• সোমবার ০৬ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

শতবর্ষে সাহসিকতার প্রতীক পদ্মা সেতু

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে বিশ্বব্যাংক ইতিহাস সৃষ্টির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বাংলাদেশ বঞ্চিত হয়নি। পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য সাহসের প্রতীক। তিনি তাঁর সত্তা দিয়ে এটা বিবেচনা করেছেন এবং সেতু নির্মাণ করে তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। তাই নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু কেবল একটি সেতু নয়; এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে লাখো-কোটি মানুষের ভালবাসা, আবেগ, গৌরব। বাঙালী জাতি যে কোন প্রতিকূলতা, পরিবেশে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেটার প্রমাণ পদ্মা সেতু। এই সেতু বাঙালীর আর্থিক সামর্থ্যরে পরিচয় বহন করে। এই সেতু বিজয়, উন্নয়ন, ঘুরে দাঁড়ানো এবং হার না মানার প্রতীক। এটা শতবর্ষে আমাদের সাহসিকতার প্রতীক হয়ে থাকবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে পদ্মা সেতু নিয়ে জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘শেখ হাসিনার পদ্মা সেতু নির্মাণ : বিশ্ব ব্যবস্থায় বাংলাদেশ তথা উন্নয়নশীল দেশসমূহের এক যুগান্তকারী বিজয়’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটি। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আলোচনা করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. সামসুল আলম, অর্থনীতিবিদ ও পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ, পানিসম্পদ ও জলবায়ুবিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু প্রমুখ।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু কেবল ইট-পাথরের তৈরি নয়; এর সঙ্গে মিশে আছে লাখো কোটি মানুষের ভালবাসা, আবেগ ও গৌরব। বাঙালী জাতি যে কোন প্রতিকূলতা, পরিবেশে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেটার প্রমাণ পদ্মা সেতু। এই সেতু বিজয়, উন্নয়ন, ঘুরে দাঁড়ানো ও হার না মানার প্রতীক। তিনি বলেন, বাণিজ্য, আঞ্চলিক বাণিজ্য, দক্ষিণ এশিয়ায় সংযোগ, শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠা, কৃষি সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে পদ্মা সেতু।

পদ্মা সেতু বাঙালীর আত্মমর্যাদা এবং আত্মনির্ভরতার এক অনন্য সোপান উল্লেখ করে স্পীকার আরও বলেন, দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ও বহু কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতু আজ আর স্বপ্ন নয়। খরস্রোতা পদ্মার বুকে ৬ দশমিক ১৫ মাইল দীর্ঘ নির্মিত সেতু আজ বাস্তবতা। এটা আমাদের অহঙ্কার। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র ও বিশ্বব্যাংকের ভিত্তিহীন অভিযোগ উপেক্ষা করে, বাধা-বিপত্তি জয় করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের বহুমাত্রিক ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। পদ্মা সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতার কথা তুলে ধরে শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেও দেশের মানুষের সহযোগিতার কথা বলেন। আর তিনি মানুষের শক্তিতে বিশ্বাস করেন।

সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, আমার ধারণা- এ ধরনের জটিল রিভার্স সিস্টেমে আগামী এক থেকে দেড়শ’ বছরের মধ্যে এমন সেতু আর হবে না। আমি বলব- বিশ্বব্যাংক এ ধরনের একটি বড় ও ইতিহাস প্রসিদ্ধমতো প্রকল্প থেকে নিজেদের বঞ্চিত করেছে। আমরা বঞ্চিত হইনি। আমাদের একটি লাভ হয়েছে। সেটি হলো- এ ধরনের সেতু করার সক্ষমতা সম্পর্কে বিশ্বাস, আমাদের যে আত্মবিশ্বাস এবং সরকার, রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই প্রতীকী অর্জন যেটা সেটা টাকাপয়সার চেয়ে অনেক বেশি।

ড. মসিউর রহমান বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া হলো- এর কল্যাণ দেশের ও দেশের মানুষের কাছে কতখানি ব্যাপকভাবে ছড়াবে। অর্থনীতিবিদরা একটি সূত্রের কথা বলেন। সেটা হলো- যেখানে স্বার্থগোষ্ঠীর সংখ্যা কম ও তারা সহজে দলবদ্ধ হতে পারে। সরকারের সিদ্ধান্তে তাদের প্রভাব বেশি। এখানে দক্ষিণবঙ্গ বা দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার যারা তারা কিন্তু ওইভাবে দলবদ্ধ নয়। এই দলবদ্ধ ওইভাবে নয়, কিন্তু তাদের চাহিদা বা কল্যাণ অত্যন্ত প্রয়োজন এবং রাষ্ট্রের সেদিকে নজর দেয়া দরকার, সেদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি। এটা কোন সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণের চরম একটা রাজনৈতিক সাহস ও সুবিচারের লক্ষণ। এটা আমরা সব সময় সব জায়গায় সব নেতার মধ্যে দেখি না।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. সামসুল আলম বলেন, পদ্মা সেতু অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য সাহসের প্রতীক। এটা শতবর্ষে সাহসিকতার প্রতীক হয়ে থাকবে। পদ্মা সেতু বাঙালী জাতির প্রথম তার আর্থিক সামর্থ্যরে পরিচয় বহন করে। তিনি আরও বলেন, পাকিপন্থী এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল সুশীল সমাজ, অর্থনীতিবিদরা ব্যাপকভাবে সোচ্চার হয়েছিল। তারা বলেছিল- এই সেতু করা সম্ভব নয়! এটি শুরু করতে পারবে কিন্তু শেষ হবে না! এটা ভেঙ্গে পড়বে! এটা করতে গেলে সব উন্নয়ন কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আপনারা সবাই জানেন, পদ্মা সেতুর কাজ তো বন্ধ হয়ইনি বরং আমরা এই সময়ে আরও ১০টি মেগা প্রকল্প নিয়েছি।

অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক সত্তা দিয়ে এটা বিবেচনা করেছেন এবং সেতু নির্মাণ করে তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি তাঁর প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা দিয়ে দেশের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার মধ্য দিয়ে আমাদের অগ্রগতি আরও সুদৃঢ় ও ত্বরান্বিত করেছেন।

সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ড. গোলাম রহমান বলেন, পদ্মা সেতু আন্তর্জাতিক ও বিশ্ব ব্যাংকের কূটনীতিক চালে পড়েছিল। দুর্নীতির নামে বাংলাদেশকে যেভাবে অপমান, অপদস্থ করার অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছিল; সে অবস্থা থেকে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এই সেতু করেছেন।

সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য পানিসম্পদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পদ্মা সেতুর কোয়ালিটির বিষয়ে কোন ধরনের কমপ্রোমাইজ করা হয়নি। আমি পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের সঙ্গে শুরু থেকেই ছিলাম, আমি বিষয়টা জানি। এ সময় ড. আইনুন নিশাত পদ্মা সেতুর নির্মাণের প্রযুক্তিগত দিক, নদীর গতি-প্রকৃতির কোন্ দিক বিবেচনা করা হয়েছে, তা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে সেতু কোন্ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে তাও বিস্তারিত জানান এই পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ।

Place your advertisement here
Place your advertisement here