• রোববার ১২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৯ ১৪৩১

  • || ০৩ জ্বিলকদ ১৪৪৫

Find us in facebook

৩০ টাকা পুঁজির কবুতর খামারে চলে নুরুজ্জামানের সংসার

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

দরিদ্র পরিবারের সন্তান নুরুজ্জামান (৪০)। টিউশনি করে টাকা জমিয়ে ১৯৯০ সালে শখের বসে মাত্র ৩০ টাকায় একজোড়া কবুতর কিনেছিলেন। সেই থেকে তিনি ধীরে ধীরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ৮০ জোড়া কবুতরের মালিক হয়েছেন। এই কবুতর পালন করেই নুরুজ্জামান এখন অনেকটা স্বাবলম্বী।

নুরুজ্জামানের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের ফরিদ আলী ছেলে। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষক বাবার সন্তান নুরুজ্জামান। অভাবের কারণে এইচএসসি পাস করার পর ইতি টানেন লেখাপড়ায়। ছোটবেলা থেকেই পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা থেকে টিউশনি করিয়ে মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে বাজার থেকে এক জোড়া কবুতর কিনে প্রতিপালন শুরু করেছিলেন। আস্তে আস্তে তার কবুতরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৮০ জোড়ায় দাঁড়িয়েছে। কবুতর পালন ও বিক্রির টাকা দিয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত তিনি সংসারের হাল ধরে আছেন।

বর্তমানে তার পারিবারিক খামারে বিভিন্ন জাতের কবুতর রয়েছে। তার পারিবারিক খামারে থাকা এক জোড়া কবুতর ৫শ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা মূল্যের রয়েছে। এদিকে সবমিলিয়ে কবুতর পালনে তার প্রতি মাসে আয় এখন ১৫-১৮ হাজার টাকা। তার বাড়িতে কবুতরগুলোর জন্য সারিবদ্ধভাবে কাঠ ও বাঁশের চারকোনা লম্বা ঘর তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই থাকে কবুতরগুলো। 

প্রতিবেশী একরামুল হক বলেন, নুরুজ্জামান প্রায় ২০-২৫ বছর যাবত কবুতর পালন করছে। সে যখন হাতে খাবার নিয়ে কবুতরগুলোর সামনে হাজির হয়, তখন সবগুলো কবুতর আহারের জন্য তার হাতে, শরীরে ও মাথায় উঠে বসে। এই দৃশ্য দেখতে ভালো লাগে। তার বাবা বৃদ্ধ কাজ করতে পারে না। কবুতর পালন ও টিউশনি করেই দীর্ঘ দিন ধরে সংসার চালাচ্ছেন নুরুজ্জামান।

এ বিষয়ে নুরুজ্জামান বলেন, বর্তমানে আমার পারিবারিক খামারে দশ প্রজাতির ৮০ জোড়া কবুতর রয়েছে। যেমন, দেশি, বাগদাদি হোমার, কালো সিরাজি, গিরিবাজ, লাল ম্যাগপাই,কালো ম্যাগপাই, কাগজি চিনা ইত্যাদি। সবমিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ কেজি খাবারের প্রয়োজন হয়। যার মূল্য প্রায় ৫শ টাকা। বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমি ৯০ সালের দিকে মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে একজোড়া কবুতর কিনেছিলাম। আস্তে আস্তে যখন কবুতরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেল তখন উন্নত জাতের বিভিন্ন কবুতর সংগ্রহ করি। এভাবেই আমার পথ চলা। আমি আজ পর্যন্ত কবুতর পালনের ওপর কোনো প্রশিক্ষণ নেইনি। যদি প্রাণিসম্পদ অফিস আমার একটি প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করতো আমার মনে হয় আরও বড় পরিসরে খামারটি করতে পারতাম।

নুরুজ্জামানের বাবা ফরিদ আলী বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমার ছেলে কোনো রকমে টিউশনি করিয়ে এইচএসসি পাস করেছে। অভাবের কারণে আর লেখাপড়া করতে পারেনি। সে টিউশনির টাকা দিয়ে একজোড়া কবুতর কিনে পালতে থাকে। বর্তমানে আমার বাড়িতে ৮০ জোড়া কবুতর। আমি তো কাজ করতে পারি না। কবুতর বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চালায়। প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে যদি আমার ছেলেকে সহযোগিতা করা হতো তাহলে অনেক ভালো হতো।

ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরিফুর রহমানন (কনক) বলেন, আমাদের প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে আমরা এই উদ্যোক্তাকে সার্বিক সহযোগিতা করব যাতে তিনি আরও বড় পরিসরে করতে পারেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) ডা. মো. ইউনুছ আলী বলেন, সরকারিভাবে কবুতর খাবারের পরিসংখ্যান নেই। তবে যারা পারিবারিকভাবে কবুতরের খামার করেন। তারা আমাদের অফিসে এলে আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here