• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

একজন পুঁজিবাজারবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

করোনা ভাইরাস আতঙ্কে যখন বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাজার ধসে কোনো প্রণোদনাই কাজ করছে না, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও ক্রমাগত দরপতন হচ্ছে, বাজারে শেয়ারের দাম ফ্রি-ফল হচ্ছে, লাখো বিনিয়োগকারী দিশাহারা তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একটি সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারে দরপতন ঠেকাতে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে।

বাজারে শেয়ারের দাম ফ্রি-ফল বন্ধ হয়েছে এবং লাখো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী স্বস্তিতে আছেন। তা হলো শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস ঠিক করে দেওয়া, অর্থাৎ একটি শেয়ারের দাম নির্দিষ্ট দামের নিচে নামতে পারবে না। আপনার এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত যুগোপযোগী এবং সঠিক। পুঁজিবাজারে যখনই কোনো বড় ধরনের সংকট হয়েছে, তখনই আমরা দেখতে পাই আপনি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে দাঁড়িয়ে এমন একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যা প্রথমে সবাই সমালোচনা করলেও পরে স্বীকার করে আপনার সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। যেমনÑ গত বাজেটে প্রত্যেক লিস্টেড কোম্পানিকে তার রিটেইনড আর্নিংস ও রিজার্ভ থেকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে আইনের মাধ্যমে বাধ্য করেছেন। আপনি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন, ম্যাক্সিমাম লিস্টেড কোম্পানি, বিশেষ করে ব্যাংকের স্পন্সর পরিচালকরা নিজেদের স্বার্থে এ প্রস্তাবটির চরম বিরোধিতা করেছিলেন। কারণ ওইসব পরিচালক সব সময়ই বোনাস শেয়ার দিতে পছন্দ করেন। তাদের নিজেদের স্বার্থে এতে তারা নিজেরা লাভবান হন এবং বিনিয়োগকারী সব সময় ক্ষতিগ্রস্ত হন। আপনি ব্যাংক পরিচালকদের বলেছিলেন, শুধু আপনাদের স্বার্থ দেখলে আমার হবে না, লাখো বিনিয়োগকারীর স্বার্থ দেখতে হবে। আপনার সিদ্ধান্তের সুফল পেতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। এ পর্যন্ত যে কয়টি ব্যাংক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, তাদের সবাই ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। আপনার প্রতি লাখো বিনিয়োগকারী কৃতজ্ঞ।

গত ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি শেয়ারবাজারে আস্থা এবং তারল্য সংকটের কারণে যখন বাজারে শেয়ার প্রাইস ফ্রি-ফল হচ্ছিল, বাজার তখন ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছিল। এ সময় আপনি বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৬ জানুয়ারি সকালে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে নিয়ে পুঁজিবাজারে ফ্রি-ফল ঠেকানোর জন্য তৎক্ষণাৎ করণীয় কয়েকটি সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। তাও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে। যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানÑ যারা পুঁজিবাজারের স্বার্থে জড়িত আছেন, তাদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ২০০ কোটি টাকা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে অত্যন্ত সহজ শর্তে মাত্র ৫ শতাংশ সুদে পাঁচ বছরের জন্য ভালো ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে, এই শর্তে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো লস হলেও ওই প্রতিষ্ঠানকে কোনো মন্দ ঋণসঞ্চিতি করতে হবে না। এটি ছিল অত্যন্ত একটি সঠিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের জন্য। তা এর আগে আর কখনো হয়নি। অনেক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এ সিদ্ধান্তটির সমালোচনা করেছেন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এই টাকা নেওয়া ও বিনিয়োগ করার ব্যাপারে তখন কোনো গুরুত্ব দেননি। এটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর তারল্য সংকট নিরসনে আপনার একটি সঠিক সিদ্ধান্ত। এটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে সুযোগ করে দিয়েছে। এটিই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় ছিল। এর পর করোনা ভাইরাস আতঙ্কে যখন ক্রমাগত শেয়ার বিক্রির চাপ, বিদেশি পোর্টফোলিওতে শেয়ার বিক্রির চাপ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মার্জিন রুল মেনে বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্টে ফোর্স সেল, সব মিলিয়ে লাখো বিনিয়োগকারী যখন দিশাহারা, তখন ১৮ মার্চ অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে আপনার দেওয়া পুঁজিবাজারসংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীকে উজ্জীবিত করেছে, ফ্রি-ফল বন্ধ হয়েছে। যাদের ২০০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে তারা বিনিয়োগ শুরু করেছে। ব্যাংকগুলো ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেওয়া এবং ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবল হতে শুরু করেছে। আমরা যারা পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িত আছি, লিস্টেড কোম্পানির পরিচালকরা, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারেজ-ডিলার, মার্চেন্ট ব্যাংক যদি সবাই সঠিক সময় সঠিক ভূমিকা পালন করে, তা হলে একটি স্ট্রং ও স্ট্যাবল পুঁজিবাজার গড়ে উঠবে। এতে উপকৃত হবে সৎ উদ্যোক্তা, যারা তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য পুঁজিবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করে এগিয়ে যেতে পারবে। ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নয়, এতে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ হ্রাস পাবে। দেশ ও অর্থনীতি উপকৃত হবে। অর্থমন্ত্রী সরকারপ্রধানকে পুঁজিবাজারের ক্রাইসিস মুহূর্তে আপনার প্রাগম্যাটিক সুপারিশ দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ব্যাংকব্যবস্থা ভালো থাকলে পুঁজিবাজার ভালো থাকবে। ব্যাংকের সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। ব্যাংক পরিচালনা পরিষদ থেকে ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে হবে। দক্ষ ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে হবে। দক্ষ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা টিম গড়ে তুলতে হবে। লোন দেওয়ার ব্যাপারে পরিচালকদের হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। লিস্টেড কোম্পানি, বিশেষ করে ব্যাংকের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ স্বতন্ত্র পরিচালকের দায়িত্ব হচ্ছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা। কোনো লিস্টেড কোম্পানি ও এর পরিচালকদের ইচ্ছাই যেন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া না হয়। বর্তমানে আমরা যেটি দেখতে পাই, তা হলো বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালক ওই প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর পরিচালকদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাই নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। এতে ওই স্বতন্ত্র পরিচালকরা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেন না। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো সুশাসন থাকে না। সবাইকে বুঝতে হবে, ব্যাংকের পরিচালকদের টাকায় ব্যাংক পরিচালিত হয় না, ব্যাংক পরিচালিত হয় ডিপোজিটরদের টাকায়। তাই ডিপোজিটরদের টাকা রক্ষা করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি, তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। 

