• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

নেশাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন নবী নূর, বিদেশেও যাচ্ছে তার চিত্রকর্ম

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

ছোটবেলায় ভালো লাগতো আঁকাআঁকি করতে। হাতের কাছে যাই পেতেন তা দিয়ে ইচ্ছে মতো এঁকে যেতেন। পড়াশোনায় ভালো করতে না পারলেও অঙ্কনে হয়ে ওঠেন পারদর্শী। অঙ্কনকেই বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। খুলে ফেলেন আর্টের দোকান। এখন সেই আর্টের দোকান থেকে অর্ডার আসছে দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ইউরোপের দেশগুলো থেকে।

বলছিলাম রংপুরের নিউ জুম্মাপাড়া এলাকার আর্টিস্ট নবী নূরের কথা। বাড়ির পাশে ‘নব নূর আর্ট’ নামে একটি আর্টের দোকান গড়ে তুলেছেন তিনি। তার বয়স ষাটোর্ধ্ব হলেও আর্টের জগতে তিনি এখনো তরুণ। একনাগারে এঁকে যেতে পারেন গ্রামীণ ও প্রাকৃতিক বিভিন্ন মনোরম দৃশ্য। কোনো কিছু দেখে হুবহু তার মতো অঙ্কন করে দিতে পারেন।

আর্টের দোকানটিতে গিয়ে দেখা যায়, নবী নূর আপন মনে গ্রামীণ প্রাকৃতিক দৃশ্য এঁকে চলেছেন। অঙ্কনের ফাঁকে তিনি জানান, যে দৃশ্যটি তিনি আকঁছেন সেটির অর্ডার এসেছে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে। আঁকা শেষ হলে সেটি তিনি সেদেশে পাঠিয়ে দেবেন। তিনি আরও জানান, শুধু লন্ডনই নয়, ভারত, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রেও তিনি তার একাধিক অঙ্কন পাঠিয়েছেন।

নবী নূর বলেন, আকাঁআঁকি আমার কাছে নেশার মতো। এটা ছাড়া অন্য কিছু ভালো লাগে না। আমি যখন ক্লাস ওয়ানে পড়তাম তখনই দেখেছি পড়ার থেকে আকাঁআঁকি আমার বেশি ভালো লাগে। আপন মনে যাই আকঁতাম তাই অন্যরা ভালো বলতো। তবে এ আঁকার জন্য পরিবার ও অনেক মানুষের নানান কথা শুনতে হয়েছে। তবুও আঁকাআঁকি ছাড়িনি। পড়াশোনা ভালো না লাগায় এসএসসির আগেই ছেড়ে দেই। বাড়ির পাশে একটি আর্টের দোকান খুলে বসি। তখন বিভিন্ন চিত্র আঁকার পাশাপাশি, বিভিন্ন ব্যানার  ও দেয়ালেও আকাঁআঁকি করতাম। সে সময় আশপাশে আমার নাম ছড়িয়ে গেল। রংপুর শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আর্টের প্রতিযোগিতায়ও প্রথম হই। বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজ আসতো, ভালোই চলছিল। কিন্তু এখন ডিজিটাল পদ্ধতি আসার কারণে আমার মতো অনেক আর্টিস্টদের কাজ অনেক কমে গেছে। সেই সঙ্গে আঁকার জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলোর দাম যে হারে বেড়েছে সে হিসেবে অঙ্কনগুলোর দাম কমে গেছে। এখন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিকতে না পেরে অনেক আর্টিস্ট পেশা বদলে ফেলেছেন। আর্ট করা আমার নেশা হওয়ার কারণে আমি এখনো ধরে আছি।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে হলে এখনই সরকারিভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে ভালো কোনো আর্টিস্ট পাওয়া যাবে না।

নবী নূর বলেন, আমি প্রায় সমই শখের বসে অঙ্ককগুলোর ছবি তুলে ফেসবুক আইডিতে দিতাম। মানুষ ভালো মন্তব্য করতো। আমারও ভালো লাগতো। একদিন হঠাৎ করে দেখি অনলাইনে একজন অর্ডার দিয়েছে। তখন থেকে শুরু। এখন এভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও বিদেশ থেকেও সরাসরি অর্ডার পাচ্ছি। এখন মোটামুটি ভালো চলছে।

স্কুলছাত্র নূর আলম বলেন, এখন ডিজিটাল যুগে এ ধরনের আকাঁআঁকি খুব কমই দেখা যায়। আমি মাঝে মাঝে উনার আর্ট দেখতে আসি। ওগুলো আমার খুব ভালো লাগে।

আর্টিস্ট নবী নূরের প্রতিবেশী মুদি দোকানি লিমন মিয়া বলেন, নবী নূর একজন ভালো আর্টিস্ট। অনেকদিন থেকে দেখে আসছি তিনি আকাঁআঁকি করছেন। অনেক দূর থেকেও মানুষ আসে তার কাছে কাজ করে নেওয়ার জন্য। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রি টিপু মুনসি তার কাছে একাধিকবার অঙ্কন করে নিয়েছেন। এখন শুনতেছি তিনি বিদেশেও তার অঙ্কন পাঠাচ্ছেন।

রংপুর শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার নুঝাত তাবাসসুম রিমু বলেন, এটি উদ্বেগের বিষয় যে সারাদেশেই আর্টিস্টদের এখন দুরাবস্থা চলছে। তবে পেশাদার আর্টিস্টদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অনুদানের ব্যবস্থা আছে। যে সকল আর্টিস্টদের বয়স ৪০ এর বেশি তারা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলে এ অনুদান পাবেন। 

Place your advertisement here
Place your advertisement here