• বুধবার ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ২৪ ১৪৩১

  • || ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

Find us in facebook

‘নব্য মোশতাক’রা মাঠে নেমেছে, সাবধান

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

১৯৭৪-৭৫ সালের সংবাদপত্রগুলোতে তাকালে কিছু খবরে চোখ আটকে যায়। পাটের গুদামে আগুন, কারখানায় রহস্যজনক বিস্ফোরণ, ডাকাতি, ঈদের জামাতে সংসদ সদস্যকে গুলি করে হত্যা, বিভিন্ন স্থানে গণবাহিনীর সন্ত্রাস, নাশকতা, এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুর্নীতি, চোরাকারবারিদের উৎপাত। বঙ্গবন্ধু নিজেই এসব ঘটনায় বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ ছিলেন। এদের সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিলেন।  ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু এসব নাশকতার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন- ‘যারা মনে করেন রাতের অন্ধকারে গুলি করে কিংবা রেললাইন তুলে দিয়ে টেররিজম করে বিপ্লব হয়, তারা কোথায় আছেন জানেন না। এ পন্থা বহু পুরনো। এ পন্থা দিয়ে দেশের মানুষের কোনো মঙ্গল করা যায় না।’

কিছু দিন ধরে বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা আমাকে আবার সেই ’৭৪ এবং ’৭৫ সালের কথা মনে করিয়ে দিল। ৭ মার্চ বিকালে রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। প্রাণহানি হয়েছে বেশ কয়েকজনের। আহত হয়েছেন শতাধিক। ৫ মার্চ ঢাকার প্রাণকেন্দ্র সায়েন্সল্যাব এলাকায় একটি ভবনে প্রায় একই রকম বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ বিস্ফোরণেও কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। ৫ মার্চ কক্সবাজারের উখিয়ায় বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ধ্যায় আগুন লাগে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় প্রায় ৫০০ ঘরবাড়ি পুড়ে যায়। স্থানীয়দের দাবি, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়। পরিকল্পিত নাশকতা। ৪ মার্চ শনিবার বিকালে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় প্রাণ হারান বেশ কজন। আহত হন অর্ধশতাধিক মানুষ। ৩ মার্চ পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ২৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতায় নান্নু স্পিনিং মিলে আগুন লাগে। প্রায় একই সময়ে আগুন লাগে আড়াইহাজারের এসপি কেমিক্যালে। ওইদিন সন্ধ্যায় গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে ঝুট গুদামে আগুন লাগে। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে কে বা কারা আগুন লাগায় রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে। ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সবচেয়ে অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত গুলশান-২ এর একটি আবাসিক ভবনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাগুলো কি নিছক দুর্ঘটনা? এসব ঘটনা কি বিচ্ছিন্ন? কাকতালীয়? আমার তা মনে হয় না। এসব ঘটনার পেছনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে বলেই আমার ধারণা। জনমনে আতঙ্ক, সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা সৃষ্টির জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার। ’৭৪ এবং ’৭৫ সালেও এ ধরনের ঘটনাগুলোকে স্রেফ বিচ্ছিন্ন বলে হালকা করা হয়েছিল। সরকারের ভিতরের লোকজনই সে সময় সত্যকে আড়াল করেছিল। এখনো ঘরের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা শত্রুরা কি একই কান্ড করছে? এ প্রশ্ন করছি এই কারণে যে, সরকারের মধ্যেই একটি শক্তি সরকারের সব অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যেন আদাজল খেয়ে নেমেছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের উল্টো কাজ করার প্রকাশ্য প্রচেষ্টা এখন দৃশ্যমান। গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অবিশ্বাস্য উন্নতি হয়েছে। শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, মানব উন্নয়নেও বাংলাদেশ আজ বিশ্বে অনুকরণীয় উদাহরণ। মানব উন্নয়নের মধ্যে অন্যতম হলো- ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’। প্রান্তিক পর্যায়ে তৃণমূল মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি অনন্য মডেল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ ব্যবস্থা একটি দৃষ্টান্ত। