• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

জাতীয় সরকারের দাবি তুলতে হবে। একটি বিরোধী দলও বাদ থাকা যাবে না। সবগুলো এক হতে হবে। খালেদার মুক্তি চাওয়া কোনো আন্দোলন নয়। আন্দোলন হতে পারে তার যেন সুবিচার হয়। রাষ্ট্র ক্ষমতা শেখ হাসিনার হাত থেকে খালেদা জিয়ার হাতে গেলে জনগণের কি লাভ ? লাভের মধ্যে এটুকু হবে, তার ছেলে দেশে ফিরবে। আমাদের কি লাভ? বিদ্যুৎতের দাম কি কমবে? ওষুধের দাম কি কমবে? সুশাসন ছাড়া কোনো দেশে গণতন্ত্র হয় না। সুশাসন ছাড়া গণতন্ত্র হলো স্বৈরতন্ত্রের মতো। সুষ্ঠু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবার আগে দরকার স্বাধীন বিচার বিভাগ। যেখানে বিচারপতিরা বিবেক দ্বারা পরিচালিত হবেন। হতে হবে সৎ ও সজ্জন। সরকারের নিয়মে থাক বা না থাক, তাদের প্রত্যেকে পরিবারের হিসেব দিতে হবে। তাহলে গণতন্ত্র কেন্দ্রবিন্দু থেকে ছড়াবে চারদিকে। সরকারও বাধ্য হবে সীমারেখায় আসতে। খোলামেলা আলাপে এমন অনেক কথাই বললেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। স্বাধীনাতার পর থেকে দেশের রাজনীতির অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষীও তিনি। ২৭ ডিসেম্বর ১৯৪১ সালে চট্টগ্রামের রাউজানের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার পরিবারে জন্ম তার।

ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন জাফরুল্লাহ। ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৬৭ সালে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। এফআরসিএস পড়াকালীন স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে চূড়ান্ত পর্ব শেষ না-করে লন্ডন থেকে ভারতে আসেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে নিতে আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এরপর ডা. এম এ মবিনের সঙ্গে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট “বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল” প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। তখন স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য জ্ঞান দান করেন তিনি। যা দিয়ে তারা রোগীদের সেবা করতেন এবং তার এই অভূতপূর্ব সেবা পদ্ধতি পরে বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল পেপার “ল্যানসেট”-এ প্রকাশিত হয়।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ১৯৮৫ সালে ফিলিপাইন থেকে রেমন ম্যাগসাইসাই এবং ১৯৯২ সালে সুইডেন থেকে বিকল্প নোবেল হিসেবে পরিচিত রাইট লাভলিহুড পুরস্কার লাভ করেন। ২০০২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাকলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো’ এবং মানবতার সেবার জন্য কানাডা থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ।

এক সময়ের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বর্তমানে ডান ঘরোনা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথনে উঠে আসে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা, বিএনপির বর্তমান অবস্থা ও ব্যক্তি জীবনের জানা-অজানা অনেক তথ্য।

প্রতিবেদক: বর্তমান দেশের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন?

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী: সুশাসন ছাড়া কোনো দেশে গণতন্ত্র হয় না। সুশাসন ছাড়া গণতন্ত্র স্বৈরতন্ত্রের মতো। দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবার আগে দরকার স্বাধীন বিচার বিভাগ। যেখানে বিচারপতিরা বিবেকের দ্বারা পরিচালিত হবেন। তাদেরকে সৎ ও সজ্জন হতে হবে। সরকারের নিয়মে থাক বা না থাক, তাদের প্রত্যেকের পরিবারের হিসেব দেয়া উচিত। ইমকাম ট্যাক্স হওয়া উচিত সবার জন্য।

চিকিৎসাখাতে অব্যবস্থাপনায় সরকার দায়ী। প্রধানমন্ত্রী কয়েকবার বলেছেন ডাক্তারদের উদ্দেশ্য করে যে, তারা যদি উপজেলা লেভেলে না যান তাহলে চাকরি ছেড়ে দেন। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। বড় বড় হাসপাতাল গুলো ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ৫ কোটি টাকা লাভ করুক। সেখানে কারো কোনো আপত্তি থাকবে না। কিন্তু সেটা না করে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ১০০ কোটি টাকা লাভ করছে। আপত্তিটা এ জায়গায়।

বর্তমানে আইসিইউ চিকিৎসা একটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। বাংলাদেশে আইসিইউ তে রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি যেভাবে দেয়া হয়, পৃথিবীর কোথাও নেই এ নিয়ম। আইসিইউতে থাকে সবচেয়ে সিরিয়াস রোগী। এখানে ডাক্তার প্রয়োজনে বার বার আসতেই পারেন, সেখানে প্রতিবারের জন্য আলাদা ফি লাগবে কেন? ধরুন, চা খেলে চায়ের জন্য যে চিনি লাগবে তার জন্য কি আলাদা বিল লাগবে? চা নারার জন্য চামুচ ব্যবহার করলে, তার জন্য আলাদা বিল দিতে হবে?

