• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

Find us in facebook
সর্বশেষ:
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ই আইন হিসেবে গণ্য হবে: জনপ্রশাসনমন্ত্রী। ২৫ জুলাই পর্যন্ত এইচএসসির সব পরীক্ষা স্থগিত।

মোয়ায় ফিরেছে সাইফুলের ভাগ্য, তার কারখানায় কাজ করেন ২৫ নারী-পুরুষ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

কুড়িগ্রামে মুড়ি ও গুড় দিয়ে সুস্বাদু মোয়া তৈরি করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে সাইফুল ইসলামের। তার কারখানায় তৈরি করা মোয়ার পাশ্ববর্তী তিন উপজেলায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তার বাড়িতে মোয়া তৈরির কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে আরও ২০-২৫ নারী-পুরুষের।

সাইফুল ইসলাম (৪৫) কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তা পাড়ের গোড়াই পিয়ার এলাকার বাসিন্দা। তার পরিবারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে স্থানীয় বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি ও মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম দীর্ঘ ১০-১২ বছর বাইসাইকেল ও রিকশার মেকানিকের কাজ করেই চালাচ্ছিলেন তার টানাপোড়নের সংসার। হঠাৎ গত ৪ বছর আগে শারীরিক অসুস্থতায় বন্ধ হয়ে যায় তার পেশা। পরে উপায়ন্তর না পেয়ে প্রতিবেশীর থেকে টাকা ধার করে চিকিৎসা ও সংসারের খরচ মেটাতেন। ২০২০ সালে দিকে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে স্বল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করেন বাড়িতে মোয়া তৈরির কাজ। প্রথম দিকে এ কাজে পরিবারের লোকজন সহযোগিতা করলেও পর্যাক্রমে বাজারে তার মোয়ার চাহিদা বেশি থাকায় এখন তার কারখানায় কাজ করছেন ২০-২৫ জন নারী পুরুষ। প্রতিদিন তার কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে ৮-১০ হাজার মোয়া। তা বিক্রি করে শ্রমিক, পরিবহন ও অন্যান্য খরচ মিটিয়ে প্রতিদিন আয় করছেন দেড় থেকে ২ হাজার টাকা। এখন বাজারে মোয়ার চাহিদা বেশি থাকায় খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।

তার কারখানায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একটি বড় হাঁড়িতে জমাট বাধা গুড় তাপ দিয়ে তরল করা হচ্ছে। তরল গুড়ে মুড়ি মিশ্রিত করে তিনটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নারীরা তৈরি করছেন এই সুস্বাদু মোয়া। এগুলো রাখা হচ্ছে পাশের একটি ঘরে। সেখানে ১০টি  মোয়া দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে একটি করে প্যাকেট। 

সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি গত তিন বছর ধরে মোয়া তৈরি করছি। আমার এখানে ২০-২৫ জন নারী পুরুষ কাজ করছে। তাদেরও পারিশ্রমিক দিচ্ছি। আমারও দিন গেলে এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হচ্ছে। মাসে ৪০ হাজার টাকার মতো আয় হয়। মোটামুটি সংসারটা এখন ভালো চলছে। আগে তো  খুব অভাব ছিল। টাকা পয়সা বেশি থাকলে আরও বড় পরিসরে কাজটা করতে পারতাম। আমার এখানে প্রতিদিন ৮-১০ হাজার মোয়া তৈরি হচ্ছে। এসব মোয়া আমি নিজেই পাশ্ববর্তী তিনটি উপজেলায় বিক্রি করছি।

সাইফুল ইসলামের স্ত্রী শাপলা বেগম বলেন, আমার সংসারে আগে খুব অভাব ছিল। আমার স্বামী অসুস্থ ছিল। ঠিকমতো কাজ করতে পারত না। আমরা গত তিন বছর ধরে বাড়িতে মোয়া তৈরি করছি। এখন আমাদের ভালোই চলছে। সামান্য কিছু জমিনও বন্ধক নিছি। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে করার চিন্তাভাবনা আছে। 

সাইফুল ইসলামের মোয়া তৈরির কারখানায় কাজ করছেন মাহমুদা নামের এক নারী। তিনি বলেন, আমরা অনেকে এখানে কাজ করি। দিন ২০০ টাকা পারিশ্রমিক পাই। স্বামীর ইনকাম ছাড়াও এখানকার আয়ে সংসারে যোগান দিচ্ছি। পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) মন্টু মিয়া বলেন, আমার ওয়ার্ডের সাইফুল আগে মেকানিকের কাজ করতো। কয়েক বছর থেকে বাড়িতে মোয়া তৈরি করে বিক্রি করছে। বাড়িতে মোয়া তৈরি করে ভালোই লাভ হচ্ছে। পাশাপাশি তার এখানে ২০-২৫ জন নারী পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সরকারিভাবে তাকে যদি সহযোগিতা করা হয় তাহলে আমার মনে হয় সে আরও বড় পরিসরে মোয়া তৈরির কাজটি করতে পারবে।

এবিষয়ে কুড়িগ্রাম যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলী আর রেজা বলেন, আমাদের এখানে যারা ট্রেনিংপ্রাপ্ত তাদের প্রথমে ক্ষুদ্র লোন দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া সাইফুল ইসলামের বয়স বেশি থাকার কারণে তাকে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছে না। কারণ এখানে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারী-পুরুষদের ট্রেনিংয়ের সুযোগ রয়েছে। 

Place your advertisement here
Place your advertisement here