• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে নিত্যনতুন পাখনা যুক্ত হচ্ছে

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৭ নভেম্বর ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

নিত্যনতুন পাখনা যুক্ত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে। ঢাকার অদূর কালিয়াকৈরে অবস্থিত এই ডিজিটাল সিটির মূল ফটক থেকে অনুমান করবার জো নেই ভেতরের কর্মযজ্ঞ।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে শুধু প্রধান ফটকটি দৃশ্যমান, আর সেটি অনেকদিন আগে নির্মিত হওয়ায় কিছুটা মলিন আভা ধরেছে। কিন্তু যতোই ভেতরে যাবেন ততোই চমকে যাওয়ার মতো অনেক রসদ চোখে পড়বে। মূল ফটক গলিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে প্রথমেই হাতের বামে পড়বে প্রশাসনিক ভবন। এই ভবনের একটি ফ্লোরে শোভা পাচ্ছে সারি সারি ডায়ালাইসিস মেশিন। যা কিনা এতোদিন কাড়ি কাড়ি ডলার খরচ করে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। প্রত্যেকটি মেশিনে সাশ্রয় হচ্ছে প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। উদ্যোক্তারা আশা করছেন এতে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস খরচ অনেকাংশে কমে আসবে।

এই ভবন থেকে সোয়া কিলোমিটার দূরত্বে ব্লক ৪। এতে শোভা পাচ্ছে দেশের আরেকটি গর্ব করার মতো প্রতিষ্ঠান। ডিজিটাল বাংলাদেশের অপরিহার্য অনুসঙ্গ ডাটা সেন্টার। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার নামের এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের সপ্তমতম ডাটা সেন্টার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। এরইমধ্যে নানান প্রতিষ্ঠান থেকে খ্যাতি কুড়াতেও সক্ষম হয়েছে। গুগল, অ্যামাজনের মতো জায়ান্টরাও তাদের ডাটা সংরক্ষণের আগ্রহ দেখিয়েছে। এতোদিন যারা সিঙ্গাপুর কিংবা অন্য কোনো দেশকে পছন্দ করতো ভৌগলিক কারণে তারাও দেন দরবার শুরু করেছেন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ যেমন শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, মর্যাদা ও নিরাপত্তার অনুসঙ্গ, তেমনি ডাটা সেন্টারটিও শুধু একটি প্রতিষ্ঠান বিবেচনা করা যাবে না। একদিকে বছরে ৩৫৩ কোটি টাকা সাশ্রয় করছে অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ডাটার সুরক্ষা নিশ্চিত করছে।
৩ নম্বর সেক্টরের নয়তলা সুরম্য ভবনটিতে ১১টি কোম্পানির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কোনো কারখানায় কাজে মগ্ন প্রকৌশলীরা, আবার কোথাও বিপুল উদ্যোমে চলছে ভবন নির্মাণের কাজ।

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের সভায় কালিয়াকৈরে ২৩১ একর জমিতে হাইটেক পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। পরে আয়তন বাড়িয়ে ৩৫৫ একর করা হয়। ১৯৯৯ সালে কাজ শুরু করলেও সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারে ডুবে যায় সম্ভাবনাময় হাই-টেক পার্কটি। দীর্ঘদিন থমকে থাকার পর ফের শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এলে নতুন উদ্যোমে শুরু হয় পথচলা।

পার্কে উচ্চগতির ইন্টারনেট, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ, যোগাযোগের জন্য শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কম দামে পাওয়া যাচ্ছে নিষ্কণ্টক জমি কিংবা স্পেস। এখানে সরাসরি ১ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় প্রকল্পটি পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মডেলে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সিটিতে উৎপাদিত পণ্যে ১০ বছর কর অবকাশসহ থাকছে নানাবিধ সুবিধা। উৎপাদিত সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার পণ্য রফতানিতে উৎপাদকরা পাবেন ১০ শতাংশ প্রণোদনা।

বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে ইতিমধ্যে ৭০টি প্রতিষ্ঠানকে ১২৭ একর ২৪ শতাংশ জমি ও ২ লাখ ৯৮ হাজার ৪৯৭ বর্গফুট স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১২টি কোম্পানি কাজ করছে। পার্কে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানে ৯০ শতাংশ হবে ডিজিটাল পণ্য উৎপাদক। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পাথেয়ও বঙ্গবন্ধু হাই টেক সিটিতে ১ লাখ কর্মসংস্থানের আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৪৬০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) এএনএম শফিকুল ইসলাম।

নোকিয়ার মতো মোবাইল খাতের জায়ান্টরা এখানে আস্থা রেখেছে। বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে সফটওয়্যার কোম্পানি ক্যাটাগরিতে দেড় একর জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে রবি। মোবাইল অপারেটরটি সেখানে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক্সকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন একর জমি। প্রতিষ্ঠানটি ইলেক্ট্রনিক্স, হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার উৎপাদনে বিনিয়োগ করবে ১০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া বরাদ্দ পাওয়া ৯টি কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে ২০ দশমিক ৫০ একর জমি। প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করবে ১৪০ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার।

অরিক্স বায়ো-টেক লিমিটেড প্লাজমা উৎপাদন করবে। বর্তমানে বাংলাদেশের ২ হাজার কোটি টাকার প্লাজমা আমদানি করতে হয়। শুরুতে কোম্পানিটি দেশের চাহিদার ২৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ করতে চায়, পরবর্তী বছরগুলোতে ২৫ শতাংশ হারে বাড়বে উৎপাদন।

পার্কটিতে তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের ডায়ালাইসিস মেশিন। সোনারবাংলা ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ৮০ শতাংশ এসেম্বেল করলেও ভবিষ্যতে নিজেরাই উৎপাদনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে। ভবিষ্যতে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানি করতে চায় কোম্পানিটি। আমেরিকান একটি কোম্পানি কারখানাটিকে এশীয় অঞ্চলে সরবরাহের হাব হিসেবে গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সোনারবাংলা ফাউন্ডেশনের সহকারি পরিচালক (অপরেশন) প্রকৌশলী আল ইমরান সরকার।

বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটির পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) এএনএম শফিকুল ইসলাম বলেন, হাই-টেক পার্কটির বিশেষত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এলাকার পরিবেশকে অক্ষুণ্ন রেখে শিল্পায়ন করা হচ্ছে। অতীতে অঞ্চলটি যেমন ছিল খুব একটা পরিবর্তন করা হচ্ছে না। থাকছে ২০ শতাংশ সবুজায়ন, জলাশয়গুলোকে আরও উন্নত করা হচ্ছে। করোনার কারণে কিছুটা পিছিয়ে গেলেও এখন পুরোদমে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

পিপিপি মডেলে পরিচালিত পার্কটির জায়গার সামিট টেকনোপলিস ও ফাইবার অ্যাট হোম উন্নয়নের দায়িত্ব পেয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি এরইমধ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে প্রকল্পটি বিশাল অবদান রাখবে। সিলিক্যান ভ্যালির আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে জাতির জনকের নামে গড়া এই টেক সিটিকে। সহজ রেল যোগাযোগের পাশাপাশি, ঢাকার সঙ্গে রয়েছে একাধিক বিকল্প সড়ক। গাজীপুর সিটি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গেও রয়েছে উন্নত যোগাযোগ। পদ্মা সেতু চালু হলে নদীবন্দর মোংলার সঙ্গে সড়কপথে যোগসূত্র স্থাপন করবে। সারাদেশে এমন ১০৩টি হাই-টেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করতে চায় সরকার। যার মাধ্যমে রূপকল্প ২০৪১ কে ছুঁয়ে ফেলতে চায় উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ।

Place your advertisement here
Place your advertisement here