• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

সৈয়দপুরে কারচুপির কাজে ব্যস্ত ৩০ হাজার নারী

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

ঈদকে সামনে রেখে নিপুণ হাতে সুঁই-সুতা দিয়ে চুমকি পুঁতি ও জরির কাজ করছেন নারীরা। কেউ বসে নেই। এ সময় স্কুল ও কলেজ বন্ধ তাই শিক্ষার্থীরাও এ কাজ করছেন। সকলেই ফুরফুরে মেজাজে তৈরি করছেন এসব কাপড়ে নকশার কাজ।  
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ঢেলাপীর উত্তরা আবাসন প্রকল্প। যেখানে নদীভাঙা, আশ্রয়হীন অভাবী আর হতদরিদ্র মানুষের বসবাস। এই প্রকল্প এলাকায় একটু উঁকি দিলেই চোখে পড়ে গোল হয়ে বসে কাজ করছেন নারী, পুরুষ ও শিশুরা। প্রায় প্রতিটি ঘরের সামনে বসানো কাঠের তৈরি ফ্রেম। মেয়েরা নিপুণ হাতে সুঁই- সুতা দিয়ে চুমকি, পুঁতি আর জরির কাজ করছেন। তৈরি করছেন নানা নকশার জরির শাড়ি, ওড়না, থ্রিপিস ও ব্লাউজ।

প্রায় কয়েক বছর ধরে এখানকার ১ হাজার পরিবার এ কাজ করে জীবনধারণ করছেন। অভাবকে জয় করেছেন তারা। শুধু হাতের কাজ করেই সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন সংসারে। শিক্ষাবঞ্চিত শিশুরা সুযোগ পেয়েছে লেখাপড়ারও। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার ৩ হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু। নীলফামারী জেলার ঘনবসতিপূর্ণ সৈয়দপুরের ভাসমান মানুষের চাপ, বানভাসী, ভিটেমাটিহারা মানুষকে আশ্রয় দিতে শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ঢেলাপীর এলাকায় ২০০৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি স্থাপন করা হয় উত্তরা আবাসন প্রকল্প। সেখানে আশ্রয় পায় ১ হাজার হতদরিদ্র পরিবার।

আবাসনের বেবী আক্তার, কাজলী, পারভীন, শাহিদা জানান, তাদের শাড়িসহ চুমকি, পুঁতি ও জরি সরবরাহ করা হয়। কাজ শেষে মজুরি বাবদ তারা শাড়িপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা করে পান। একটি শাড়িতে হাতের কাজ শেষ করতে অন্তত ১৫ দিন সময় লেগে যায়। তারা কেউ এ ব্যাপারে কোথাও প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেননি। অন্যের কাজ দেখে নিজেরাই দক্ষতা বাড়িয়েছেন। তাদের কাজ করা শাড়ির চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি দিনদিন বাড়ছে এ কর্মে নিয়োজিত নারীদেরও সংখ্যা। আর এ কাজ করে অনেক নারীই এখন স্বাবলম্বী। আবাসন সমবায় ও পুলিশিং কমিটির সভাপতি মতিন আলম জানান, যখন আবাসনে কাজ ছিল না, তখন আমাদের না খেয়ে দিন কাটাতে হতো। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। নারী কর্মীরা জানায়, প্রতি মাসে আমাদের আয় হয় ৩ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। শাড়ির কাজ করে আমাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। এখন আমরা দুবেলা খেতে পারি, সন্তানদের স্কুলে পাঠাতেও পারি। 

এছাড়াও সৈয়দপুর শহরের কাজিহাট, মুন্সিপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, বাঁশবাড়ী, হাতিখানা, নতুন বাবুপাড়া, ইসলামবাগ, গোলাহাট, রসুলপুর, বার্মাসেল প্রভৃতি মহল্লার বাড়ি বাড়িতে চলছে কারচুপি পোশাক তৈরির কাজ। এছাড়াও উপজেলার কামারপুকুর, বোতলাগাড়ী, বাঙ্গালিপুর, কাশিরাম বেলপুকুর, খাতা মধুপুর ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে নারী শ্রমিকরা প্রচুর কাজ করছেন।

মহাজন আরমান আলী, মো. তারেক বলেন, আমরা ঢাকা থেকে ই-মেইলে অর্ডার গ্রহণ করে পরে নকশা (ডিজাইন) বুঝিয়ে দেই নারী শ্রমিকদের। ঘরে ঘরে গিয়ে দিয়ে আসেন জর্জেট বা শিপন কাপড়ের থান বিভিন্ন রকম চুমকি, রেশমি সুতা, গাম ইত্যাদি। কাপড়ে চুমকি করতে এসব উপকরণের দরকার হয়। মহাজনের অর্ডার পেলেই শ্রমিকরা রাত দিন ব্যস্ত হয়ে পড়েন কারচুপির কাজে। ঈদ বাজারকে সামাল দিতে কম লাভ মিললেও আমাদের শ্রমিকরা কারচুপির কাজে ব্যস্ত থাকে। আমরা সময় মতো ঢাকায় তা সরবরাহ করি।

সৈয়দপুর কারচুপি সমিতির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ঢাকার বড় বড় শপিং মল ও মার্কেটে সৈয়দপুরের কারচুপির পোশাক বিক্রি হয়। বিয়ে-ঈদে এ পোশাকের অনেক চাহিদা। সৈয়দপুরের ৩০ হাজার নারী শ্রমিক কারচুপির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরাও এখন মহা ব্যস্ত কারচুপির কাজ নিয়ে।

এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরুন্নাহার শাহজাদি জানান, কারচুপির কাজ করে এখানে অনেক নারী নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। আমাদের দপ্তরেও এ কাজে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। এই কাজ স্থানীয় বাদে ঢাকার বড় বড় শপিং মলের চাহিদা থাকে বেশি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here