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে জনগণের জন্য সহজ করা। তিনি চেয়েছিলেন গ্রামের দরিদ্রতম মানুষটিও স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসবে। এ কারণেই স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন জাতির পিতা। ’৭২-এর সংবিধানে এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। সংবিধানের ১৫(ক), ১৬ এবং ১৮ (১) এ বঙ্গবন্ধু সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছিলেন। সংবিধানের ১৫ (ক)তে বলা হয়েছে- ‘নাগরিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব।’ জাতির পিতার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। দেশ পরিচালনায় দায়িত্ব গ্রহণ করে যে কটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ তিনি নিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম ছিল কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য প্রান্তিক পর্যায়ে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এক নীরব বিপ্লবের সূচনা হয়। গরিব মানুষ স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসে। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছিল। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এই এক নিকৃষ্টতম উদাহরণ। অনাদরে অবহেলায় অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়ে থাকে কমিউনিটি ক্লিনিক। শেখ হাসিনার সৃষ্টি, তাই এখানে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যায়। কমিউনিটি ক্লিনিকে তালা ঝুলে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো হয়ে ওঠে গরু-ছাগলের বিচরণক্ষেত্র। পরবর্তীতে অবশ্য বিএনপির তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ সিদ্ধান্তকে ভুল স্বীকার করলেও আওয়ামী লীগের ‘নব্য মোশতাক’রা বিএনপি-জামায়াতের পথেই হাঁটছে। কমিউনিটি ক্লিনিক হত্যার সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আগামী অর্থবছর থেকে যে ‘অপারেশন প্ল্যান’ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তাতে কমিউনিটি ক্লিনিককে বিএনপি-জামায়াত আদলে ছেঁটে ফেলার ষড়যন্ত্র চূড়ান্ত প্রায়। এটি বাস্তবায়িত হলে কমিউনিটি ক্লিনিক আলাদা কোনো ‘অপারেশন প্ল্যান’ বা ওপি দ্বারা বাস্তবায়িত হবে না। এটি ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা’ নামে নতুন কর্মসূচির পেটে ঢুকে যাবে। সংকুচিত হবে এর কার্যক্রম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, ‘যেহেতু সরকারের অর্থ সংকট তাই কমিউনিটি ক্লিনিকে অর্থ কাটছাঁট করা হয়েছে।’ তার মতে, এটি নাকি সাময়িক ব্যবস্থা। কী সাংঘাতিক কথা। সরকারের অর্থ সংকটের প্রথম বলি হবে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ? মনে হলো বিএনপি-জামায়াতের প্রেতাত্মা ভর করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের ঘাড়ে। এ ভদ্রলোক মহাভাগ্যবান। সম্প্রতি সরকার তাকে আবারও দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। ভাবখানা এমন যে, তাকে ছাড়া দেশের স্বাস্থ্য খাত অচল হয়ে যাবে। ‘মহাভাগ্যবান’ এসব ব্যক্তি কীভাবে ‘নাজিল’ হন তা আমার কাছে এক বিস্ময়। ২০০১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চিকিৎসকদের ত্রাহি অবস্থা তখন তিনি ছিলেন নিরাপদ দূরত্বে, বহাল তবিয়তে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, প্রাণ গোপাল দত্ত, অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান কিংবা ডা. আবদুল আজিজের অনন্য ভূমিকার কথা আমরা জানি। আহতদের চিকিৎসার জন্য তারা হাসপাতালে হাসপাতালে ছুটে বেড়িয়েছেন। সে সময় কোথায় ছিলেন এই দেবদূত? ২০০৭ সালে এক-এগারোর সময় ‘নায়ক’ হয়ে উঠেছিলেন কয়েকজন চিকিৎসক ব্যক্তিত্ব। শেখ হাসিনার চিকিৎসার জন্য অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুনের অসাধারণ তৎপরতা জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। এ অকুতোভয় চিকিৎসকদের আমরা ঝুঁকি নিতে দেখেছি। তখন দুরবিন দিয়েও এ দুষ্প্রাপ্য ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের যোদ্ধা। কী বিচিত্র! কী ভয়াবহ! এরকম ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর মহান উদ্যোগের গলা টিপে ধরবেন এটাই তো স্বাভাবিক। অর্থ সংকটের কারণে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কার্যক্রম বাস্তবায়ন পরিকল্পনায় কমিউনিটি ক্লিনিককে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার পকেটে ঢুকিয়ে দেওয়ার যুক্তি কেবল অযৌক্তিক নয়, হাস্যকরও বটে। কমিউনিটি ক্লিনিক সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞানহীন মূর্খরাই কেবল এ ধরনের উদ্ভট আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কারণ কমিউনিটি ক্লিনিক কেবল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয় না। কমিউনিটি ক্লিনিক জবাবদিহিতা এবং জনগণের ক্ষমতায়নের একটি রূপকল্প। কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ কর্তৃক পরিচালিত এ অসাধারণ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কোথাও কোথাও এখন নিরাপদ ডেলিভারি হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর রেফারেল পদ্ধতি এখন স্বাস্থ্য খাতের এক দৃষ্টান্ত। মজার ব্যাপার হলো- নতুন প্রস্তাবিত সেক্টর পরিকল্পনায় এমন কিছু খাত অব্যাহত রাখা হয়েছে যেগুলো অগুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থহীন। শুধু তাই নয়, এসব আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিকও বটে। যেমন ‘উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা’। আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারে স্বাস্থ্য খাতের প্রাণভোমরা কমিউনিটি ক্লিনিক। উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা নয়। বরং উপজেলা স্বাস্থ্যসেবার ওপর চাপ কমানোর কথা বলা হয়েছে। অপারেশনাল প্ল্যানে যক্ষ্মা, এইডস এবং এসটিডিকে আলাদা একটি সেক্টর হিসেবে রাখা হয়েছে। অথচ এক্ষেত্রে বাংলাদেশে মূল কাজটি করে ব্র্যাক, আইসিডিডিআর,বি। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে আলাদা করা হয়েছে বটে অথচ ‘লাইফ স্টাইল অ্যান্ড হেলথ এডুকেশন অ্যান্ড প্রমোশনাল’কে (যেটি পুরোপুরি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বিষয়) আলাদা ওপি হিসেবে রাখা হয়েছে। চমৎকার! স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো বলে একটি বিভাগ আছে। এটিকে বলা হয় দুর্নীতির আখড়া। এ ব্যুরোর প্রধান এবং একমাত্র কাজ হলো সরকারি অর্থ লুটপাট। একজন করে বাছাই করা মহাদুর্নীতিবাজকে এখানে লাইন ডিরেক্টর পদে বসানো হয়। এ ব্যুরোর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে শতাধিক মামলা রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের আগের লাইন ডিরেক্টর দুর্নীতির দায়ে সাসপেন্ড হন। বর্তমান লাইন ডিরেক্টর এসে দুর্নীতির অতীত রেকর্ড তছনছ করে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছেন। কাজেই এই ওপি কেন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে বিলুপ্ত হবে? এটি বিলুপ্ত হলে স্বাস্থ্যের নাদুসনুদুস কর্মকর্তাদের পকেট ভরবে কীভাবে? অথচ স্বাস্থ্যবিষয়ক যে কোনো সচেতনতাই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অংশ বলে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অযোগ্যতার কারণে অপারেশনাল প্ল্যানে এসব জগাখিচুড়ি হচ্ছে, এটি আমি বিশ্বাস করি না। এ সেক্টর প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য আবার কনসালট্যান্ট ভাড়া করা হয়েছে। সেই তালিকা দেখে ভিরমি খেতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক বিতর্কিত সচিবকে পরামর্শক হিসেবে ভাড়া করা হয়েছে। এ আমলা স্বাস্থ্য খাতে শাহেদ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত। তিনি স্বাস্থ্য সচিব থাকা অবস্থায় পিপিই কেলেঙ্কারি, মাস্ক কেলেঙ্কারির মতো ঘটনাগুলো ঘটেছিল। শাহেদ, সাবরিনা, আরিফ তারই আবিষ্কার। শিয়ালের কাছে মুরগি বন্ধক দেওয়ার মতোই স্বাস্থ্য খাতে পঞ্চম সেক্টর প্রোগ্রাম প্রস্তুতকরণে তাকেই দেওয়া হয়েছে পরামর্শকের দায়িত্ব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বহু যোগ্য সাবেক সচিব রয়েছেন, যারা এ মন্ত্রণালয়ে সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীল কাজের জন্য এখনো প্রশংসিত। সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, সিরাজুল হক খান, মো. আবদুল মান্নান এ মন্ত্রণালয়ে আলোচিত সৎ সচিব ছিলেন। কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে কেন দুর্নীতির কাদামাখা বিতর্কিত আমলাকে পরামর্শক নিয়োগ করা হলো সে-ও এক রহস্যময় প্রশ্ন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক দাবি করেছেন- সেক্টর প্রোগ্রাম এখনো প্রস্তাবিত, এটি চূড়ান্ত নয়। শেষ পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক আলাদা সেক্টর হিসেবে থাকতেও পারে। কিন্তু তাতে কী? এ অভিপ্রায় প্রমাণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বড় কর্তারা কমিউনিটি ক্লিনিককে কী চোখে দেখেন প্রধানমন্ত্রীও ভালো করেই জানতেন, বিএনপি-জামায়াতই তাঁর স্বপ্ন বিনষ্টের একমাত্র প্রতিপক্ষ। দলের ভিতরও এরকম ‘বিভীষণ’ আছে। ভবিষ্যতে কেউ যেন কমিউনিটি ক্লিনিককে ধ্বংস করতে না পারে সে কারণেই তিনি কমিউনিটি ক্লিনিক