• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

সুখের মূল সুস্বাস্থ্য

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ আগস্ট ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

শহুরে জীবনে সারা দিনের চাকরি-ব্যবসার ব্যস্ততায় শরীরের দিকে নজর দেওয়ার সময় কোথায়। এদিকে, যা দিনকাল পড়েছে শরীর স্বাস্থ্যের যত্ন না নিলে রোগে ভুগে নাকাল অবস্থার মধ্যে পড়তেই হবে। আর কে না জানে, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তাই শহরে কি গ্রামে কিংবা দূর মফস্সলে সবাইকেই ভাবতে হচ্ছে স্বাস্থ্য নিয়ে। ভাবতে হচ্ছে স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিয়ে। তাই, সকালের আদুরে ঘুম কাটিয়ে পড়িমড়ি করে সবাই পার্কে, রাস্তায় ছোটে হাঁটতে, ব্যায়াম করতে। এদিকে, করোনাকাল বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা কতটা জরুরি। স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে দিনদিন মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে।

স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ তো আর কম নেই। খাদ্যে ভেজাল, দুধে ভেজাল, ফলমূলে কিটনাশক—এসবের প্রভাব তো শরীরে আসেই। এসব কিছু থেকে রক্ষা পেতেই শরীরের ফিটনেস বাড়ানোর দিকে ঝুঁকছেন যুবক-বুড়ো থেকে সবাই। স্বাস্থ্য সচেতনতা মূলত স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যের ওপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার একটি প্রক্রিয়া যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকে সুষম খাবার গ্রহণ, সঠিক সময়ে সঠিক খাবার, নিরাপদ পানীয়, নিয়মিত শরীর চর্চার মতো বিষয়গুলো। সামাজিক, পারিবারিক এবং ব্যক্তিগতভাবে এই সচেতনতা অত্যাবশ্যকীয় কেননা বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি প্রতিনিয়ত। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর। তাই স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতনতার গুরুত্ব অপরিসীম।

সম্প্রতি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানিয়েছেন, দৈনিক ১১ মিনিটের ব্যায়াম মৃত্যুঝুঁকিসহ হূদেরাগ ও ক্যানসারের হার কমায়। প্রতিদিনের কাজের মধ্যে মাত্র ১১ মিনিট সময় বের করে মাঝারি থেকে ভারি অ্যারোবিক ব্যায়াম করলে তা শরীরের জন্য দারুণ কার্যকরী হতে পারে। এর ফলে ক্যানসার, হৃদরাগ কিংবা অপ্রাপ্তবয়সে মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত কমতে পারে।

গবেষণা বলছে, যত বেশি শারীরিক কসরত করা হবে, ততই জটিল রোগ কিংবা অকালে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে আসবে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা প্রায় ১৯৬টি গবেষণার তথ্য পর্যালোচনা করেছেন। যাতে প্রায় ৩ কোটির বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে ১০ বছরের তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করা হয়েছে। মূলত যারা দৈনিক গড়ে ২২ মিনিট ও সপ্তাহে গড়ে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করে থাকেন, তাদের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে।

ব্রিটিশ জার্নাল অব স্পোর্টস ম্যাগাজিনে প্রকাশ করে বলা হয়েছে, যারা একদমই ব্যায়াম করেন না তাদের তুলনায় যারা সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি থেকে শুরু করে ভারি অ্যারোবিক শারীরিক ব্যায়াম করেন তাদের মৃত্যুঝুঁকি ৩১ শতাংশ কম। একই সঙ্গে ব্যায়াম না করা ব্যক্তিদের থেকে সপ্তাহে ঐ নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যায়াম করা ব্যক্তিদের হূদেরাগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা ২৭ শতাংশ ও ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ১২ শতাংশ কম।

রাজধানী থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘আমার স্বাস্থ্য’ কয়েক বছর আগে রাজধানীতে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক জরিপ করে। এ থেকে জানা যায়, ৭৪ শতাংশ মানুষ তারা স্বাস্থ্যবিষয়ে সচেতন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত বলে মনে করেন প্রায় ৮১ শতাংশ। ৬৮ শতাংশ মানুষ নিয়মিত হাঁটেন। দিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি খান। ৬০ শতাংশ মানুষ সপ্তাহে মাত্র এক দিন লাল মাংস খান অর্থাত্ মোটামুটি আশানুরূপ পরিবর্তন বা সচেতনতা এসেছে মানুষের মধ্যে। ৬৯ শতাংশ মানুষ রোজ পরিমাণমতোই ঘুমান। তারপরও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অসুখে ভুগছে মানুষ।

