• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

মুক্ত আকাশে ওড়ার অপেক্ষায় ২০ শকুন

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

শকুন রক্ষা ও বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া ফরেস্ট জাতীয় উদ্যানে শকুন পরিচর্যা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এই কেন্দ্রে বিভিন্ন জেলা থেকে শকুন সংগ্রহ করে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়। পরে সবল ও সুস্থ হলে আবার প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হয়। বিলুপ্ত প্রায় এই পাখি দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে উদ্যানে আসছেন দর্শনার্থীরা।

বর্তমানে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে সিংড়া ফরেস্ট জাতীয় উদ্যান শকুন পরিচর্যা কেন্দ্রে ২০টি শকুন অবমুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অসুস্থ ও আহত অবস্থায় শকুন উদ্ধার করে শকুন রক্ষা এবং বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে সিংড়া ফরেস্ট জাতীয় উদ্যান কেন্দ্রে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়। সুস্থ হলে আবার তাদেরকে অবমুক্ত করা হয় মুক্ত আকাশে। প্রকৃতির ঝাড়ুদার হিসেবে পরিচিত বিলুপ্ত প্রায় এই শকুন শীত মৌসুমে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আসে। দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া এসব শকুন অনেক সময়ই অসুস্থ হয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নামে। আগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব শকুন উদ্ধার হলেও পরিণতি হতো মৃত্যু। কিন্তু দিনাজপুরে বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া ফরেস্টে জাতীয় উদ্যানে শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপনের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।

২০১৪ সাল থেকে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ২০১৬ সালে বন বিভাগ ও আইইউসিএন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বীরগঞ্জ সিংড়া ফরেস্ট জাতীয় উদ্যানে এই কেন্দ্রটি চালু করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত উদ্ধার করে আনা ১৪৯টি শকুন কয়েক মাস নিবিড় পরিচর্যায় রেখে সুস্থ হলে আবারও প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২০২২ সালে ৩২টি শকুন দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেলেও ২০টি শকুন এ পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছে। বাকি ১২টি শকুনকে সাময়িক চিকিৎসা শেষে অবমুক্ত করা হয়। এখানে প্রতি বছর প্রায় ২০-২৫টি উদ্ধার করা শকুন পরিচর্যা করে আকাশে অবমুক্ত করা হয়।

বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সায়মা রুম্মান বলেন, বন্ধুদের মুখে শুনেছি সিংড়া ফরেস্ট জাতীয় উদ্যানে আনেকগুলো শকুন খাঁচার মধ্য রাখা হয়েছে চিকিৎসার জন্য। তাই আজ পরিবারের সঙ্গে দেখতে আসলাম। এই প্রথম এতোগুলো শকুন একসঙ্গে দেখলাম, ভালোই লাগছে। 

ঠাকুরগাঁও থেকে সিংড়া ফরেস্ট জাতীয় উদ্যানে ঘুরতে আসা ইমন ইসলাম বলেন, আমি জানতাম না যে এখানে শকুন পরিচর্যা কেন্দ্র আছে। বনের ভেতর এসে দেখালাম অনেকগুলো শকুন একসঙ্গে খাঁচার মধ্য রাখা হয়েছে। দেখে ভালোই লাগছে। 

সিংড়া ফরেস্ট বন বিভাগের কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথ বলেন, শীত মৌসুমে অন্যদেশ থেকে আসা ক্লান্ত ও অসুস্থ শকুনকে বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে এই পরিচর্যা কেন্দ্রে আনা হয়। এখানে রেখে সুস্থ করে তোলা হয়। পরিবেশের জন্য ভীষণ উপকারী এই পাখিগুলো এক নজর দেখতে সিংড়া জাতীয় উদ্যানে ভিড় করেন শত শত দর্শনার্থী। এখানে প্রতি বছর প্রায় ২০-২৫টি শকুন পরিচর্যা করে মুক্ত আকাশে অবমুক্ত করা হয়।

শকুনগুলো দেখভালের দায়িত্বে থাকা দিনাজপুরের বাঁশেরহাট ভেটেরিনারি কলেজের চিকিৎসক খাদিজা বেগম জানান, দীর্ঘ যাত্রাপথে খাবারের অভাব ও ক্লান্তির কারণে অনেক সময় শকুন অসুস্থ হয়ে পড়ে। শকুন দেখামাত্রই আক্রমণ করে বসে অসচেতন লোকজন। নির্যাতনের পাশাপাশি মানুষ এদের ধরে মেরেও ফেলে। এখন শকুন পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা ২০টি শুকুন অনেক ভালো রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসাধীন ২০ শকুনের জন্য এক দিন পর পর ১০ কেজি মুরগির মাংস দেওয়া হয়। এছাড়াও স্যালাইন, পানি ও ওষুধ নিয়মিত দেওয়া হয়। শকুনই একমাত্র প্রাণী, যা রোগাক্রান্ত মৃত প্রাণী খেয়ে হজম করতে পারে এবং অ্যানথ্রাক্স, যক্ষ্মা, খুরা রোগের সংক্রমণ থেকে জীবকূলকে রক্ষা করে। কিন্তু বড় বড় গাছ, খাদ্যের অভাব ছাড়াও বাংলাদেশে ডাইক্লোফেনাকের যথেষ্ট ব্যবহারের কারণে শকুন বিলুপ্তির মুখে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here