সহায়তা ট্রাস্ট আইন করেন। এ আইনের আওতায় কমিউনিটি ক্লিনিক দেখভালের জন্য ট্রাস্ট গঠিত হয়েছে। কিন্তু এ ট্রাস্টকেও অকার্যকর এবং বিকলাঙ্গ করে রেখেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ভাগ্যবান এবং প্রবল ক্ষমতাবানও বটে। তিনি নিজেকে সবচেয়ে সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেন। সব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। ভাগ্যিস এ দেশের মানুষের ‘গোল্ড ফিশ’ মেমোরি। আমার মনে হয় এ দেশের মানুষের স্মরণশক্তি গোল্ড ফিশের চেয়েও স্বল্প। আলতো ঘুমে এক কাত থেকে অন্য কাত হলে যেমন মানুষ স্বপ্ন ভুলে যায়, ঠিক তেমনি এ দেশের মানুষও দ্রুত অতীত ভুলে যায়। বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন দেশের মানুষের স্মৃতি থেকে ঝাপসা হয়ে গেছে। তেমনি আবছা, অস্পষ্ট হয়ে গেছে স্বাস্থ্য খাতে ২০২০ সালের সীমাহীন অনিয়ম এবং দুর্নীতি। ভুলে গেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সীমাহীন অযোগ্যতা এবং ব্যর্থতার কথাও। তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী এখনো অবলীলায় বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়ান। আশির দশকে শেখ হাসিনা যখন স্বৈরাচারের পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, গ্রেফতার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, জীবন দিয়েছেন নূর হোসেন, জয়নাল, জাফর দিপালী, কাঞ্চন, সেলিম-দেলোয়ার, সেই সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বৈরাচারের একান্ত দোসরের আদুরে সন্তান হিসেবে বিলাসী জীবনযাপনে সময় কাটিয়েছেন। ২০০৮-এর আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার সম্পর্কই ছিল না বলতে গেলে। তিনিই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৯ বছর মন্ত্রী। ইদানীং আবার আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটিতেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এভাবেই স্বৈরাচারের ভূত আওয়ামী লীগের সঙ্গে লতাপাতার মতো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছে। এরকম হঠাৎ আওয়ামী লীগাররা কমিউনিটি ক্লিনিকের বিপক্ষে হাঁটবেন এ তো অনিবার্য। খন্দকার মোশতাক যেমন বঙ্গবন্ধুর নাম জপতেন সারাক্ষণ তেমনি এ সরকারের কিছু হঠাৎ গজিয়ে ওঠা প্রভাবশালী মন্ত্রী সারাক্ষণ শেখ হাসিনার নাম জপেন। অবশ্য কাজ করেন ঠিক উল্টো। প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি যুগান্তকারী উদ্যোগ ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’। ’৯৬ সালে এ মানব উন্নয়ন উদ্ভাবনটি শুরু হয়েছিল। তখন তার নাম ছিল- ‘একটি বাড়ি একটি খামার।’ ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো এ দরিদ্রবান্ধব কর্মসূচিও বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আবার শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে এ কর্মসূচি চালু করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এক প্রভাবশালী আমলার হাতে এর সর্বনাশ হয়। তিনি তার প্রিয়ভাজন এক দুর্নীতিবাজ আমলাকে দেন এর দায়িত্ব। ওই প্রভাবশালী কর্মকর্তার আগ্রহে ওই দুর্নীতিবাজ সচিব পর্যন্ত হয়েছিলেন। এ সময় তার দুর্নীতির প্রধান লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল- ‘একটি বাড়ি একটি খামার’। সে সময় ওখানে দুর্নীতি এমনই ওপেন সিক্রেট ছিল যে, প্রকল্পের নামই হয়- ‘একটি বাড়ি, একটি খামার, অর্ধেক আমার অর্ধেক তোমার।’ এখন প্রধানমন্ত্রীর ১০টি উদ্যোগের একটি এ প্রকল্পটি উপেক্ষিত। এটিকেও হত্যার চেষ্টা চলছে নীরবে। ‘আশ্রয়ণ’ প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। মুজিববর্ষে থাকবে না কেউ গৃহহীন- সংকল্পে আশ্রয়ণ প্রকল্প নতুন গতি পায়। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে দেখা যায়, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সৎ এবং আদর্শবান মাঠ কর্মকর্তারা কাজ করেছেন, সেখানে গৃহহীনদের ঘরগুলো ঠিকঠাক মতো হয়েছে। আর যেখানে নব্য মোশতাকের দোসররা মাঠ প্রশাসনে আওয়ামী লীগ সেজে কাজ করেছে, সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বারোটা বেজেছে। প্রশাসনের সর্বত্র এখন নব্য মোশতাকদের আধিপত্য দৃশ্যমান। রাজাকার পরিবার, বিএনপি-জামায়াত আদর্শে বেড়ে ওঠা কিংবা ‘যখন যার তখন তার’ গোছের সুবিধাবাদীরা আমলাতন্ত্রে প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছেন। জাহাঙ্গীর আলম, খাজা মিয়ার মতো দুঃসময়ে আদর্শ বিকিয়ে না দেওয়া আমলারা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে কোনোমতে টিকে আছেন।

