• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

Find us in facebook

‘রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে’

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ মে ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপ বলেছেন, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিবাসী রোহিঙ্গারা। যার কারণে বাংলাদেশকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

মঙ্গলবার ঢাকায় বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠান শেষে এ কথা বলেন তিনি।

পরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক কারবারি বেড়েছে। যে কারণে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। তাই এই সংকট সমাধান ও তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে আইওএম’কে জোরালো ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।

এছাড়া বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব দেশের নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি অভিবাসী হচ্ছে সেই বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। আর নিজ দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর তালিকায় এদেশের অবস্থান অষ্টম।

আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা-আইওএম জানিয়েছে, এ বছরের প্রথম তিন মাসে ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে যারা মারা গেছে তাদের ১২ ভাগই বাংলাদেশি।

ঢাকায় বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক সাক্ষাৎকারে সংস্থাটির মহাপরিচালক অ্যামি পোপ বলেন, আমরা দেখছি বাংলাদেশিদের এই সংখ্যাটা ক্রমশই বাড়ছে। ইউরোপে অভিবাসী হতে চাওয়া এসব বাংলাদেশিদের অনেকে আরব দেশগুলোতে কাজে নিয়োজিত ছিল।

বিশ্ব অভিবাসী সংস্থার এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ থেকে ২২ সাল পর্যন্ত মাত্র দুই বছরে আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ৬৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

ভূমধ্যসাগরে নিহতদের ১২ শতাংশ বাংলাদেশি-

প্রতি বছর অবৈধভাবে ইউরোপ প্রবেশ করতে গিয়ে সারাবিশ্বের অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশীর সলিল সমাধি ঘটে ভূমধ্যসাগরে। প্রায়ই এসব খবর আসে গণমাধ্যমে।

মঙ্গলবার আইওএম'র প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধভাবে ইউরোপে অভিবাসী হতে গিয়ে অনেকে ভূমধ্যসাগরকে ব্যবহার করছে। কিন্তু ইউরোপে ঢুকতে না পেরে তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ ভূমধ্যসাগরে ডুবেই মারা যাচ্ছে।

এ সময় আইওএম মহাপরিচালক জানান, এ বছরের প্রথমার্ধে এখন পর্যন্ত যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে ১২ শতাংশই বাংলাদেশি। তবে, তারা সংখ্যায় কতজন সেটি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করে বলতে পারেনি আইওএম মহাপরিচালক।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা বলছে, প্রতি বছর নানা কারণে বিশ্বজুড়ে ২০ শতাংশ মানুষ অভিবাসনের চেষ্টা করছে। তারা নানা কারণে অন্য দেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক সাক্ষাৎকারে অ্যামি পোপ বলেন, গেলো বছর আট হাজারেরও বেশি মানুষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মারা গেছে। তবে তার মধ্যে বাংলাদেশের কত শতাংশ ছিল সেটি নিশ্চিত  নয়।

বিশ্বে ষষ্ঠ অভিবাসী দেশ বাংলাদেশ-

এই রিপোর্টে বিশ্ব অভিবাসন সংস্থা জানায়, অভিবাসী হওয়ার তালিকায় গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। এই রিপোর্টে শীর্ষ যে ২০টি দেশের তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ।

এই তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভারত। এই তালিকায় বাংলাদেশর আগে অবস্থান রয়েছে মেক্সিকো, রাশিয়া, চায়না ও সিরিয়ার।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগে কত মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, এমন এক তালিকায় এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছে। শুধু ২০২২ সালে দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে ১৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে আইওএম’র ওয়ার্ল্ড মাইগ্রেশন রিপোর্ট-২০২৪ এ জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আফ্রিকার পর এশিয়ার বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির মূল কারণ ছিল দুর্যোগ। ব্যাপক ও ভয়াবহ বন্যার অভিজ্ঞতা অর্জনকারী পাকিস্তানে ২০২২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘দুর্যোগ বাস্তুচ্যুতি’ রেকর্ড করা হয়েছে। এই অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম দুর্যোগ বাস্তুচ্যুতি ফিলিপাইনে রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপরই অবস্থান করছে চীন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিধ্বংসী বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়া জলবায়ু অভিঘাতের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাপপ্রবাহ এবং বন্যার মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। দীর্ঘ বর্ষা ঋতু, উষ্ণ আবহাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান খরা সবই এই অঞ্চলে ‘নতুন স্বাভাবিক’ হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

আইওএম এর মহাপরিচালক অ্যামি পোপ বলেন, জীবন বাঁচাতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে এবং উন্নত জীবন বা জীবিকার আশায় সারাবিশ্বের মানুষ অভিবাসী হচ্ছে।

