• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

রংপুরে গাছে গাছে আমের মুকুল 

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

হাঁড়িভাঙ্গা আম রংপুরের ঐতিহ্য। মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ এলাকায় চাষ হওয়ায় এই বিখ্যাত আম এখন রংপুর ছাড়িয়ে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুনাম অর্জন করেছে। এই আম রংপুর  অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সম্প্রতি ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে রংপুরের ঐতিহ্য হাড়িভাঙ্গা আম। এরফলে এবারের হাঁড়িভাঙা আমের মুকুলে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন চাষিরা। বৈরী আবহাওয়া না হলে এবারও সাধারণ আমের পাশাপাশি হাঁড়িভাঙা আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন বাগান মালিকরা। এই আমা রংপুরের অর্থনীতিতে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন। এদিকে হাঁড়িভাঙ্গা আমের জনক হিসেবে নফল উদ্দিন পাইকাড়ের স্বীকৃতি দাবি করেন তার পরিবারসহ স্থানীয়রা।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে ২ হাজার ৫৩৭ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের গাছ রয়েছে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন আম। এবার ফলন বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে, গত বছরের চেয়ে এবার হাঁড়িভাঙা আমের লক্ষ্যমাত্রা অনেকাংশে বেড়ে যাবে। গত অর্থবছরে রংপুর অঞ্চলে ২ হাজার ৫৩৭ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ হয়েছিল। গত বছরের চেয়ে এই বছর হাঁড়িভাঙা আমের ফলন বেশি আসবে। কারণ গত বছর যেই বাগানগুলো ছোট ছিল সেগুলোর ফল ধরবে এবং আমের উৎপাদন শুরু হবে। যার কারণে গত বছরের চেয়ে এই বছরে হাঁড়িভাঙা আমের উৎপাদন বেড়ে যাবে।

চাষিরা বলছেন, রংপুরের বিভিন্ন স্থানে আম চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক চাষি লাভের আশায় আম বাগান তৈরি করেছিল। এর ফলে  এই আমের সুখ্যাতি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুনাম অর্জন করেছে। অর্থনীতিও চাঙ্গা হচ্ছে। অথচ এই হাড়িভাঙ্গা আম সংরক্ষণের জন্য নেই কোন পদ্ধতি, নেই কোন গবেষণার ব্যবস্থা। এতে করে পৃষ্ঠপোষকতা ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া না থাকায় রপ্তানিকারকদের মাঝে অনিহা দেখা দিয়েছে। ফলে বিদেশে বাণিজ্যিক ভাবে এই আম রপ্তানি করতে পারছেনা সংরক্ষণের অভাবে। এই আম সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়া করা হলে স্থানীয় পর্যায়ে চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও পাঠানো সহজ হত এমনটাই মনে করছেন তারা। এতে চাষি পর্যায়ে হতাশা নেমে এসেছে।

জানাগেছে, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ, পদাগঞ্জ, রানীপুকুর, ময়েনপুর, বালুয়া মাসিমপুর ও বদরগঞ্জের নাগেরহাট, শ্যামপুর, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় এই হাঁড়িভাঙ্গা আম গাছের সারি সারি বাগান রয়েছে। এই এলাকার ছোট বড় বাগানগুলোতে দেখা গেছে গাছজুড়ে আমের মুকুল। সদ্য মুকুল ফোটার এমন দৃশ্য এখন শুধু বিস্তৃত গ্রামীণ জনপদেই নয়, শহরের গাছে গাছেও সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে আমের মুকুল। এর বাহিরে রংপুর সদরের পালিচড়া, জানকি ধাপেরহাট, চন্দনপাট, বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, কাউনিয়া, তারাগঞ্জসহ রংপুরের বিভিন্ন স্থানে আম চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সূত্রে জানাগেছে, মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিনের তেকানি গ্রামের নফল উদ্দিন পাইকাড় প্রায় ৮০ বছর এর আগে এই হাঁড়িভাঙ্গা আম সংরক্ষণে গাছটি রোপন করেছিলেন।

গাছটি প্রসঙ্গে নফল উদ্দিন পাইকাড়ের ছেলে আম চাষি আমজাদ হোসেন জানান, শতবছর আগে মিঠাপুকুরের বালুয়া মাসুমপুর এলাকার জমিদার ছিলেন তাজ বাহাদুর সিংহ। তিনি খুব সৈখিন মানুষ ছিলেন। তার একটি ফলের বাগান ছিল। এই বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির ফল ছিল। পেশাদার কিছু আম ব্যাবসায়ী তার বাগান থেকে আম নিয়ে পদাগঞ্জ হাটে বিক্রি করতো। সেখান থেকে তার বাবা এই হাড়ি ভাঙ্গা আম ক্রয় করে আবাদ শুরু করেন। আমটি খুবই সুস্বাদু হওয়ায় তৎকালীন আমলে ৫ টাকা দিয়ে একশ আম কিনে আনেন এবং আম খাওয়ার পর আমের আটি থেকে চারা গজায়। ভাঁঙ্গা হাড়ির টুকরোর মাঝখানে গাছটি জন্মেছিল বলে গাছটির নামকরণ করা হয় হাড়িভাঙ্গা। তখন থেকেই এই পদাগঞ্জ খোড়াগাছা অঞ্চলে হাড়িভাঙ্গা আমের যাত্রা শুরু হয়। সেই গাছটি এখন পর্যন্ত জীবিত রয়েছে এবং ফলও দিচ্ছে। তিনি হাঁড়িভাঙ্গা আমের জনক হিসেবে তার বাবা নফল উদ্দিন পাইকাড়ের স্বীকৃতি দাবি করেন । ৭৫ বছর আগের হাঁড়িভাঙ্গা আমের যাত্রা শুরু হলেও ১৯৯২ সাল থেকে রংপুরে হাড়িভাঙ্গা আমের স¤প্রসারণ শুরু হয়। বর্তমানে হাঁড়িভাঙ্গা আম প্রায় দুই হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে চাষ হয়। প্রতি হেক্টরে প্রায় ১০/১২ মেট্রিকটন আমের ফলন হয়। যার মূল্য প্রায় ২০০/২৫০ কোটি টাকার বেশি। ধীরে ধীরে আম বাগান ও চাষীর সংখ্যা বাড়ছে।

মিঠাপুকুর উপজেলার ময়েনপুর এলাকার আম চাষি সাদেকুল ইসলাম ও খোড়াগাছ এলাকার শাহাদৎ হোসেন বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু করে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আমের মুকুল এলে চাষিরা আম বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ঝড় কিংবা বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমের ফলন ভালো হবে। হাঁড়িভাঙা আম এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে তারা মনে করেন। সংরক্ষণ ও বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা হলে এই আম চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তারা মনে করেন।

এবিষয়ে রংপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর উপ—পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমকে ঘিরে রংপুরের কৃষি অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। প্রতি বছরই ৩ থেকে ৪'শ কোটি টাকার আমের বাণিজ্য হয়। এ বছর আমের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। আম গাছ পরিচর্যায় আমরা কষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান জানিয়েছেন, রংপুরে প্রতিবছর হাঁড়িভাঙা আমের বাম্পার ফলন হয়। এবার হাঁড়িভাঙা আম নিয়ে সুখবর রয়েছে। কারণ জিআই পণ্য ঘোষণা হওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে হাঁড়িভাঙার আম জিআই পণ্যে রূপান্তরিত হওয়ার অফিশিয়াল ঘোষণা আসবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here