দেউলিয়া আইনকে যুগোপযোগী করতে হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের লাইফস্টাইল হাত দিতে হবে। পৃথিবীর অন্য দেশে যেভাবে খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে অ্যাকশন হচ্ছে, ঠিক সেভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারামন যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায় করেছেন এবং মার্জারের মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করে ডিপোজিটরদের আস্থা অর্জন করেছেন, সেভাবে অগ্রসর হতে অনুরোধ করব। ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে যদি সুশাসনে আনা যায়, খেলাপি আদায় করা যাই এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বন্ধ করে উদ্যোক্তাদের যদি পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা যাই, তা হলে ব্যাংকও টিকে যাবে, পুঁজিবাজারও ভালো হবে। এই মুহূর্তে অর্থমন্ত্রী যে কাজটি পুঁজিবাজারের স্বার্থে জরুরিভাবে করতে পারেন, সেটি হলো কোম্পানি বাই ব্যাক আইন। অর্থাৎ যেসব অত্যন্ত স্ট্রং, যাদের রিজার্ভ ভালো, গ্রোথ ভালো, ইপিএস ভালো সেসব কোম্পানি যে কারণেই হোক বাজার যখন খারাপ থাকে, তখন কোম্পানি যদি মনে করে তার শেয়ারটি এই দামে ক্রয়-বিক্রয় ঠিক নয়, তা হলে কোম্পানির তার রিজার্ভ ও রিটেইনড আর্নিংস থেকে বাজার থেকে শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়ে তার শেয়ারটি বাজারে স্ট্যাবল করতে এবং দরপতন ঠেকাতে পারে। এতে বিনিয়োগকারী উপকৃত হন এবং সেই কোম্পানির ওপর বিনিয়োগকারীর আস্থা অনেক বেড়ে যায়। সব উন্নত দেশের পুঁজিবাজারে এ আইন প্রযোজ্য আছে। অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, জরুরিভাবে এ আইনটি অবিলম্বে একটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে কার্যকর করে পরে জাতীয় সংসদে পাস করিয়ে নেওয়ার জন্য। এটি পুঁজিবাজারকে স্ট্যাবল করতে অনেকটা সাহায্য করবে। অর্থমন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স অব বাংলাদেশ, স্টক ডিলার, ব্রোকারেজÑ আমরা যে যেখানেই আছি, বিশেষ করে আমরা যারা পুঁজিবাজার ও অর্থনীতি নিয়ে কথা বলি, আমরা আমাদের যার যার অবস্থান থেকে পুঁজিবাজারকে স্ট্যাবল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক হয়ে কাজ করি। আমরা যেন রিউমার ছড়িয়ে পুঁজিবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত না করি। আমরা যদি যার যার অবস্থান থেকে একসঙ্গে কাজ করি, তা হলে পুঁজিবাজার অবশ্যই স্ট্যাবল হবে এবং লাখো বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা, শিল্পের উদ্যোক্তা ও অর্থনীতি লাভবান হবে।

আমি একটি স্মৃতিচারণ করতে চাই। যা না বললেই নয়, আপনারা সবাই জানেন ২০০৯-১০ সালে আমি যখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট ছিলাম, তখন প্রধানমন্ত্রীর একটি সিদ্ধান্ত আমাকে ও দেশবাসীকে অনুপ্রাণিত করেছিল। তা হলো ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যখন আমাদের এখানকার কোনো কোনো ব্যক্তিবিশেষের ষড়যন্ত্রে পদ্মা সেতুতে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল, তখন আমাদের দৃঢ়চেতা প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বার্থে, সাধারণ জনগণের স্বার্থে আল্লাহর ওপর ভরসা করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন অনেক বুদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদ এটিকে প্রধানমন্ত্রীর একটি আবেগী সিদ্ধান্ত বলেছিলেন। কিন্তু আমি সেদিন প্রধানমন্ত্রীকে এ সিদ্ধান্তের জন্য স্বাগত জানিয়ে একটি প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীর পক্ষ থেকে, বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে অর্থায়ন করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। বাস্তবতা হলো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান এবং শেষ পর্যায়ে।

রকিবুর রহমান: সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড।

সূত্র: আমাদের সময়।

Place your advertisement here
Place your advertisement here