• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

ডিসির দফতরে জালিয়াতি করে কর্মচারী নিয়োগ

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

লালমনিরহাটে ডিসির দফতরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত ৬ই নভেম্বর ওই দফতর থেকে অ্যাকাউন্টেন্ট ক্লার্ক পদে চারজনকে চূড়ান্ত করে নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলেও পরদিনই আবার তাদের একজনকে বাদ দিয়ে নতুন আরেকজনের নাম স্থানান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাদ পড়া ওই চাকরি প্রার্থী রংপুর বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

গত ২ নভেম্বর লালমনিরহাট ডিসির দফতরে সার্টমুদ্রাক্ষরিক কাম কমিউটার অপারেটর পদে চারজন,অফিস সহকারী কাম কমিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পাঁচজন, সার্টিফিকেট সহকারী পদে চারজন,অ্যাকাউন্টেট ক্লার্ক পদে চারজনসহ মোট ১৯টি শূন্য পদের জন্য লিখিত পরীক্ষা হয়। পরিক্ষায় উত্তীর্ণ ১২২ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৬ নভেম্বর ৯২৪ রোলধারী জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চাপারহাট উত্তর বত্রিশ হাজারী গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে সোহেল রানা, ৮৯১ রোলধারী সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামের নুর মোহাম্মাদের ছেলে আক্কাস আলী, ৫৫৯ রোলধারী আদিতমারী উপজেলাধীন দূর্গাপুর দক্ষিণ গোবধা গ্রামের সুধীর চন্দ্রের ছেলে সঞ্জয় কুমার বর্মণ ও ৫৩০ রোলধারী কালীগঞ্জ উপজেলার দলগ্রামের শ্রীখাতা গ্রামের জতীন্দ্রনাথ বর্মার মেয়ে দীপালি রানীকে একাউন্টেন্ট ক্লার্ক পদে চূড়ান্ত করা হয়।

নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব নাঈম হাসান খাঁন স্বাক্ষরিত একটি ফলাফল ডিসির ফেসবুক আইডিতে প্রকাশ হয়।এরপর ৭ নভেম্বর পোস্টটি মুছে ফেলে রহস্যজনকভাবে ৫৫৯ রোলধারী সঞ্জয় কুমার বর্মণকে বাদ দিয়ে ৯১৬ রোলধারী উত্তর দলগ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে সুরুজ্জামানের নাম স্থানান্তর করে আরেকটি নতুন ফল প্রকাশ করা হয়।এতে হতবাক বনে যায় বাদ পড়া প্রার্থী সঞ্জয় কুমার বর্মণ।

সঞ্জয় কুমার লালমনিরহাট প্রতিনিধিকে বলেন,বিষয়টি দেখার পর আমি লালমনিরহাট ডিসি মোহাম্মদ শফিউল আরিফ স্যারের সঙ্গে দেখা করলে তিনি নানা টাল বাহনা করতে থাকেন। প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন,পরে আমি নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব নাঈম হাসান খাঁন স্বাক্ষরিত কাগজ দেখালে ভুলবসতঃ এমন হয়েছে বলে জানান তিনি। আমি আমার চাকরি ফেরত চাইলে তিনি আমাকে আউট সোর্সিং এ কাজ দেয়ার প্রলোভন দেন। এরপর রংপুর বিভাগীয় কমিশনার স্যারের সঙ্গে লিখিত অভিযোগ নিয়ে দেখা করেছিলাম, তিনিও আমাকে ডিসি স্যারের মত একই কথা বলেছেন এবং এক মাসের মধ্যে সরকারি চাকরি দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতেও নিষেধ করেছেন তিনি। সঞ্জয় মনে করেন,কর্মকর্তাদের অনিয়ম,দুর্নীতির আর অর্থের কাছে তার মেধা ব্যর্থ হয়েছে,বেআইনীভাবে তাকে অবমূল্যায়ণ করা হয়েছে।

সঞ্জয় কুমারের বৃদ্ধা মা কান্না লালমনিরহাট প্রতিনিধিকে বলেন,তিন ছ্যাওয়া কামলাখাটি খায়। প্রাইভেট পড়েয়া কষ্ট করি কোনো রকম এই ছ্যাওয়াটা ন্যাকাপড়া করচে। চাকরির কতা শুনি মনগটা খুশি হচিল।এ শোনোং ডিচি দুর্নীতি করি আরেকজনক চাকুরি দেচে। হামার পাইসা না জন্য কোটের আশ্রয় নিবার পাবার নাকচি ন্যা তবে প্রধানমন্ত্রী এইয়ার বিচার করবে।ছ্যাওয়াটার চাকরি ফেরত দেবে। হামরা আবেদন করমো।

এদিকে চুড়ান্ত ফল প্রকাশের একদিন পর নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ৯১৬ রোলধারী উত্তর দলগ্রামের সুরুজ্জামানের যোগযোগ করা হলে তিনি অস্থায়ী ভাবে যোগদান পত্র প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি তার।

হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি কাশিম বাজার এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে মোমিনুল ইসলাম লিটনের বাড়িতে গেলে তার মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়নি। লিটনের মা জানায়, তার ছেলে মন্ত্রণালয়ের সচিবের গাড়ির চালক এবং রুহুল আমিনদের সাথে তাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে। তবে কোন মন্ত্রণালয়ের সচিবের গাড়ি চালক তা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে ডিসি মোহাম্মদ শফিউল আরিফ লালমনিরহাট প্রতিনিধিকে বলেন-নিয়োগে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই।লেখার ভুলের কারণে প্রথমে এমন বিভ্রাট ঘটেছিলো, পরে সংশোধন করা হয়েছে। কেউ পরিক্ষা না দিয়েই যদি চাকরি নিয়ে থাকে, তা অবশ্যই তদন্ত করে নিয়োগ বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ডের সদস্য সচিব নাঈম হাসান খান মুঠোফোনে ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ হয়েছে। উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা করবেন। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এমন রহস্যজনক কাজকে লেখার ভুল হিসেবে মানতে নারাজ জেলার সচেতন মহল। ন্যাক্কারজনক এ জালিয়াতির সুষ্ঠু তদন্ত করে মেধার মূল্যায়ন ও বঞ্চিত প্রার্থী সঞ্জয় কুমার বর্মণকে চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

Place your advertisement here
Place your advertisement here