• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

স্বাস্থ্যখাতে ৩ বছরে ৭০ হাজার জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

গত ১০ বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, গত ৩ বছরে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি করতে নতুন করে প্রায় ৭০ হাজার জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২০ হাজার চিকিৎসক, ৩০ হাজার নার্স এবং ২০ হাজার জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এদিন সকালে জাপানের নাগাসাকি ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন মেমোরিয়া হলে জাপানের নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘ইন্টারন্যাশনাল সিম্পোসিয়াম, এডভান্সিং দ্যা গ্লোবাল হেলথ এজেন্ডা ফ্রম নাগাসাকি টু দ্য ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়ক এক সম্মেলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রী এ তথ্য জানান। এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রায় ৫০০টি উপজেলায় ২৫ শয্যা থেকে বর্তমানে ৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল করা হয়েছে। প্রতিটি জেলা হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। ২২টি ৫০০ শয্যার আধুনিক মানের চিকিৎসা ইনস্টিটিউট, ১০০০ শয্যার ৩৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ৫টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। এসব হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল দেশের ৮ বিভাগের স্বাস্থ্যসেবার মান পরিদর্শন করেছেন।

বাংলাদেশের হাসপাতাল সেবার মান বৃদ্ধি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৪ হাজার ২৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে ৩২ রকমের ওষুধ দেয়া হয়। এই ক্লিনিকগুলোতে  প্রায় ৫০ হাজার লোকবল স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে ৪ হাজার ৬৫০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের বিনামূল্যে ওষুধ, পরামর্শ ও প্রসূতি সেবা সেবা দিচ্ছে। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের ফলে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, দেশের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক বিবাহিত নারী গড়ে ৬.৯ জন সন্তান জন্ম দিতেন। বর্তমানে প্রতিটি নারী গড়ে ২ জন সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। এতে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে ভারসাম্য রক্ষা পেয়েছে। বাংলাদেশ শিশু মৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করায় জাতিসংঘের কাছ থেকে ২০১০ সালে এমডিজি পুরস্কার লাভ করে।

টিকা প্রদানে বাংলাদেশের সফলতা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৮৪ সালে টিকাদানে বাংলাদেশের সফলতা ছিল মাত্র ২ ভাগের নিচে। ২০২২ সালে সেটি দাঁড়িয়েছে ৯২ শতাংশে। বর্তমানে দেশের ৯২ শতাংশ ১২-১৩ বছর বয়সী শিশু যক্ষ্মা, হাম, পোলিও, টিটেনাস, হেপাটাইটিস রোগ মুক্ত।  

এসময় দেশে ওষুধ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে ৩.১ বিলিয়ন ডলার মুল্যের ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে। এসব ওষুধ দেশের ৯৭ ভাগ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মূূদ্রার আয় হচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বে ৫ম স্থান ও দক্ষিণ এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, করোনায় এত বড় সাফল্যের মুলে হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের সময়োপযোগী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ। স্বল্প সময়ে অধিক জনবল কাজে লাগিয়ে দেশের লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। এই টিকার প্রায় ৩৭ কোটি ডোজ মানুষকে বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ করোনায় কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। করোনায় দেশের হাসপাতালগুলোতে থাকা মাত্র ৫৭৮টি আইসিইউ বেড  থেকে বর্তমানে ২০০০টি আইসিইউ বেডে উন্নীত করা হয়েছে। মাত্র ১টি সেন্ট্রাল লাইন অক্সিজেন প্লান্ট থেকে দেশে এখন ১২০টি সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন করা হয়েছে। এতে করে করোনার দুর্যোগকালীন থেকে এখন পর্যন্ত কোন হাসপাতালেই অক্সিজেন সংকট দেখা দেয় নাই। এছাড়া, আগামীতে দেশে ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজের আওতায় গোটা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৮০ শতাংশ অসংক্রমক রোগের কারণে মারা যাচ্ছে। এজন্য সংক্রমক রোগের পাশাপাশি অসংক্রমক রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটাতে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনীতা অনেক বেশি। বাংলাদেশের মত একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশের স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে জাপানসহ, বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জোড়ালো ভূমিকা রাখবে বলে সম্মলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

সম্মেলনে বাংলাদেশসহ কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, জাপানসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঊর্দ্ধতন প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম অংশ নেন। এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্যসেবায় তাদের নিজ দেশ ও সংস্থার কার্যক্রম তুলে ধরেন। 

সম্মলনে সুচনা বক্তব্য রাখেন নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট কহ্নো এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালোনা করেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি নাইওকো ইয়ামামতো। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন স্কুল অব হাইজেনি অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এর পক্ষে অধ্যাপক কারা হানসন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here