• শনিবার ১১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৮ ১৪৩১

  • || ০২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

Find us in facebook

সেই অসুস্থ তিন ভাইয়ের বাড়িতে হাজির রংপুর জেলা প্রশাসন

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ মে ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

রংপুরে বিরল রোগে আক্রান্ত একই পরিবারের অসুস্থ তিন ভাইয়ের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে রংপুুুর জেলা প্রশাসন। ওই পরিবারটির তিন প্রজন্মের ৬ জন প্যারালাইসিস জাতীয় এক ধরনের অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান।

শনিবার (১ মে) বিকেলে রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ আমতলা সংলগ্ন ট্যাকসোর দিঘী গ্রামে গিয়ে জেলা প্রশাসকের পক্ষে অসহায় ওই পরিবারকে নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা।

এ সময় অসুস্থ নাসির, রফিক ও বশিরের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নেন। জেলা প্রশাসন থেকে অসহায় এ পরিবারটিকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়।

এ বিষয়ে মাহমুদ হাসান বলেন, গত ২০ এপ্রিল ঢাকা পোস্টে একই রোগে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তিন ভাই শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি জেলা প্রশাসক স্যারের নজরে আসে। তিনি ওই পরিবারের অসুস্থ নাসির, রফিক ও বশিরকে নগদ ২০ হাজার টাকা ছাড়াও খাদ্য সহায়তা পাঠিয়েছে। শনিবার বিকেলে তার (ডিসি) পক্ষে অনুদানের অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমতলা ট্যাকসোর দিঘী গ্রামের মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে নাসির হোসেন (৪৪), রফিকুল ইসলাম (৪২) ও বশির আহমেদ (৪০)। দেলোয়ার হোসেন ১৯৯০ সালে প্রথম এক ধরনের প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হন। এ রোগের কারণে একজন ব্যক্তি নিজেকে স্থির রাখতে পারেন না। সারাক্ষণ কাঁপতে থাকেন। 

দেলোয়ার হোসেন দীর্ঘ পাঁচ বছর ওই রোগ আক্রান্ত থাকার পর ১৯৯৫ সালে মারা যান। দেলোয়ারের মৃত্যুর পর তার আরেক ভাই নূর ইসলামও একই রোগে আক্রান্ত হন। বিভিন্নভাবে চিকিৎসা করান। কিন্তু তাকেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। একইভাবে নূর ইসলামের ছেলে জামাল হোসেন, মেয়ে রেহেনা ও নাজমা বেগমও প্যারালাইসিস জাতীয় ওই একই রোগে আক্রান্ত হন। দীর্ঘদিন রোগাক্রান্ত থাকার পর একে একে তাদের সবাই মারা যান।

বর্তমানে দেলোয়ার হোসেনের তিন ছেলে নাসির, রফিক ও বশির এবং মেয়ে রোকসানা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বৈবাহিক কারণে রোকসানা শ্বশুর বাড়িতে রয়েছেন। তবে আক্রান্ত তিন ভাই একই বাড়িতে অবস্থান করছেন। বড় ভাই জাকির হোসেন তিনজনকে দেখাশোনা করছেন।

ঘাতক এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর রফিক ও বশিরের সংসারে আন্ধকার নেমে এসেছে। তাদের দূরারোগ্য ব্যধিতে পাশে না থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন স্ত্রী-সন্তানরা। রফিক ও বশিরের স্ত্রী এবং দুই সন্তান বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। আজও তারা ফিরে আসেননি। বাধ্য হয়েই অসুস্থ ভাইদের নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন তাদের বড় ভাই জাকির হোসেন। বর্তমানে জাকিরের বাড়িতেই রয়েছেন তিন ভাই।

জাকির হোসেন জানান, তিন ভাইয়ের রোগের চিকিৎসার জন্য তিনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসক বলেছেন এ রোগের চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার সুযোগ কম। চিকিৎসা ব্যয়ও অনেক। তাদের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না।

বর্তমানে জাকির তার তিন ভাইকে নিয়ে মানসিক ও আর্থিকসহ বিভিন্ন সংকটে চরম দুঃশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন। তাদের পৈত্রিক খড়ের বাড়ি ছাড়া অন্য কোনো জমিজমাও নেই, যা বিক্রি করে ভাইদের চিকিৎসা করাবেন। দিনমজুরি করে কোনো রকমে ভাইদের দেখাশুনা করছেন তিনি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here