• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

বঙ্গবন্ধু কন্যার সংগ্রামী-জীবন তুলে ধরার চেষ্টা করেছি!

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

 ‘১৯৮৪ সাল থেকে ২০১৩ সালে তোলা ১ বস্তা সাদা-কালো আর রঙিন রিলের ভেতর থেকে ২৪৮টি ছবি বাছাই করতে লেগেছে ১ বছর। তারপর সেই ছবিগুলো দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার সংগ্রামী-জীবনের গল্প বলার চেষ্টা করেছি।’

এভাবেই অনুভূতি জানান ‘চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা-একটি অপ্রকাশিত ইতিহাস’ ফটো অ্যালবামের স্রষ্টা খ্যাতিমান আলোকচিত্রী দেবপ্রসাদ দাস দেবু। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ১ হাজার টাকা দামের অ্যালবামটি প্রকাশ করেছেন।

দেবপ্রসাদ দাস দেবু বলেন, ২৯ বছরে তোলা জননেত্রী শেখ হাসিনার ছবিগুলোর মধ্যে কিছু হচ্ছে দুর্লভ। কারণ সেগুলো শুধু আমার তোলা। একেকটি ছবিতে মূর্ত হয়েছে হাজার শব্দের ইতিহাস। ছবির নেপথ্যেও রয়েছে অজানা অনেক গল্প। পদে পদে ছিল ঝুঁকি।

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনার জনসভাকে ঘিরে গণহত্যা চালানো হয়। সেদিন একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির আড়ালে গিয়ে প্রাণে বেঁচে যাই। সেই ঘটনার কথা মনে পড়লে এখনো শরীরের রোম খাড়া হয়ে যায়। বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল। কিন্তু মনোবল হারাইনি। একে একে গুলিবর্ষণের অনেক ছবি তুলেছিলাম। পুলিশ কিছু মরদেহ লুকিয়ে রেখেছিল চট্টগ্রাম মেডিকেলের একটি বাথরুমে। দুইটি ছবি তুলেছিলাম পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে। পাইপ বেয়ে সরে পড়েছিলাম সেবার।

ছবি তোলা, সংরক্ষণ ও মুদ্রণে অনেক চ্যালেঞ্জ পেরোতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিজিটাল ক্যামেরা সহজলভ্য হওয়ার পর থেকে আদি সাদা-কালো ছবির কবর রচিত হয়েছে। কয়েক যুগ আগের নেগেটিভ থেকে ছবি বের করাটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। প্রথম দিকে ঢাকায় গিয়ে একটি স্টুডিওতে কিছু ছবি করেছিলাম প্রতিটি ৬০০ টাকায়। থাকা, খাওয়া, গাড়ি ভাড়া, ছবির দাম সব চিন্তা করে এক বন্ধুর পরামর্শে নিজে চীন থেকে আনিয়ে নিলাম ৪৫ হাজার টাকা দামের একটি মেশিন। যা দিয়ে ঘরে বসে নেগেটিভ থেকে ছবি বের করেছি।

‘১৯৮৪ সালে লালদীঘির মাঠে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চেয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় কত লোক হয়েছিল সেই হিসাব নেই। তখন লালদীঘির পাড়ে মসজিদ ছিল না। এখনকার চেয়ে অনেক বেশি মানুষের ঠাঁই হতো মাঠে। এত মানুষ হবে সরকার দূরে থাক দলের নেতা-কর্মীরাও ধারণা করেননি। শুধু এটি মনে আছে, লালদীঘির কোণা থেকে বেলা দুইটা থেকে ভিড় ঠেলে মঞ্চের কাছাকাছি যেতে সময় লেগেছে দুই ঘণ্টার বেশি।’ যোগ করেন তিনি।

১৯৮৫ সালে উড়িরচরে ঘূর্ণিঝড়ে ১০ হাজার মানুষ মারা যায়। তাদের স্বজনদের শান্ত্বনা ও ত্রাণসামগ্রী দিতে যান শেখ হাসিনা। সেই ছবি স্থান পেয়েছে অ্যালবামে। যাতে একজন মমতাময়ী মা’কে দেখা যাবে।

১৯৯১ সালের সংখ্যালঘু নির্যাতন, জামায়াত-শিবিরের হত্যার রাজনীতি, ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়, ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মেয়ে ও ১৯৯৫ সালে আতাউর রহমান খান কায়সারের বিয়েতে শেখ হাসিনার কিছু ছবি স্থান পেয়েছে অ্যালবামে।

রয়েছে ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের জনসভায় শেখ হাসিনার বক্তৃতা, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ বেতারের রাঙামাটি আঞ্চলিক কেন্দ্রের উদ্বোধন, ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি, ২০০১ সালে জামালখানে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনার ছুটে আসা, ২০০৬ সালে কর্ণফুলী নদীতে ঝুলন্ত সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলনের দাবিতে লালদীঘির জনসভায় ভাষণ, ২০১০ সালে নতুন ব্রিজ উদ্বোধন, ২০১৩ সালে ফটিকছড়ির ভয়াবহ ভুজপুর ট্র্যাজেডির ছবি।

আবেগাপ্লুত কণ্ঠে দেবপ্রসাদ দাস দেবু বলেন, ১৯৮৮ সালে গণহত্যার সময় তোলা আমার ছবি বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপানো হয়। ওই দিন দৌড়ঝাঁপের মধ্যে আমি উপোস ছিলাম। সেই পরিশ্রম সার্থক হয়। ‘বাংলার বাণী’তে প্রথম পৃষ্ঠায় আট কলামে ছাপানো হয়েছিল।

১৯৬৯ সাল থেকে ছবি তুলছেন দেবপ্রসাদ দাস দেবু। ১৯৭৩ সালে শুরু করেন আলোকচিত্র সাংবাদিকতা। ওই বছরই বঙ্গবন্ধুর ছবি তোলার সুযোগ পান তিনি। সেবার বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মাঠে হেলিকপ্টারে নেমেছিলেন। ভাষণ দেন পলোগ্রাউন্ডের মাঠে।

অ্যালবামে শেখ হাসিনার পাশাপাশি রয়েছে চট্টগ্রামের আন্দোলন-সংগ্রামের শীর্ষে থাকা অনেক প্রয়াত নেতার ছবিও। এর মধ্যে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, আতাউর রহমান খান কায়সার, চট্টলবীর খ্যাত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, এমএ মান্নান, ইসহাক মিয়া, পুলিন দে’সহ অনেকে রয়েছেন।

বইটির ভূমিকায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন লিখেছেন, আলোকচিত্র সংকলনটি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রায় তিন দশক ধরে জন অধিকার সংগ্রামের ইতিহাস-মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা প্রদানের সংগ্রামের ইতিহাস।… অধিকার সংগ্রামের বহ্নিশিখা শেখ হাসিনা; শেখ হাসিনাকে নিয়ে এরকম আলোকচিত্রের গ্রন্থ হয়তো আরো হাজারটা করা যেতে পারে। কিন্তু এখনো তা কেউ করেননি। করাটা দরকার ইতিহাসের স্বার্থে। দেবু এই কাজটি করে আমাদের ধন্যবাদর্হ হয়ে রইলেন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here