• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

‘কালো’-তে দেড় যুগ বেরোবির ‘ব্ল্যাক ম্যান’ খ্যাত রনির

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

কালো। কখনও শোকের, কখনও প্রতিবাদের আবার কখনও অশুভ, ভয় কিংবা মন্দের রং। আবার এই কালো গাম্ভীর্য এবং কর্তৃত্বের প্রতীকী রংও। আভিজাত্যের প্রকাশও ঘটে কালোতে। যে কারণে অনেকেই পছন্দ করেন কালো রঙের পোশাক। তেমনই একজন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. মোর্শেদ উল আলম রনি।

এক-দুদিন করতে করতে ১৮ বছর ধরে শুধু কালো রঙের পোশাক পরে আসছেন মোর্শেদ উল আলম রনি। ব্যতিক্রমী সাজপোশাক দিয়ে রনি বেরোবি ক্যাম্পাসে নিজের অনন্যপরিচয় দাঁড় করিয়েছেন। শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি, ফতুয়া কিংবা পাঞ্জাবি সবকিছুই তার কালো। এমনকি তার জুতা থেকে শুরু করে টুপি, বাইক, চশমা, হাতঘড়ি, মোবাইল ফোনেও আছে কালোর ছোঁয়া। কালোকে ভালোবেসে প্রায় দেড় যুগ পার করেছেন তিনি। বিয়েও করেছেন কালো রং গায়ে জড়িয়ে।

নিজস্ব চিন্তাভাবনা থেকেই কালোর প্রতি দুর্বলতা জন্ম নেয় প্রায় ২০০১ সালের শুরুর দিকে। তখন উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছেন রনি। তবে পুরোপুরি শুধু কালো রং ধারণ করতে সাধনা করতে হয়েছে তিন থেকে চার বছর। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ২০০৫ সাল থেকে নিয়মিত শুধু কালো রঙের পোশাক পরা শুরু করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে কালো রঙের পোশাক পরায় একটা বিশেষত্ব তৈরি করেছেন। কালোর প্রতি ভালোবাসাই তাকে পরিচিত করেছেন ব্ল্যাকম্যান হিসেবে। যদিও শুরুর দিকে পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে নানা কটুকথা শুনতে হয়েছে রনিকে।

কষ্ট নিয়ে রনি বলেন, কালোর কারণে কুৎসিত ভাষায় তারদিকে মন্তব্য ছুড়ে দিতেন অনেকেই। কেউবা বলতেন প্রেম করে ব্যর্থ হয়েছেন তাই হয়তো এমনটা করেন। তবে একসময় এই কালোর কারণে পেয়েছেন অন্যান্যসম্মান, স্নেহ-ভালোবাসা। আবার সবসময় এই কালো ড্রেস পরার কারণে অনেক জায়গায় অনেক মজার ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। অচেনা কোনো জায়গায় গেলেই তাকে র‍্যাবে চাকরি করেন বলে মনে করেন অনেকেই। কিছু কিছু জায়গায় তিনি র‍্যাবে চাকরি করেন না বা কোনো ডিফেন্সেই চাকরি করেন না এটা বোঝাতেই পারেন না।  বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পরিচিত ব্ল্যাক রনি নামে। যেন কালো মানেই রনি।

তার মতে, যেমন হিমুর রং হলুদ, রুপার রং নীল, তেমনি রনির রং কালো। প্রত্যেক মানুষের কাছেই তার নিজস্ব একটা পছন্দের রং থাকে, তেমনই তার পছন্দের রং কালো। কালো সাধনার রং, আর এই সাধনা করতে করতে তিনি এই কালোকে তার আশপাশের সব মানুষের কাছে একটি ব্র্যান্ডে পরিণত করেছেন। তাকে যারা চেনে এমন মানুষের কাছে কালো মানেই রনির প্রতিচ্ছবি।

শুরুতে মনের খেয়ালে কালো রঙের পোশাক পরা শুরু করলেও একসময় কালোকেই সারা জীবনের জন্য আঁকড়ে ধরেন রনি। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে পরিধান করে আসছেন শুধু কালো রঙের পোশাক। পৃথিবীতে এত রং থাকতেও রনি শুধু কালো পরিধান করেন।

রনি জানান, সব ঋতুতেই তিনি সমানভাবে কালো পোশাক পরেন। গরমের দিনেও কালো পোশাক পরতে কোনো অসুবিধা হয় না। প্রথম প্রথম অনেক অসুবিধা হতো। প্রচণ্ড গরমে অনেক কষ্ট হতো। এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এখন প্রচণ্ড গরমেও অস্বাভাবিক কিছু মনে করেন না তিনি।