বিসিএস পরীক্ষায় সংস্কার দরকার মন্তব্য করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ২০০ নম্বর ভাইভার কোনো দরকার নেই। ১০০ নম্বরই যথেষ্ঠ। ২০০ নম্বর দেয়ার অর্থই হল এখানে স্বজনপ্রীতি হওয়ার সুযোগ থাকে।

আবার দেশে ডাক্তার সঙ্কট। ডাক্তার হতে গেলে জিপিএ-৫ পেতে হবে কেন? পৃথিবীতে বহু ডাক্তার আছেন সেকেন্ড ডিভিশনে পাস করা। আমাদের সময়ে যারা থার্ড ডিভিশন নিয়ে পাস করেছে, তাদের মধ্যে অনেকে বিলেতে সিনিয়র কনসালটেন্ড হিসেবে কর্মরত আছেন। তারা ডাক্তারি পড়তে সুযোগ পেয়েছে বলেই তো হয়েছে। এখন আমাদের দেশে সেকেন্ড ডিভিশন হলেই, তাকে পরীক্ষা দিতে দেয়া হয় না। তাকে ভর্তি করাতে হবে, তা বলছি না। তাকে সুযোগটা দিতে হবে। আবার পরীক্ষাটা কিসের উপর নেয়া হচ্ছে? ফিজিক্স, ক্যামেস্ট এসব তো পাস করেই এসেছে। আবার কেন এসব। পরীক্ষা হবে সে মানুষকে ভালোবাসে কি না, তার মন মানুসিকতা আছে কিনা, বাংলাদেশকে চিনে কি না?, বাংলাদেশের গাছ পালা পশু পাখী চিনে কি না। সে গ্রামে যাবে কি না, থাকবে কি না?

যে জীবনে কমড ছাড়া কখনো বাথরুমে যায়নি, তাকে বলা হচ্ছে গ্রামে যাও। এখন এটা করা উচিত যে, গ্রামে ২ বছর কাজ করা ছাড়া কোনো নবীন ডাক্তার পোস্ট গ্রাজুয়েশন পাবেন না।

ডাক্তারের ফি তে আপত্তি নেই। আপত্তিটা হলো সে রোগীর কাছ থেকে নেয় এক হাজার টাকা। আবার ডায়াগনস্টিক থেকেও নেয়, অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা লিখে দেয়, অপ্রয়োজনীয় ঔষুধ লেখে এগুলো হলো অন্যায় কাজ। ফি টা অন্যায় নয়। এসব নৈরাজ্য রুখতে সংস্কার দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রতিবেদক: চলমান রাজনৈতিক সংকটে বিএনপির ভূমিকা কি?

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী: বিরোধী দল বিএনপি থেকে শুরু করে কামাল হোসেন পর্যন্ত এদের অধিকাংশেরই বক্তব্য পরিস্কার নয়। তাদের বক্তব্য অস্পষ্ট।

বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। এটা কোনো আন্দোলন হতে পারে না। আন্দোলন হবে খালেদা জিয়ার যেন সুবিচার পায়।

খালেদা জিয়ার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। তিনি (খালেদা জিয়া) যে টাকা চুরি করেননি, সেই টাকা চুরির দায়ে তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। বিএনপির উচিত ছিল তার সুবিচার চাওয়া। মুক্তি চাইবে কেন? সুবিচার পেলেই তো মুক্ত হয়ে যাবেন।

কুমিল্লার আদালত খালেদাকে জেল দেয়নি। আখতারুজ্জামান তাকে জেল দিয়েছেন। তিনি উপরের নির্দেশ পেয়ে রায় লিখেছেন। তার প্রমাণ হল তিনি বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছেন। তারই বলা উচিত ছিল আপনারা সকাল ৮ টার মধ্যে উপস্থিত থাকবেন। রায়ের কপিটা রেডি রাখা উচিত ছিল। যাতে রায় পড়ার পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা যেন উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। এটা হল একটা স্বেচ্ছাচারিতা, হয়রানি। আক্তারুজ্জামানকে তো জবাব দিতে হবে, উনি কোথাকার ডক্টরেট। তিনি ‘ল’ ডক্টরেট না বাংলার ডক্টরেট। কিসের আশায় বসে আছেন ড.আক্তারুজ্জামান?

বিচার বিভাগ মন্ত্রণালয়ের অধীন না হয়ে, স্বাধীন হয়ে এ রায় দিলে তাকে খালাস দিতেন। খালেদা জিয়াকে ৩ মাস জেলে থাকতে হতো না।

তাদের (বিএনপির) আন্দোলনে আমি যাব কেন? আমার কি লাভ হবে? রাষ্ট্র ক্ষমতা শেখ হাসিনার হাত থেকে খালেদা জিয়ার হাতে আসলে জনগণের কি লাভ হবে? লাভের মধ্যে এটুকু হবে তার ছেলে দেশে ফিরতে পারবে। আমার কি লাভ হবে? বিদ্যুৎতের দাম কি কমবে? আজকে ওষুধের দাম কি কমবে?