’৭৪-৭৫ এর মতো যে নিয়ম করে বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগছে তা নয়, ওই সময়ের মতোই চাটুকার সুবিধাবাদীরা ঘিরে ফেলেছেন সরকারের চারপাশ। ত্যাগী, পরীক্ষিত, দুঃসময়ের কান্ডারিরা আজ অবহেলিত, কোণঠাসা। অনেকটাই তাজউদ্দীনের মতো। এটা শুধু সরকার এবং প্রশাসনে নয়, আওয়ামী লীগেও ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। আর এ কারণেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বিপরীত পথে অনেক ক্ষেত্রেই হাঁটছে আওয়ামী লীগ ও সরকার। অর্থ পাচারকারীরা এ কারণেই ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদের সঙ্গে সরকারের কাদের প্রকাশ্য ও গোপন সম্পর্ক আছে সবাই জানে। ব্যাংকের টাকা লুট করছে কারা? নব্য আওয়ামী লীগের হয়ে যারা চাটুকারিতায় চ্যাম্পিয়ন তারাই।  এরাই নব্য মোশতাক। এরা সরকারের ও প্রধানমন্ত্রীর সব অর্জনকে ম্লান করে দেওয়ার ভয়ংকর খেলায় মেতেছে। আওয়ামী লীগ বাইরের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারে। কিন্তু ঘরের ষড়যন্ত্রকারীদের কাছেই হেরে যায়।  তাই যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, শেখ হাসিনাকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করেন, লালন করেন, তাদের সতর্ক হতে হবে। নির্ঘুম অতন্দ্র প্রহরীর মতো বারবারই বলতে হবে- ‘নব্য মোশতাকরা মাঠে নেমেছে। সাবধান, হুঁশিয়ার।’

লেখক:
সৈয়দ বোরহান কবীর
নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
[email protected]

Place your advertisement here
Place your advertisement here