• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

জুয়ার টাকা জোগাতে নিজেই হাত-পা বেঁধে অপহরণ নাটক সাজান বাবু

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবির বাবু। বেশকিছু দিন ধরে অনলাইন জুয়া আসক্ত হয়ে পড়ে বাবু। এতে অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন বাবু। ঋণ থেকে মুক্তি পেতে নিজেকে নিয়ে একটি অপহরণ নাটক সাজানোর ফন্দি করেন। সেই কথা সেই কাজ। এরপর কাতার প্রবাসী বাবাকে ইমোতে কল করে জানান, তাকে অপহরণ করা হয়েছে। দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে তাকে ছেড়ে দেবে অপহরণকারীরা। বিশ্বাস অর্জনে নিজের হাত-পা বেঁধে বাবাকে ইমোতে দেখান। আদরের ছেলেকে বাঁচাতে প্রবাস থেকে অপহরণকারীদের জন্য ৫০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেন বাবা। ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে।

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সৈয়দপুর থানায় এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) কল্লোল কুমার দত্ত। এ সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম ও তদন্ত কর্মকর্তা এস এম রাসেল পারভেজ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, সাজানো অপহরণের আটদিন পর মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) ওই শিক্ষার্থীকে নিজ বাড়ি সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হুগলীপাড়া থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

ব্রিফিংয়ে পুলিশ জানায়, সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হুগলীপাড়ার তহিদুল ইসলাম ও হামিদা বেগম দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। এরমধ্যে হুমায়ুর কবির বাবু সবার ছোট। চার বছর আগে হুমায়ুর কবির বাবুর বাবার সঙ্গে তার মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তার মা হামিদা বেগম প্রায় দুই বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে স্বামীর সঙ্গে ঢাকার আশুলিয়ায় থাকেন। আর বাবুর বাবা তহিদুল ইসলাম কাতার প্রবাসী। তিনি দীর্ঘ প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে কাতারে থাকেন। বাবুর বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে।

হুমায়ুন কবির বাবু সৎ মায়ের সঙ্গে বাড়িতে থাকেন। বর্তমানে তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার পাশাপাশি বেশকিছু দিন ধরে অনলাইন জুয়া আসক্ত হয়ে পড়েন বাবু। এতে অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে সে। ঋণ থেকে মুক্তি পেতে সে নিজেকে নিয়ে একটি অপহরণের নাটক সাজানোর ফন্দি আটেন। ঘটনার দিন গত ২৩ জানুয়ারি সে তার সৎ মা স্বপ্না বেগম এবং চাচি মালেকা বেগমকে নিয়ে কেনাকাটার করার উদ্দেশ্যে সৈয়দপুর প্লাজায় আসেন। এরপর সে সেখানে তাদের বসিয়ে রেখে গা ঢাকা দেয়।

বাবু স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানান, হুমায়ুন কবির বাবু সৎ মা ও চাচিকে সৈয়দপুর প্লাজায় বসিয়ে রেখে অটোরিকশা করে নীলফামারীতে চলে যান। সেখানে রেলওয়ে স্টেশনে হাবিবুর রহমান নামে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর তাকে সে তার অপহরণ পরিকল্পনার কথা খুলে বলেন। সেখানে তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয় অপহরণ নাটক সাজিয়ে যে টাকা পয়সা আসবে তারা দুইজনে সমান ভাগে ভাগ করে নেবে। যেই কথা সেই কাজ। এরপর হাবিবুব শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবির বাবুকে তার নীলফামারী সদরের চাঁদের হাট এলাকার বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতে তাকে বন্ধু হিসেবে পরিচয় নিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেন।

পরে হুমায়ুন কবির বাবু তার কাতার প্রবাসী বাবাকে মোবাইল ফোনের ইমোতে কল করে জানান, তাকে অপহরণ করা হয়েছে। দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে তাকে ছেড়ে দেবে অপহরণকারীরা। এতে বাবার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে জন্য স্থানীয় একটি স্কুল ঘরের মধ্যে বাবু নিজের হাত-পা বেঁধে বাবাকে ইমোতে দেখান। এতে বাবুর বাবা ঘটনার বিষয়ে বিশ্বাস আসে। অন্যদিকে, বাবু মা হামিদা বেগম ছেলে নিখোঁজের বিষয়ে থানায় একটি জিডি করেন। পরবর্তীতে বাবু বাবার কাছ থেকে তাকে অপহরণের বিষয়ে জানতে পেরে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। কিন্তু বাবুর বাবা তাঁর আদরের ছেলেকে পেতে অপহরণকারীদের জন্য ৫০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেন।

থানায় মামলা দায়ের পর থেকে সৈয়দপুর থানা পুলিশ ঘটনাটি নিয়ে তদন্তে নামেন। পরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হন, বাবু বাবার পাঠানো টাকা নীলফামারীতে ক্যাশ আউট করা হয়েছে। এরপর তাকে উদ্ধারের তদন্তে নামে পুলিশ। আর পুলিশি তৎপরতা বিষয়টি আঁচ করতে পেরে অপহরণ নাটকের হোতা হুমায়ুন কবির বাবু গত মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) অসুস্থতার ভান করে অটোরিকশা করে নিজ বাড়িতে পৌঁছান। বাড়িতে ফিরে আসার খবর পেয়ে বুধবার(৩১ জানুয়ারি) সৈয়দপুর থানা পুলিশ বাবুকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের সে নিজে অপহরণ নাটক সাজানোর ঘটনাটি স্বীকার করেন।

সৈয়দপুর থানার ওসি শাহা আলম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনার বিষয়ে হুমায়ুন কবির বাবুকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়ার পর তাকে তার বাবা-মায়ের জিম্মায় দিয়ে দেওয়া হয়।

Place your advertisement here
Place your advertisement here