• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

দিন বদলের স্বপ্নে ওমানে পাড়ি দিয়ে নিঃস্ব ১০ পরিবার

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ অক্টোবর ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

রংপুরের গঙ্গাচড়া থেকে উচ্চ বেতনে চাকরির আশায় ওমানে পাড়ি দিয়েছিলেন ১০ যুবক। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাদের দিন বদলের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়। ‘ফ্রি ভিসায়’ মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে এসব যুবক ও তাদের পরিবার এখন নিঃস্ব। এক বছরেও কোনো চাকরির ব্যবস্থা না হওয়ায় তাদের মধ্যে ছয়জন দেশে ফিরে এসেছেন।  

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় ওমান প্রবাসী রবিউল ইসলামের প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে তাদের এ পরিণতি। রবিউল ইসলাম থাকতেন ওমানে। সেখানে মুদিদোকানের ব্যবসা করতেন। নিজ গ্রামের বেকার যুবকদের ওমানে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখান তিনি। ১০ জনকে ওমানে নিয়েও যান। এর বিনিময়ে হাতিয়ে নেন অর্ধকোটি টাকা। তবে তার মাধ্যমে যাওয়া যুবকেরা ওমানে গিয়ে কাজ পাননি। 

এক বছর বেকার থেকে বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে ওমান ছেড়ে দেশে ফিরে এসেছেন তাদের কয়েকজন। ফিরে আসা তিনজন ইতোমধ্যে রবিউলের নামে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তবে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবিউল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ওমানে থাকার কারণে তার প্রতি গ্রামের সহজ-সরল মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মে। তার প্রলোভনে পড়েন গ্রামের বেকার ও অশিক্ষিত যুবকেরা। কোনো রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই শুধু রবিউলের সাজানো সিন্ডিকেটে আর উচ্চ বেতনে চাকরির আশ্বাসে লেবু মিয়া, মোশারফ হোসেন, দুদু মিয়া, আলম মিয়া, ফারজাহান আলী, জিল্লুর রহমান, পিউর মিয়া, মোকাররম হোসেন, নাজমুল ইসলাম ও  মিঠু মিয়া ওমানে পাড়ি দেন। তাদের মধ্যে ছয়জন হতাশ হয়ে এখন দেশে ফিরে এসেছেন। চারজন এখনো আসেনি। 

১৯ সেপ্টেম্বর গঙ্গাচড়া মডেল থানায় পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ করেন লেবু মিয়া, দুদু মিয়া ও মোশারফ হোসেন। এতে রবিউল ইসলাম (৩৮) ছাড়াও সহযোগিতা হিসেবে তার ভাই শফিকুল ইসলাম (৪৫), রফিকুল ইসলাম (৪২) ও ভগ্নিপতি হামিদুল ইসলামের (৪৫) নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রবিউলের বাড়ি উপজেলার আলমবিদিতর চৌধুরীপাড়া গ্রামে। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে ওমানে একটি ছোট্ট মুদি দোকানের ব্যবসা করেন। সেই সুবাদে তার গ্রামের কিছু বেকার যুবককে ওমানের বেসরকারি কোম্পানিতে বাংলাদেশি ৭০ হাজার টাকা মাসিক বেতনে কাজ দেওয়ার লোভ দেখান। 

এক বছর আগে তাদের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেন রবিউল। তাদের ‘ফ্রি ভিসায়’ ওই দেশে পাঠানো হয়। সেখানে যাওয়ার পর ওই যুবকদের কোনো কোম্পানিতে কাজ দেওয়া হয়নি। কাজ দেওয়ার কথা বলে কালক্ষেপণ করতে থাকেন রবিউল।

এভাবে তারা প্রায় এক বছর বেকার ছিলেন। একপর্যায়ে তারা কাজের জন্য চাপ দিলে মুদিদোকানটি গোপনে বিক্রি করে তিন মাস আগে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন রবিউল। বিষয়টি জানতে পেরে ভুক্তভোগীরাও সম্প্রতি বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। এরপর তারা রবিউলের কাছে টাকা ফেরত চাইলে পাল্টা রবিউলই ওই তিনজনের বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ এনে থানায় অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে ওমান ফেরত লেবু মিয়া বলেন, রবিউল আমার কাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে। শুধু আমার সঙ্গেই এমন করে নাই, প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জনের সঙ্গে এ রকম করেছে। রবিউলের ফাঁদে পড়ে আজকে আমি সর্বস্বান্ত।

পাশের এলাকার দুদু মিয়া বলেন, ওমানে এমন দিন গেছে, আমরা সেখানে শুধু লবণ দিয়ে এক বেলা ভাত খেয়েছি। যখন আমরা দেখতেছি আর পারছি না তখন আমরা বাধ্য হয়ে বাড়িতে ফোন করি। বাড়ি থেকে ঋণ করে টাকা নিয়ে ফেরত এসেছি। বাড়িতে এখন লোকজন ঋণের টাকার জন্য চাপ দেয়।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে রবিউলের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে রবিউলের ভাই শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই তাদের ফ্রি ভিসায় বিদেশে নিয়ে গিয়ে কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এখন তাদের মাঝে যে কি হলো আমি জানি না। কেন তারা সেখান থেকে চলে এসেছে তাও জানি না।

তার ভাই কোথায় সে বিষয় জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, আমাদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। তবে শুনেছি বাংলাদেশে আসার পর আবার নাকি ওমানে চলে গেছে। রবিউল ইসলামের পরিবারের অন্য সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। 

এদিকে ওই ১০ যুবকের বিদেশ পাড়ির ব্যাপারে জানতে চাইলে রংপুর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক আমেনা পারভীন বলেন, আমাদের কাছে এরকম কোনো অভিযোগ নেই। তবে থানায় অভিযোগ করেছে বলে জেনেছি। 

গঙ্গাচড়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল হোসেন বলেন, আমি পুরো ঘটনাটা শুনেছি। তবে অভিযোগকারীদের কাছে কোনো প্রমাণাদি নেই। এজন্য তাদের আদালতে মামলা করতে বলেছি। থানায় অভিযোগ করলে কিছুই হবে না।

Place your advertisement here
Place your advertisement here