• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের সমারোহ 

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার টুকুরিয়া, বড়আলমপুর চতরা ও কাবিলপুর এই ৪ ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষে রংপুর দিনাজপৃুর জেলাকে দ্বি-খন্ডিত করে প্রবাহিত করতোয়া নদী। এই ইউনিয়ন গুলোর ওই নদীর তীরবর্তী গ্রাম সমুহের কৃষকের প্রতি বছরই জমি জিরাত, ঘরবাড়ি ভাঙ্গনের কারণে করতোয়ার গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ে। অভাব অনাটন হয় তাদের নিত্যদিনের সাথী। দীর্ঘ সময় পর সেই করতোয়ার জেগে ওঠা বালু চরে এখন সবুজের সমারোহ। ক’বছর আগেও যেখানে কোন ফসলই হতো না, সেখানে এখন দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। বালুচরের জমিগুলো এখন আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে করতোয়ার তীরবর্তী গ্রামের চির অভাবী কৃষকদের। গম, ভুট্রা, গোল আলু, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, টমেটোসহ বিভিন্ন প্রকার রবি ফসলের চাষ করে পরিবারগুলোর অনেকেই স্বচ্ছলতা এনেছে। চর এলাকার গ্রাম কুয়াতপুরের বাসিন্দা আবদুল হাকিম, মমিনুল, হাসেম আলী, গিলাবাড়ীর জায়েদ আলী, মাটিয়ালপাড়ার সুরুজ আলী, কুমারপুরের আনিছার মোল্লা, ঘাঁষিপুরের নুর আলম খান, বোয়ালমারীর আবদুল জব্বার, জয়ন্তিপুরের মিয়াজান, শিমুলবাড়ি গ্রামের আফছার আলী, বাঁশপুকুরিয়ার কৃষক ফরহাদ হোসেন ও মহিবুল ইসলাম জানান-ক’বছর আগেও এই এলাকার মানুষের সংসারে অভাব-অনাটন ছিল নিত্য সঙ্গী। বর্তমানে সেই অবস্থা আর নেই। করতোয়া নদীর ধারে জেগে ওঠা বালুচরের জমিগুলোতে বন্যায় পলি জমে যাওয়ায় সেগুলো এখন কৃষি জমিতে পরিনত হয়েছে। রবি মওসুমে সেচের মাধ্যমে ওইসব জমিতে রবি ফসল চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেকেই।

বর্তমানে উল্লেখিত গ্রামগুলোর প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপুর্ন বেশ ক’টি রাস্তা পাকা হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনও হয়েছে। ফলে করতোয়ার তীরবর্তী পিছিয়ে থাকা গ্রামগুলো এখন আলোকিত। মানুষ তাদের সন্তানদের স্কুল কলেজ মুখী করছে। আরও কয়েকটি গুরুত্বপুর্ন রাস্তা পাকা করার দাবি জানিয়েছেন তারা। ওই এলাকার গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, এক সময়ের ধূ-ধূ বালুচরে এখন দৃষ্টি নন্দন সবুজের সমারোহ। কাঁচা মরিচ, টমেটো, গম, ভুট্রা, গোলআলু, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু বেগুনসহ নানা ধরনের রবি ফসলের চাষে ভরে গেছে। এসব জমিতে উঠতি ফসল দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। যে জমিতে একসময় কোন ফসল ফলতো না। সেই জমিতে একরের পর একর ভুট্রার চাষ হয়েছে। গত বছর ভুট্রার বাম্পার ফলন ও দাম ভাল পাওয়ায় চাষিরা এবার আরও বেশী জমিতে ভূট্টার আবাদ করেছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ভূট্টার বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষীরা। ঘাষিপুর গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট কৃষক ও চতরা ইউপির সদস্য নুর মোহাম্মদ গোল্লা বলেন-শুধু বালু আর বালুর কারণে করতোয়ার পাড়ে আমাদের প্রায় ৪/৫ একর জমিতে আগে কোন ফসল চাষ হতো না। বর্তমানে সেগুলোতে ভুট্টা, টমেটো, গোল আলু, মিষ্টি আলু, মরিচসহ নানা রবি শস্য চাষ হচ্ছে। প্রতি একরে প্রায় ১২০ মন ভুট্টা, ১২০ থেকে ১৩০ মন গোল আলু, প্রায় ১৩০ মন পর্যন্ত টমেটোর ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন-গোল আলুর জমিতে সাথী ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষ করে চর এলাকার কৃষকরা আর্থিক ভাবে অনেক লাভবান হচ্ছে। তিনি তার বসতবাড়ি দেখিয়ে দিয়ে বলেন, বাড়ী ভেঙ্গে যাওয়ায় সরিয়েছি ৫/৬ বার। এখন যেখানে বাড়ি দেখছেন এটিও আগামী দু’এক বছরের মধ্যে সরাতে হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃণিবীদ সাদেকুজ্জামান বলেন-এ বছর উপজেলায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে ভূট্টার আবাদ হয়েছে। ভুট্রা, মরিচ টমেটো ও মিষ্টি আলুর চাষ করতোয়ার চর এলাকায় তুলনামূলক বেশী। চিনা বাদাম ও মশুরের ডাল চাষও হচ্ছে। খাদ্যশষ্যের মতো অন্যান্য ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে কৃষকরা যাতে সফলতা অর্জন করতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। 

Place your advertisement here
Place your advertisement here