• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

দুধ খাওয়ার আগ্রহেই ওরা এখন স্কুলে যায়

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

রংপুরের কাউনিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের এক স্কুল খোর্দ্দ ভূতছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলের মোট শিক্ষার্থী ২০২ জন। স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় তাদের নানা রকম রোগ-বালাই যেমন লেগে থাকত। তেমনি অনাহার-অর্ধাহারের কারণে ঠিকমতো স্কুলেও ওরা আসত না। কিন্তু গত কয়েক মাসে এ চিত্র অনেকটা পালটে গেছে। স্কুলের মোট ২০২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে এখন প্রতিদিন গড়ে উপস্থিতি ১৮০ জন। যা শতাংশের হিসেবে ৮৯. ১০। আর আগে এই হার ছিল সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। কীভাবে পালটালো এই চিত্র?

খোর্দ্দ ভূতছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহানা বেগম বলেন, স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবার থেকে আসা। তারা ঠিকমতো খাবার পায় না। আগে স্কুলে বিস্কুট দেওয়া হতো। সেটা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে টিফিনে স্কুলের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ২০০ গ্রাম করে গরুর দুধ খাওয়ানো হয়। তিনি বলেন, প্যাকেটে পাইপ দিয়ে দুধ খাওয়ার আগ্রহেই স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার বেড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, তাদের শারীরিক গঠনেও অনেক পরিবর্তন এসেছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে রংপুরের এই স্কুলে গেলে কথা হয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী পূজা রানি রায়, সানজিদা, রিমন জানায়, প্রতিদিন তাদের স্কুলে সকাল ১১টার দিকে দুধ খেতে দেয়। এতে তাদের স্কুলে আসার আগ্রহ বেড়ে গেছে বলে জানায়। মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অপুষ্টির হাত থেকে শিশুদের রক্ষায় ও মেধাবী জাতি গঠনে সরকার প্রাথমিকভাবে দেশের ৬১ জেলার ৩০০ উপজেলার ৩০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সারা বছর বিনামূল্যে দুধ পান করানোর কর্মসূচি নিয়েছে। এক্ষেত্রে দেশের দুর্গম ও দরিদ্র অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে যেখানে শিক্ষার্থীরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে শিশুদের দুধ খাওয়ানোর এই কর্মসূচি চালু হওয়ার পর ৩০০ স্কুলের মধ্যে ইতিমধ্যে ২৯৩টি স্কুলে এই কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। সারা দেশে তাদের লক্ষ্য অনুযায়ী ৬৫ হাজার ৭৭৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৩ হাজার ৭২৫ জন শিক্ষার্থীকে দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। এরমধ্যে ৪৮ শতাংশ ছেলে শিশু শিক্ষার্থী ও ৫২ শতাংশ মেয়ে শিশু শিক্ষার্থী। দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি এসব শিশুদের উচ্চতা, ওজনসহ শারীরিক নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। কর্মসূচিটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে এটিকে টেকসই ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করবে সরকার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের স্কুল মিল্ক ফিডিং কর্মসূচির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন শিশুদের দুধ পানের আগ্রহ তৈরি হবে, তাদের স্বাস্থ্য ভালো হবে ও মেধার বিকাশ ঘটবে, তেমনি দেশের দুগ্ধখামারিরা ন্যায্যমূল্য পাবে। কারণ দেশের খামারিদের উৎপাদিত দুধই এসব শিশুদের খাওয়ানো হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার কিছু দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুলের শিশুদের গুঁড়াদুধ দেওয়া শুরু করে। ১৯৯৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলে খাদ্য কর্মসূচি চালু হয়। ২০০০ সালের পর থেকে এসবের বদলে ভিটামিনসমৃদ্ধ বিস্কুট দেওয়া হয়। ২০০২ সালে যশোরে বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর জন্য জরুরি সাহায্য হিসেবে বড় পরিসরে স্কুলে খাওয়ানো কর্মসূচি চালু হয়। ২০১০ সালে ডব্লিউএফপির সহায়তায় কর্মসূচিটি জাতীয় পর্যায়ে শুরু হয়ে চলে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানো হয়। তবে গত ১ জুলাই বন্ধ হয়ে যায় এ কার্যক্রম। এখন আবার স্কুলে শিক্ষার্থীদের দুধ খাওয়ানো কর্মসূচি চালু হলো।

Place your advertisement here
Place your advertisement here