর্ষায় কড়া রোদে পুড়ছে রংপুর, বাড়ছে হিট স্ট্রোক

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৪ জুলাই ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুমাস বর্ষাকাল। বছরের প্রায় ৮০ শতাংশ বৃষ্টিই হয় এ ঋতুতে। তবে আবহাওয়ার পরিবর্তন আর প্রকৃতির বিরূপ আচরণই জানিয়ে দিচ্ছে ঋতুচক্র বর্ষপুঞ্জিতে আটকা পড়েছে। এখন ভরা বর্ষায় কড়া রোদে লাপাত্তা ঝড়-বৃষ্টি। দিনে দিনে এ তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

দেশের অন্যান্য জায়গার মতো উত্তরের বিভাগীয় জেলা রংপুরও পুড়ছে মৃদু তাপপ্রবাহে। অসহনীয় গরম আর তাপদাহে বিমূর্ষ প্রাণ-প্রকৃতি। গত দুই সপ্তাহ ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে। স্মরণকালের এমন গরমে মানুষসহ হাঁসফাঁস করছে পশু-পাখিও। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না অনেকেই।  

এদিকে বর্ষাঋতুর সর্বগ্রাসী বিরূপ আচরণে রংপুরে বেড়ে চলেছে হিট স্ট্রোক, জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা তাপপ্রবাহে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে নিম্নআয়ের মানুষরা পড়েছেন। সংসার চালাতে বাধ্য হয়েই কাজে যাচ্ছেন তারা। অনেকেই আবার গরম সইতে না পেরে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন।

বিভাগের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা কেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে প্রায় তিন শতাধিক নারী-পুরুষ ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দিসহ মৌসুমী রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাছাড়া প্রতিদিনই কম-বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তীব্র গরমের কারণে নিম্নআয়ের দিনমজুর, শ্রমিক, ক্ষেত মজুররা হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। শুধু তিন দিনেই রমেক হাসপাতালে ২৫ জনের বেশি রোগী হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।  

রমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় সুরুজ্জামান সাঈদ নামের এক যুবকের সঙ্গে। প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবাকে হাসপাতালে এসেছেন তিনি। এই যুবক বলেন, প্রচণ্ড রোদে কোরবানির মাংস কাটাকাটি করতে গিয়ে ঘাম বসে তার বাবার শরীরে জ্বর এসেছে। ঈদের দিন বিকেল থেকে জ্বর শুরু হয়েছে। সঙ্গে সর্দি, কাশিও আছে। জ্বর না কমায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।

জরুরি বিভাগে থাকা কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বলছেন, প্রচণ্ড রোদের কারণে এমনটি হয়েছে। প্রায় প্রতি ঘরে ঘরে জ্বর লক্ষ্য করা গেছে।তীব্র দাবপ্রবাহের কারণে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে মানুষজন জ্বর, সর্দি, কাশিসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এজন্য ডাবসহ তরল জাতীয় ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
 
এদিকে অসহনীয় গরম আর তাপপ্রবাহের মাত্রা বাড়তে থাকায় রংপুর নগরীর সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে। বড় বড় শপিংমল, বিপণী বিতান ও মার্কেটগুলো খোলা থাকলেও নেই ক্রেতাদের সোরগোল। অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন পরিবহনের চালক, শ্রমিক, দিনমজুরসহ কর্মজীবী মানুষরা গরম উপেক্ষা করে বের হলেও অনেকেই হাঁসফাঁস করছেন।

নগরীর স্টেশন রোড দাবানল মোড়ে কথা হয় রিকশাচালক আশরাফ আলীর সঙ্গে। মাথার ওপর ছাতা থাকার পরও গরমের চোটে হাঁপিয়ে ওঠা এই রিকশাচালক বলেন, গরমে বাড়ির বাইরোত ব্যারে মনে হওছে জানটা চলি যাইবে। এতো ক্যানে গরম বাহে? ঘরে থাকাও দায়। ফ্যানের বাতাসও গরম। শরীর থাকি খালি ঘাম ঝরোছে। রোইদোত বাইরোত গাড়ি নিয়্যা ব্যারেয়া মোর অবস্থা তো খারাপ। কিন্তু হামার মতো রিকশা এ্যলার কোনো উপায় নাই। গাড়ি না চালাইলে খামো কি?

নগরীর শাপলা চত্বরে থ্রি স্টার ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে আসা মারুফা আক্তার বলেন, দুইদিন থেকে বাড়িতে বাচ্চাসহ চারজন অসুস্থ। প্রচণ্ড রোদ ও গরমে জ্বর ও ব্যথায় সবাই কাবু। প্রাথমিক চিকিৎসা করেও জ্বর সর্দি কমছে না। এ কারণে ওষুধ নিতে বাধ্য হলাম। কিন্তু নাপা, প্যারাসিটামল ওষুধ কোথাও না পেয়ে অন্য কোম্পানির সিরাপ ও ট্যাবলেট কিনতে হলো। এখন ওষুধেরও কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে।

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. শামীম আহমেদ বলেন, কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৩৪-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠা নামা করছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়াই ভালো। বিশেষ করে এই সময়ে শিশু-কিশোর ও বয়স্কদের আরও সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশি বেশি করে তরল জাতীয় শরবত, ডাবেরপানি পান করা উচিত।

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীসহ জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত তিনদিনে ২৫ জনের বেশি রোগী হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। 

সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, গরমে অনেকেই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই এ সময় সবাধানে চলাফেরা উচিত। বেশি বেশি করে ডাবসহ তরল জাতীয় ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এ চিকিৎসক।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত রংপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন বুধবার (১৩ জুলাই) রংপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে রংপুর অঞ্চলে অস্বাভাবিক আবহাওয়া বিরাজ করছে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও গরম বাতাসে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, সূর্যকিরণ লম্বালম্বিভাবে আসায় গরম তীব্র অনুভব হচ্ছে। বিশেষ করে গরম বাতাস স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে। এ তাপমাত্রা বৃদ্ধি আরও ২/৩ দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে, ঢাকা থেকেও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে গরম আরও দু’তিনদিন চলবে বলে জানিয়েছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, ঢাকা, টাঙ্গাইল, রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলাসহ রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে যে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা আরও দুই তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here