• শনিবার ১১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৮ ১৪৩১

  • || ০২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

Find us in facebook

নীরব ঘাতক নাক ডাকা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা একটি প্রকট সমস্যা। আমাদের আশপাশের অনেক মানুষ এ সমস্যায় ভোগেন। তবে ভাবনার বিষয় হচ্ছে, ঘুমের মধ্যে নাক ডাকাকে অনেকে সমস্যা মনে না করে গভীর ঘুমের লক্ষণ মনে করেন। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে নাক ডাকা প্রশান্তিময় ও তৃপ্তিদায়ক ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানোসহ নানবিধ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। 

মধ্যবয়স্ক পুরুষদের ৪০ ভাগ এবং নারীদের ২০ ভাগ জীবনের কোনো না কোনো সময় ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন।এমনকি বাচ্চাদেরও অনেক সময় ঘুমের মধ্যে নাক ডাকতে দেখা গেছে। যিনি ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন তিনি তা টের পান না। কিন্তু পাশে যিনি থাকেন তিনি বিরক্তবোধ করেন।

নাক ডাকা সমস্যার কিছু কারণ- 
ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিপথে কোনো বাধা পেলে বাতাস শ্বাসযন্ত্রে কাঁপুনি সৃষ্টি করে। এর ফলে নাক ডাকা শব্দ হয়। 

নাকে পলিশ বা সাইনাসের সমস্যা থাকলে নাক ডাকা শুরু করে। এর ফলে নাক ডাকার শব্দ হয়। 

ওজন বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে গলার চারপাশের চর্বি জমা হয়। বাচ্চাদের নাকের পিছনে (অফবহড়রফ) বৃদ্ধি পাওয়া। 

বয়সের সঙ্গে নাক ডাকা সম্পর্ক আছে। যত বয়স বাড়ে কণ্ঠনালি তত সরু হতে থাকে। ফলে নাক ডাকা শুরু হয়। এছাড়া গলার কাছে পেশি নমনীয়তা কমে গেলে। ধূমপান ও অ্যালকোহল এ সমস্যা বাড়ায়।

আরও কিছু সমস্যা-
নাক ডাকা রোগীদের সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম উত্তেজিত থাকে। ফলে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার বেশি থাকে যা পরবর্তীতে স্থায়ী উচ্চরক্তচাপে পরিণত হতে পারে। *নাক ডাকা রোগীদের হার্ট অ্যাটাক বেশি হয়, হার্ট ফেইলুরের ঝুঁকি বেশি হয়, এমনকি ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মৃত্যু কারণও হতে পারে নাক ডাকা। নাক ডাকা রোগীদের ডায়াবেটিস এবং স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

নাক ডাকা এড়াবেন কীভাবে-
যারা নাক ডাকেন তারা চিৎ হয়ে না ঘুমিয়ে কাত হয়ে ঘুমাতে পারেন। চিৎ হয়ে ঘুমালে গলার পেশি শিথিল থাকে। ফলে নাক বেশি ডাকার আশঙ্কা থাকে। 

ওজন কমালেও অনেক সময় নাক ডাকা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিহার করতে হবে। 

মাথার নিচে কয়েকটি বালিশ দিয়ে নাক ডাকা কমানো যেতে পারে। মাথার নিচে বালিশ দিলে বুকের চেয়ে মাথা বেশি উঁচুতে থাকে। এতে নাক ডাকার আশঙ্কা কিছুটা কমে যায়। 

ধূমপান করলে শরীরের অক্সিজেন ব্যবহার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে বাতাস বের হওয়ার পথ সংকুচিত হয়ে পড়ে। এর কারণেও নাক বেশি ডাকতে পারেন অনেক। তাই ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এতে করে ঘুমের সঙ্গে শরীরের এক ধরনের সামঞ্জস্য তৈরি হয় ফলে অভ্যাসেরও পরিবর্তন হয়। ব্যায়াম করলে পেশি, রক্তের চলাচল বাড়ে, ফলে ঘুমও ভালো হয়। 

নাক ডাকার বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি-
নাক ডাকা রোগীদের সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম উত্তেজিত থাকে। ফলে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার বেশি থাকে, যা পরবর্তী সময়ে স্থায়ী উচ্চরক্তচাপে পরিণত হতে পারে। নাক ডাকা রোগীদের হার্ট অ্যাটাক বেশি হয়, হার্ট ফেইলুর ঝুঁকি বেশি হয়, এমনকি ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মৃত্যু কারণও হতে পারে নাক ডাকা।

