• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

Find us in facebook

বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার হয়েছে বাংলা ভাষায়

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

মানবশিশু দুনিয়ায় ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার মা-বাবা আত্মীয়স্বজন, পাড়া-পড়শির থেকে যে ভাষা শেখে তা-ই তার মাতৃভাষা। মাতৃভাষা মানুষের মনোভাব প্রকাশের সর্বোত্তম মাধ্যম। মাতৃভাষার মাধ্যমে সহজে মানুষকে যা বোঝানো যায় তা অন্য ভাষায় বোঝানো যায় না। ভাষা মানুষের জন্য আল্লাহ-প্রদত্ত এক উপহার। আদিমানব হজরত আদম (আ.)-কে আল্লাহ জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। জ্ঞান শিক্ষার মাধ্যম হল ভাষা। মানুষ যেমন আল্লাহর সৃষ্টি তেমন ভাষার স্রষ্টাও আল্লাহ। 

ইরশাদ হচ্ছে, ‘রহমান, তিনি কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন, তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে শিক্ষা দিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে। সূর্য ও চন্দ্র নির্ধারিত হিসাব অনুযায়ী রয়েছে।’ সুরা আর রাহমান আয়াত ১-৫। ইসলামে দীন প্রচারের ক্ষেত্রে মাতৃভাষা ব্যবহারের প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইসলামী  মূল্যবোধের শিক্ষা মানুষকে বিভিন্ন ভাষা চর্চায় দারুণভাবে উৎসাহিত করেছে ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। বিদ্যাশিক্ষা ও জ্ঞানার্জন করতে হলে মানুষের অবশ্যই প্রয়োজনীয় ভাষাজ্ঞান থাকতে হবে। 

রসুল (সা.) তাঁর উম্মতদের জ্ঞানার্জনে প্রয়োজনে চীন যেতেও বলেছেন। জ্ঞানী-গুণী হতে হলে মাতৃভাষায় দক্ষ হতে হবে। আল কোরআনের বাণী থেকে মাতৃভাষা চর্চার প্রত্যক্ষ ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আল্লাহ মানব জাতিকে সৎপথ প্রদর্শনের জন্য ইসলাম প্রচার ও প্রসারে দুনিয়ায় অসংখ্য নবী-রসুল পাঠিয়েছেন। আল্লাহর অমিয় বাণী মানুষের কাছে সহজভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পৃথিবীতে ১ লাখ বা ২ লাখ ২৪ হাজার নবী-রসুল এসেছেন। আল্লাহ যুগে যুগে যেসব অঞ্চলে নবী-রসুল পাঠিয়েছেন তাঁদের মাতৃভাষায় আসমানি কিতাব নাজিল করে তাদের ভাষাকে সম্মানিত করেছেন। 
মহান আল্লাহর বাণী সহজ, সুন্দর, সাবলীল ও পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য সংশ্লিষ্ট জাতির ভাষাভাষী করে নবী-রসুলদের পাঠানো সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি প্রত্যেক রসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য, এরপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ সুরা ইবরাহিম আয়াত ৪। 

প্রতি জাতির  মানুষের কাছে তাদের মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। ইসলামের দৃষ্টিতে সব ভাষাই সমানভাবে মর্যাদাসম্পন্ন এবং তা মহান আল্লাহর দান। আল্লাহর কাছে সব ভাষাই গ্রহণযোগ্য। আল্লাহ সব ভাষাভাষী মানুষের কথা শোনেন ও বোঝেন। মাতৃভাষার মাধ্যমে যত সহজে মানুষকে কোনো বিষয় বোঝানো যায় তা অন্য কোনো ভাষায় তত সহজে যায় না। 

প্রধান চারটি আসমানি কিতাবের মধ্যে হজরত মুসা (আ)-এর প্রতি ‘তাওরাত’ নাজিল হয়েছে হিব্রু ভাষায়, হজরত ঈসা (আ)-এর প্রতি ‘ইনজিল’ সুরিয়ানি ভাষায়, হজরত দাউদ (আ)-এর প্রতি ‘জবুর’ ইউনানি ভাষায় এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি আল কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল হয়। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাতৃভাষা ছিল আরবি। তাঁর কাছে মানব জাতির দিশারি ও সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে সর্বশেষ আসমানি কিতাব ‘আল কোরআন’ আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়। তাঁর ওপর মাতৃভাষায় কোরআন নাজিল হওয়া প্রসঙ্গে আল্লাহ ঘোষণা করছেন, ‘আমি কোরআনকে তোমার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে তুমি তা দিয়ে মুত্তাকীদের সুসংবাদ দিতে পার এবং কলহকারী সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার।’ সুরা মারিয়াম আয়াত ৯৭।

ইসলামের দাওয়াত সফলভাবে পৌঁছাতে হলে প্রতি জনপদের জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় দীনের প্রচার চালানো দরকার। প্রয়োজনীয় ভাষাজ্ঞান না থাকলে সফলভাবে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো সহজ নয়। আল্লাহ কোরআনে হিকমাহ তথা বুদ্ধিমত্তা ও উত্তম বাক্য দ্বারা দীনের প্রচারের আহ্বান জানিয়ে ইরশাদ করেন, ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে হিকমত (বিজ্ঞানসম্মত) ও সদুপদেশ দ্বারা আহ্বান কর এবং তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে আলোচনা কর।’ সুরা আন নাহল আয়াত ১২৫।

ইসলামের প্রচার ও প্রসারে মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন জাতি ও গোত্রের ভাষা বোঝা ও তাদের ভাষায় ইসলামের দাওয়াত প্রদানে রসুল (সা.) অন্যান্য জাতির মাতৃভাষা শেখার জন্য সাহাবায়ে কিরামকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। সাহাবির মধ্যে অনেকেই আরবি ভাষা ছাড়াও অন্যান্য ভাষা জানতেন এবং সেসব ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। পরবর্তী যুগেও দাওয়াতি মিশনের লোকেরা পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে গিয়েছেন তাদের মাতৃভাষায় ইসলামের বিধিবিধান ও নিয়মকানুন শিক্ষা দিয়েছেন।

বাংলাদেশেও ইসলাম প্রচারিত হয়েছে বাংলা ভাষায়। সাহাবিদের আমলে এ দেশে ইসলামের আলো প্রজ্বালিত হয়। তাঁরা এ দেশে ইসলাম প্রচারে এ দেশের মানুষের ভাষা আয়ত্ত করার মেহনত করেছিলেন। মোট কথা ইসলামের প্রচার-প্রসারের অন্যতম একটি মাধ্যম হল মাতৃভাষা। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও মাতৃভাষার অনেক গুরুত্ব। ইসলাম প্রচারে মাতৃভাষার কোনো বিকল্প নেই।

লেখক : এম এ মান্নান
ইসলামবিষয়ক গবেষক।

Place your advertisement here
Place your advertisement here