• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

Find us in facebook

সন্তানের চেয়ে মুক্তিযোদ্ধা বাবার বয়স কম, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

আকবর আলী জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯২৮ সালের ১১ আগস্ট। তিন সন্তানের বাবা ৪৩ বছর বয়সে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত পেয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। কিন্তু ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম লেখা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১০ মে। এতেই বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বঞ্চিত হন। এরপরই অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যান ৯৪ বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী।

জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর ইউনিয়নের ধুলার কুটি গ্রামের মৃত বাবন শেখের পুত্র মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী। জাতীয় পরিচয়পত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর চেয়ে তার ছেলেকে বড় দেখানো হয়েছে।  

যখন আকবর আলী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তখন তিনি তিন সন্তানের জনক ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা ১৭নং বইয়ে ৪০১৪৭ ক্রমিক, লাল মুক্তিবার্তায়-৩১৬০৪০৫২০ ক্রমিক এবং ২০০৫ সালের ২১ মে বেসামরিক গেজেট ৩৭৯১ পৃষ্ঠায় গেজেট ১০৬৪নং-এ তার নাম রয়েছে। তিনি ২০০৮ সালের ১ অক্টোবর হতে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসছিলেন। ২০২০ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য অনলাইনে পূরণ করতে গিয়ে তিনি জন্ম তারিখের ত্রুটির কারণে ভাতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। জন্মসনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৯২৮ সালের ১১ আগস্ট। কিন্তু ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্রে তার বয়স দেখানো হয় ১৯৭১ সালের ১০ মে। অথচ তার বড় ছেলে আমির হোসেনকে তার থেকে বড় দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ বাবার থেকে ছেলে বড়। জাতীয় পরিচয়পত্রে বড় ছেলে আমির হোসেনের বয়স দেখানো হয় ১৯৬০ সালের ২ মার্চ। জাতীয় পরিচয়পত্রের এমন ত্রুটির কারণে প্রায় দু’বছর থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ রয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা হযরত আলী বলেন, আমিসহ আকবর আলী, লস্কর আলী জেঠাতো ভাই। তিনজনই যুদ্ধ করেছি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়েছি। হঠাৎ ভোটার আইডির সমস্যা হওয়ায় আকবর আলীর ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর স্ত্রী সুফিয়া বেওয়া বলেন, ‘ভাতা বন্ধ হবার পর থেকে উনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসা ঠিকমত করতে পারলাম না। অসুস্থতার কারণে উনি মইরাই গেল। আমরা অফিস-আদালতে অনেক দৌঁড়াইছি। কেউ সারা দেয় নাই।’

বড় ছেলে আমির হোসেন বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র করার সময় বাবার বয়স দিছে ১৯৭১ সাল। আমাদের ভাই-বোনদের অনেকের বয়স তুলে দিছে ১৯৫০, ১৯৬০ এমন অনেক সমস্যা করছে। এ জন্ম তারিখ ঠিক করার জন্য যেখানেই গেছি খালি ট্যাহা-ট্যাহা করে। তাও আমগো বাবার জন্ম তারিখ ঠিক হয় নাই। আমরা ব্যর্থ হয়া গেছি গা।’

নাতি রঞ্জু বলেন, ‘২০০৮ সালে আমার দাদি-দাদা এনআইডি করতে যায়। সেখানে তাদের বয়স ভুল তোলা হয়েছে। দাদার বয়স ঠিক করতে আমরা ঢাকা গেছি। সেখানে বলা হয় আমরা পারব না এটা রংপুর থেকে ঠিক করবে। রংপুরে গেছি সেখানে আমরা পাত্তাই পাই না। বহু টাকা পয়সা খরচ করেও কোনো লাভ হয়নি। দাদা মারাই গেল।’

সাবেক ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার জামাল উদ্দিন বলেন, মরহুম আকবর আলী প্রকৃত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার বয়স ঠিক করার জন্য আমরা বহু চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেন হইল না তার সঠিক কারণ আমরা জানি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি সঠিক তদন্ত করে মৃত আকবর আলীর ভাতা পুনরায় চালু করে দিতে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন অফিসার জাহাঙ্গীর আলম রাকিব বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর জন্ম তারিখ সংশোধনের আবেদনটি তা বিবেচনা করে 'গ' ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত। এরই মধ্যে এ আবেদনটি নিষ্পত্তি করার জন্য প্রয়োজনীয় তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন সাবমিট করা হয়েছে।

রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন বলেন, আমি ঢাকায় মিটিং শেষ করে রংপুর ফিরছি। বিষয়টি আমার নজরে আসলে আমি যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবো।

Place your advertisement here
Place your advertisement here