রেমিট্যান্স অর্জনে বাংলাদেশ অষ্টম-

এই গ্লোবাল রিপোর্টে জানানো হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হিসেবে যারা রয়েছে তাদের মধ্যে বড় একটা অংশ বাংলাদেশের। ২০২২ সালের সর্বশেষ রেমিট্যান্সের তথ্য তুলে ধরা হয় এই রিপোর্টে। যাতে দেখা যায়, রেমিট্যান্স গ্রহণের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের মধ্যে অষ্টম।

এই তালিকায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থান সবার ওপরে, অর্থাৎ প্রথম। ২০২২ সালে ভারত রেমিট্যান্স গ্রহণ করেছে ১১১ দশমিক ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, মেক্সিকো ৬১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার, চীন ৫১ বিলিয়ন ডলার।

ফিলিপাইনের নাগরিকরা নিজ দেশে রেমিট্যান্স পাঠায় ৩৮ বিলিয়ন ডলার, ফ্রান্সের ক্ষেত্রে এটি ৩০ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তান ক্ষেত্রে ২৯ বিলিয়ন ডলার এবং মিশরের ক্ষেত্রে ২৮ বিলিয়ন ডলার।

তালিকার অষ্টম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশি অভিবাসীরা ২১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। এছাড়া নাইজেরিয়া বছরে ২০ বিলিয়ন ডলার এবং জার্মানি ১৯ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পায়।

প্রায় সমপরিমাণ রেমিট্যান্স গ্রহণ করে ২০২০ সালেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল অষ্টম।

বিশ্ব অভিবাসন সংস্থার এই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে ২০১০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১০ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দশম।

পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০১৫ সালে রেমিট্যান্স অর্জন ৫ বিলিয়ন ডলার বাড়লেও, তালিকায় অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

আইএমও’র এই রিপোর্ট বলছে, রেমিট্যান্স অর্জনে গত এক যুগ ধরে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে ভারত।

এই রিপোর্টে দেখা যায় সারাবিশ্বের দেশগুলোতে যে রেমিট্যান্স পাঠানো হয়, এই দেশের তালিকায় সবার ওপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

রেমিট্যান্স পাঠানোর তালিকায় ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও সর্বশেষ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে রেমিট্যান্স পাঠানোয় এখন বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ সৌদি আরব।

২০২২ সালের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী যেসব দেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানো হয় এমন শীর্ষ দশের তালিকায় দেশের মধ্যে রয়েছে- সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, চীন, কুয়েত, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও কাতার।

মি. পোপ বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে অনেকে ধারণা করেছিলেন বিশ্বে এই সময় রেমিট্যান্স কমবে। কিন্তু আমাদের রিপোর্ট বলছে এই সময় রেমিট্যান্স বেড়েছে। এই রেমিট্যান্স বেশি যেসব দেশে গেছে তা ছিল সেসব দেশের জিডিপির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।

তিনি জানান, অনেক ক্ষেত্রে এই রেমিট্যান্স সেই দেশগুলোতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকে ছাড়িয়ে গেছে।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান কোথায়?

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপ সোমবার বাংলাদেশে আসার পর প্রথম সফর করেন কক্সবাজার। সেখানকার রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।

মঙ্গলবার যখন অভিবাসন রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় তখন রোহিঙ্গা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে সে কথাও তুলে ধরেন আইএমও’র এ শীর্ষ কর্তা।

তিনি বলেন, এই লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুতদের ভরণপোষণসহ সহযোগিতা করে আসছে আইওএম। নিজ দেশে তাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশও এক ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।

এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন অ্যামি পোপ। এ সময় শেখ হাসিনা নতুন উৎস থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আরো তহবিল সংগ্রহের জন্য আইওএম’র প্রতি আহ্বান জানান।

ঐ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অ্যামি পোপকে জানান, মিয়ানমার থেকে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিল কমে গেছে। তাই আইওএম’র উচিত এ উদ্দেশে আরো তহবিল সংগ্রহের জন্য নতুন অংশীদারদের খুঁজে বের করা।

পরে এক সাক্ষাৎকারে অ্যামি পোপ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এই সংকট সমাধানে উদ্যোগ নিতে আমরা বিশ্ব ব্যাংকসহ দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের জানিয়েছি। তাদের সেখানে বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানিয়েছি।

মাইগ্রেশন রিপোর্ট অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১৩ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজ দেশে দ্রুততম সময়ে প্রত্যাবাসন এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কক্সবাজারে তাদের আশ্রয় এলাকা মাদক, অস্ত্র চোরাচালান এবং জঙ্গিবাদের ‘ব্রিডিং গ্রাউন্ড’ হিসেবে ব্যবহার শুধু দেশেরই নয় আন্তর্জাতিক সংকটে রূপ নিচ্ছে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here