তিনি আরও জানান, প্রথমে অবশ্য এই কালোর কালেকশন করতে অনেক বেশ বেগ পেতে হয়েছে। দোকানের পর দোকান খুঁজে খুঁজে কালো রঙের পোশাক সংগ্রহ করতে হতো। পরে দোকানিরা বিষয়টা যখন জেনেছেন তখন তাদের কাছে বিশেষ কোনো কালো পোশাক এলে তারাই তাকে ফোন করে জানাত। মজার বিষয় হলো, এখন কোথাও যদি তার পরিচিত কেউ কালো রঙের পোশাক দেখে তখনই রনির কথা মনে করে এবং তারা এসে সেটা তাকে জানায়। সময় সুযোগ করে ছুটে চলেন কালোর সন্ধানে কালো বাইকটা সঙ্গে নিয়ে।

'তবে জীবনে দুটি বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলাম। এক বিয়ের দিনের পোশাক নিয়ে। আর দুই কোন পেশায় যাব, সেই পেশায় কোনো ড্রেস কোড থাকবে কি না সেটা নিয়ে। কিন্তু দুই পর্যায়েই আমি উত্তীর্ণ হয়েছি বেশ সফলতার সঙ্গে। বিয়ের দিনেও আমি কালো কালারের ড্রেস পরে বিয়ে করেছি। আর যেহেতু আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগদান করেছি তাই এখানেও নির্দিষ্ট কোনো ড্রেসকোড নেই। এভাবে দেখতে দেখতেই পার হয়ে গেছে ১৮ টি বছর,' বলেন রনি।

তবে রনির চিন্তা খুব দ্রুতই গিনেস বুকে আবেদন করার।

রনির স্ত্রী লায়লা খাতুন বলেন, ‘এমনিতেই তাকে কালো কালারের ড্রেসে ভালো লাগে, কিন্তু সবসময় এই একই কালারের কাপড় পরার জন্য মাঝে মাঝে বিরক্তিও লাগে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় যখন কোনো একটা নির্দিষ্ট ড্রেস পরার জন্য চিন্তা করার পর সমস্ত আলমিরা আর ওয়ারড্রব তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়। তখন মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়। কারণ, তার সব কাপড়ই কালো। খোঁজার সময় সব কাপড়কে একই রকম লাগে।’

লায়লা খাতুন আরও বলেন, বিয়ের পর আমাকে প্রথম যে শাড়ি ও জামা রনি পছন্দ করে কিনে দিয়েছে সেটাও ছিল কালো। আমার পছন্দের রং লাল। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও আমি তাকে লাল বা অন্য কালারের জামা-কাপড় পরাতে পারিনি। এখন ভাবি ও যেটা পছন্দ করে সেটাই পরুক এবং আমি এখন ওর জন্য সবথেকে সুন্দর কালো পোশাকটাই পছন্দ করে দিতে সাহায্য করি হোক সেটা কালো শার্ট, গেঞ্জি, ফতুয়া বা পাঞ্জাবি। তবে কোনো একদিন তিনি কালো ছাড়বেন এই আশা করি।’

কথা হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিমেল, জবা, নাজমুলসহ রনির পরিচিত কয়েক জনের সঙ্গে। যারা তাকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন। তাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তাকে চিনি ও জানি। রনি ভাইয়ের পোশাকের নিজস্বতার বিষয়টা আমার কাছে খুব ভালো লাগে। আমি মনে করি দীর্ঘদিন ধরে কালো রঙের পোশাক পরে তিনি একটা আলাদা বিশেষত্ব তৈরি করেছেন। যেটার মাধ্যমে তার একটি আলাদা ব্যক্তিত্বও প্রকাশ পায়। কালো পোশাকে তাকে অনেক ভালো লাগে। তার এই দীর্ঘ সাধনার জন্য সাধুবাদ জানাই।’

রনি শুধু কালো পোশাকেই সীমাবদ্ধ নন, তার সংগ্রহে আছে বাহারি রকমের দেশি-বিদেশি কালো কালারের পানির মগ। তিনি বই পড়তে অনেক ভালোবাসেন। তার বাড়িতে ছোট একটি লাইব্রেরিও আছে। সেখানে রয়েছে নানা রকমের বইয়ের সমাহার।

Place your advertisement here
Place your advertisement here