নাক ডাকা রোগীদের হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হতে পারে। হার্টের অলিন্দ বড় হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া অলিন্দন শক্ত হয়ে যেতে পারে (ফাইব্রোসিস)। নাক ডাকা রোগীদের ডায়াবেটিস এবং স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যারা নাক ডাকেন, তারা চিৎ হয়ে না ঘুমিয়ে কাত হয়ে ঘুমাতে পারেন। চিৎ হয়ে ঘুমালে গলার পেশি শিথিল থাকে। ফলে নাক বেশি ডাকার আশঙ্কা থাকে। ওজন কমালেও অনেক সময় নাক ডাকা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

পরামর্শ- 
মাথার নিচে কয়েকটি বালিশ দিয়েও নাক ডাকা কমানো যেতে পারে। মাথার নিচে বালিশ দিলে বুকের চেয়ে মাথা বেশি উঁচুতে থাকে। এতে নাক ডাকার আশঙ্কা কিছুটা কমে যায়। ধূমপান করলে শরীরের অক্সিজেন ব্যবহারের ক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে বাতাস বের হওয়ার পথ সংকুচিত হয়ে পড়ে। এ কারণেও নাক বেশি ডাকতে পারেন অনেকে। তাই ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করাই ভালো। নাক ডাকায় আক্রান্ত হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এর কারণ জেনে প্রতিকার করুন। নাক ডাকা সমস্যাকে ছোট করে দেখা যাবে না। যথাযথ কারণ নির্ধারণ করে এর চিকিৎসা নিয়ে প্রশান্তিময় ঘুমের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা যায়।

আসুন জেনে নিই ঘুমের মাঝে নাক ডাকার কী কী রোগের লক্ষণ-
নাক ডাকা অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগের লক্ষণ। অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া একটি ঘুমসংক্রান্ত রোগ। এ রোগে আক্রান্ত মানুষের ঘুমানোর সময় শ্বাসনালির মধ্য দিয়ে বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় বলে উচ্চশব্দে নাক ডাকার অভ্যাস হয়। শ্বাসনালি রোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যারা ধূমপান করেন তাদের শ্বাসনালির সমস্যায় ভুগতে দেখা যায় এবং নিঃশ্বাসে সমস্যা শুরু হয়। সুতরাং উচ্চশব্দে নাক ডাকা এবং ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট হওয়া মারাত্মক একটি রোগের লক্ষণ। এই রোগে আক্রান্ত মানুষকে স্মৃতিভ্রষ্ট রোগে পড়তে দেখা যায়। তাই দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। নাক ডাকা উচ্চরক্তচাপ রোগের লক্ষণ। যাদের ঘুমের মাঝে নাক ডাকার অভ্যাস আছে তারা উচ্চরক্তচাপে ভোগেন।

মস্তিষ্কের ধমনীতে ব্লক হওয়ার কারণে ঘুমানোর সময় নাক ডাকার অভ্যাসের সৃষ্টি হয়। মস্তিষ্কের ধমনীতে ব্লক উচ্চরক্তচাপের সমস্যা থেকে তৈরি হয়। উচ্চরক্তচাপের সমস্যা বেড়ে গেলে পরবর্তী ব্রেইন স্ট্রোকের আশঙ্কা দেখা দেয়। তাই অবহেলা না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন এবং উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা করুন। কার্ডিওভ্যাসকুলারের লক্ষণ নাক ডাকা। যাদের একটু বাড়তি ওজন আছে তাদের বেশিরভাগ সময় নাক ডাকতে দেখা যায়। কারণ মেদ জমে শ্বাসনালির ব্যাস কমে আসে বলে ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া যায় না। ফলে নাক ডাকা শুরু হয়।মস্তিষ্কের ধমনীতে চাপ পাওয়ার ফলে কিংবা মেদ জমে শ্বাসনালির ব্যাস কমে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিকমতো হয় না। এতে দেহের ক্রিয়াকর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এ কারণে কার্ডিওভ্যাসক্যুলারের সমস্যা সৃষ্টি হয়।

লেখক: অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু
প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব, অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া বাংলাদেশ।

Place your advertisement here
Place your advertisement here