• সোমবার ০৬ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে নতুন সম্ভাবনা হয়ে দেখা দিয়েছে মেট্রোরেল

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

চালু হয়েছে মেট্রোরেল। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এটি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে নতুন সম্ভাবনা হয়ে দেখা দিয়েছে। অর্থনীতির বিশ্লেষক ও মেট্রোরেল এলাকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন এ যাতায়াত ব্যবস্থায় অর্থনীতির পালেও হাওয়া লাগবে। কারণ মেট্রোরেলের কারণে শহরে যানজট কমায় বাঁচবে মানুষের কর্মঘণ্টা। বাড়বে উৎপাদনশীলতা। আসবে নতুন বিনিয়োগ। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে এই প্রকল্পের জন্য রাজধানীতে যাতায়াত ও কাজকর্মে যে অসুবিধা ছিল তা দূর হয়েছে। এতে কেনাবেচায় যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল, তা কাটবে বলে আশা অনেকের।

অন্যদিকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার মানুষ মেট্রোরেল দেখতে ও চড়তে আসবেন। এটা পরিবহন, খাওয়া-দাওয়া, কেনাকাটার মতো খাতে বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি করবে। উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় নতুন ধরনের ব্যবসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে মেট্রোরেলের পুরো সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ পেতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হলে অর্থনীতি গতি পাবে—এটা নিয়ম। মেট্রোরেলও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রাজধানীর মানুষের শ্রমঘণ্টা বাঁচবে। তবে সম্ভাবনার পুরোটা এখনই বাস্তবে পাওয়া যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত এতদিনের নির্মাণকাজের জন্য যে অসুবিধা হচ্ছিল তা দূর হয়েছে। ফলে ওই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য এখন স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে পাবে। পাশাপাশি কিছু ট্যুরিস্ট মেট্রোরেলকে কেন্দ্র করে আসবে।’

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, ‘মেট্রোরেলের কারণে অর্থনীতিতে এর প্রথম প্রভাব হচ্ছে মানুষের সময় বাঁচবে। এ ছাড়া আরও বহুমুখী লাভ রয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমবে। সামগ্রিকভাবে জ্বালানি সাশ্রয় হবে। ম্যাস ট্রানজিটের কারণে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো অনেক সুবিধা পায়। বাংলাদেশও এখন সে সুবিধা পাবে। আমার বিশ্বাস মেট্রোরেল দেশের অর্থনীতিতে গভীরভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর কার্যক্রম শহরে যত বাড়ানো যাবে, তত বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে।’

মেট্রোরেলের বড় একটি অংশ রাজধানীর বেগম রোকেয়া স্মরণিজুড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যস্ততম এই এলাকায় ২ থেকে ৩ বছর ধরে সব ধরনের ব্যবসা খারাপ সময় পার করেছে। কারণ মেট্রোরেল নির্মাণকাজের জন্য সড়কে ব্যাপক যানজট হয়েছে। এতে ক্রেতারা এ এলাকা এড়িয়ে গেছেন। অন্যদিকে অনেকে সড়কের দুই পাশের এলাকা থেকে বাসা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে গেছেন। তবে মেট্রোরেল চালুর পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই আবার এ এলাকায় ফিরে আসছেন। নতুন করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক কাজে ভাড়ার চাহিদা বেড়েছে। বেড়েছে ভাড়াও।

সম্প্রতি শেষ হওয়া আবাসন খাতের বৃহত্তম আয়োজন রিহ্যাব মেলা শেষে আয়োজকরা জানিয়েছেন, মিরপুর থেকে উত্তরার যেসব এলাকা দিয়ে মেট্রোরেল গেছে, তার আশপাশে ফ্ল্যাট ও প্লটের চাহিদা বেড়েছে। এতে নতুন করে সম্ভাবনা দেখতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে শেওড়াপাড়া থেকে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগ নতুন করে সাজানো হচ্ছে। রং করা হচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জাতেও আসছে পরিবর্তন। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা মনে করছেন আগামী দিনে তাদের ব্যবসা ভালো। এরকমই একটি প্রতিষ্ঠান কাজীপাড়ার আহমেদ ফার্নিচার। এর মালিক আফজাল আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘গত দু-তিন বছর ক্রেতা পাওয়া যায়নি। মানুষের ইচ্ছা থাকলেও আসতে পারেনি। এখন সড়কসহ সামগ্রিক পরিবেশের উন্নতি হয়েছে। ফলে আশা করা হচ্ছে ক্রেতারা আসবেন।’

মিরপুর-১০ এলাকার বেনারসি পল্লির ব্যবসায়ীরাও মেট্রোরেল চালুর ফলে উচ্ছ্বসিত। শাড়ির বাজার হিসেবে বেনারসি পল্লির খ্যাতি থাকলেও দু-তিন বছর ধরে সেখানকার ব্যবসায়ীরা ছিলেন হতাশ। মেট্রোরেল চালুর ফলে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। তারা আশা করছেন, নতুন করে ক্রেতাদের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠবে বেনারসি পল্লি।

মোট জিডিপির ৩৭ শতাংশ আসে ঢাকা থেকে। যানজট কমে মানুষের শ্রমঘণ্টা বাড়লে উৎপাদনশীলতাও বাড়বে। ফলে মেট্রোরেলের কারণে জিডিপিতে রাজধানীর অবদান আরও বাড়বে। দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগও আকৃষ্ট করবে। বিশ্বব্যাংকের এক জরিপে বলা হয়েছে, যানজটের কারণে ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এক লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হলে বছরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। মেট্রোরেল চালুর ফলে এই ক্ষতি অনেকটাই কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল দেশের জিডিপিতে ২ শতাংশ বাড়তি প্রবৃদ্ধি যোগ করবে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে জিডিপিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়তি প্রবৃদ্ধি হবে। কিন্তু মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেল আলাদা করে জিডিপিতে কতটা ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে কোনো সমীক্ষা হয়নি। অবশ্য পরিকল্পনা কমিশন মনে করে, এ দুটো প্রকল্পের মাধ্যমে জিডিপিতে বাড়তি এক শতাংশ যোগ হবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here