এক সময় স্কয়ারের বিক্রি ছিল বছরে ৩৪ লাখ টাকা। একটা ভালো নীতির কারণে (১৯৮২ সালে) হাজার কোটি টাকা আয় আসে প্রতিমাসে। তার মানে নিয়ন্ত্রিত ২০ শতাংশ লাভের মাধ্যমেই এতো লাভ হয়। আর এরা তো এখন ডাকাতি করছে। বিএনপি তো একবারও বলছে না, ক্ষমতায় গেলে ঔষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করবে। বিদ্যুৎতের দাম কমাবে। কুইকরেন্টাল বন্দ করে দেবে।

আর আমাদের এখনে ব্যবসায়ী, দয়া করতে আসেনি, পীর ফকির না (এস আলম) এতো লাভ করছে সম্প্রতিকালে ইসলামী ব্যাংক কিনে ফেলেছে। তার রেট হলে সাড়ে ৬ টাকা। বাংলাদেশি কোম্পানির রেট হল সাড়ে ৬ টাকা। আর এটা যদি সরকারি উদ্যোগে করা হয় তার রেট হবে সারে ৪ টাকা থেকে ৫ টাকা। তাহলে এবার বোঝ কে কত লাভ করছে। এর ফলে আগামী ২৫ বছরে দেশের ক্ষতি হবে ৭০ হাজার কোটি টাকা।

প্রতিবেদক: খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন নিয়ে বিএনপির ভূমিকা কি?

ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী: সরকার কৌশল করছে ওনাকে নির্জন রেখে মানসিক ভাবে দূর্বল করছে। যেখানে দশ হাজার লোক থাকত। সেখানে এখন একলা থাকে। ভূতের বাড়ির গল্পের মত। ৯ টার সময় বাতি নিভিয়ে ফেলা হয়। আগে ওনি ২ টার সময় ঘুমাতেন।

বিএনপিকে সরকারের কৌশলটা বুঝতে হবে। কিন্তু বিএনপি তা না করে, তাকে বিদেশ পাঠানো যেন হয়, সেই আন্দোলন করছে। আরে বোকা মানুষ, আন্দোলন কর যেন তাকে কালকেই পিজি হাসপাতালে বদলি করে নিয়ে আসে। পিজিতে রেখে চিকিৎসা কর। তারপর লাগলে যাবে বিদেশে। সুতরাং এটাও বিএনপির একটা ভুল অস্পষ্ট আন্দোলন। এটা কেমন শোনায় বিদেশ পাঠানোর জন্য আন্দোলন করছে। কে আসবে তাদের আন্দোলনে?

প্রতিবেদক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মীনি ডা. জোবায়দা রহমানের রাজনীতিতে আসার গুঞ্জুণ চলছে, বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী: বিএনপির সিনিয়র নেতারা কি তাহলে এত অপারক? লজ্জাও নেই তাদের। তারা কেন দায়িত্ব নিতে পারছেন না। তাদের স্বরম লাগে না। মোশাররফ, মওদুদ, মঈন খান, নজরুল ইসলাম খানের মত লোক দায়িত্ব নিতে পারছেন না?

তারেক রহমান ভবিষ্যতে ভালো একজন নেতা হবে তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু তিনি লন্ডনে বসে ডিজিটাল নেতৃত্ব দিলে হবে না। আজকে তাদের বলা উচিৎ ইমারজেন্সি একটা কাউন্সিল ডাকতে হবে। সবাই বসে যৌথ নেতৃত্বের জন্য পরামর্শ করতে হবে।

প্রতিবেদক: দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের পথ কি? তা কি সাংবিধানিকভাবে সম্ভব?

জাফরুল্লাহ চৌধুরী: সব বিরোধী দলকে এক হয়ে বলতে হবে, আগামী সরকার হবে একটা জাতীয় সরকার। আমার ছেলের সঙ্গে আপনার মেয়ের বিয়ে দেব, তাতে সংবিধানের কি আসে যায়। আপনাকে আমার বাড়িতে দাওয়াত খাওয়াব, সেখানে সংবিধানের কি আছে? সংবিধানে জজ সাহেবদের ঘুষ খাওয়ার কথা লেখা আছে কি? সরকারি কর্মকর্তাদের কাজ না করার কথা বলা আছে? প্রধানমন্ত্রী প্রতিজন ডেপুটি সেক্রেটারিকে যে ৩০ লাখ টাকা করে গাড়ি কেনার জন্য এবং প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা দিচ্ছেন গাড়ির খরচ বাবদ, তা কোনো সংবিধানে লেখা আছে? এটাও তো বৈষম্য জনিত আচরণ। কেন শুধু এক শ্রেণির লোকেরা তা পাবে এটা।

Place your advertisement here
Place your advertisement here