এ প্রসঙ্গে জরিপ থেকে জানা যায়, ৬১ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন এক বেলার খাবার ঘরের বাইরে খান। এক্ষেত্রে শিশুর সংখ্যাই বেশি অথচ জরিপে ৭৭ শতাংশ বলছেন তারা তাদের শিশুর সুষম খাবারের ব্যাপারে সচেতন। জরিপে এটাও উঠে এসেছে যে, ৯৫ শতাংশই ভেজাল এবং জীবাণুযুক্ত খাবার তারা খাচ্ছে, যা সব সময় স্বাস্থ্যকর নয়। এই ঝুঁকি কমাতে যতটা সম্ভব বাইরের খোলা খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিত্সকরা। বাইরের মুখরোচক খাবার সম্পর্কে পুষ্টি বিজ্ঞানীরা জানান, বাচ্চাদের স্কুলের টিফিনের বিষয়ে অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতন হওয়া দরকার। তা না হলে আজকের শিশু দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকির মুখে পড়বে। তাই ঘরে তৈরি খাবারে শিশুদের অভ্যস্ত করতে হবে।

 বাড়ছে সচেতনতা
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামের চেয়ে শহরাঞ্চলে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি দিনদিন বাড়ছে। এসব জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম জরুরি। রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই যদি নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস করা যায় তাহলে রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করেন চিকিত্সকরা। তাই এখন যোগ ব্যায়াম, হাঁটার দিকে ঝোঁক বাড়ছে নাগরিকদের। শহরের আনাচেকানাচে গড়ে উঠেছে জিম। সেখানে তরুণ যুবকদের ভিড় সবচেয়ে বেশি। শহরগুলোতে মাঠ কমে আসার পাশাপাশি খেলার সুযোগও কমে আসছে। তাই তরুণ প্রজন্ম ঝুঁকছে জিমনেসিয়ামে গিয়ে শরীর রক্ষার দিকে।

এই যে সচেতনতা বাড়ছে মানুষের এর প্রভাবে মানষের গড় আয়ুও বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস-২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে নারীদের গড় আয়ু ৭৪ দশমিক ২ বছর ও পুরুষদের গড় আয়ু ৭০ দশমিক ৮ বছর। নিজেকে সতেজ আর নিরোগ রাখতে তাই স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে নগরীর মানুষের মধ্যে। নগরজীবনের ব্যস্ততায় শারীরিক পরিশ্রমের চেয়ে মানসিক পরিশ্রমই বেশি। ফলে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে হাঁটহাঁটি আর ব্যায়ামের প্রতি ঝুঁকছে নগরবাসী। ভোরের সূর্য ওঠার আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে সরব উপস্থিতি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের। হাতির ঝিল, ধানমন্ডি লেক, চন্দ্রিমা উদ্যান, রমনা পার্ক প্রভৃতি স্থানে মানুষের ঢল নামে। গুলশান, বনানী, উত্তরা, মিরপুর এলাকার পার্ক, উন্মুক্ত স্থান বা একটু প্রশস্ত রাস্তার ফুটপাথ ধরে হাঁটতে আর ব্যায়াম করতে দেখা যায় নগরবাসীকে। নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ, তরুণ—সবাই আছেন এই ভোরে ভ্রমণকারীর দলে। কেউ দৌড়াচ্ছেন, আবার কেউ-বা বয়সের ধকলে লাঠিতে ভর করেও হাঁটছেন। তবে, স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যে সকালেই হাঁটতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। যখন সময় পাবেন সেই সময়েই সেরে নিতে পারেন ব্যায়ামের কাজটা। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যায়ামের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় বিকাল বা সন্ধ্যা।

তবে, শুধু ব্যায়াম করলেই তো চলবে না। খাওয়া হতে হবে পরিমিত এবং স্বাস্থ্য উপযোগী। ডায়েটিশিয়ানরা বলছেন, সব খেতে পারেন, খেতে পারেন যত ইচ্ছা। শুধু ব্যায়াম করে সেই ক্যালরিকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তা যদি না করেন, তবেই পরিধি বাড়বে শরীরের।

Place your advertisement here
Place your advertisement here