• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

Find us in facebook

বিনামূল্যে ঘর পাচ্ছেন ৫৭০ বীরাঙ্গনা      

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে সমানভাবে অবদান রেখেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। সর্বশেষ গেজেট অনুযায়ী ৪৫৪ জন বীরাঙ্গনা রয়েছেন দেশে, যারা বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন। তবে এর বাইরেও আরও অনেকেই রয়েছেন যাদের বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি প্রক্রিয়াধীন। তাদেরসহ ৫৭০ জন বীরাঙ্গনাকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাড়ি নির্মাণ করে দিতে যাচ্ছে সরকার। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের অংশ হিসেবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বীরাঙ্গনাদের এই প্রাপ্তি তাদের প্রতি যথাযথ প্রদর্শনের অন্যতম উদাহরণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে শুধু বাড়ি নির্মাণ করে দিলেই হবে না বরং জীবনমান উন্নয়নে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান তাদের।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাত থেকে শত্রুমুক্ত হয় বাংলাদেশ। সরকারী হিসাবে যুদ্ধের সময় দেশের ২ থেকে ৪ লাখ নিরীহ নারী পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা ধর্ষিত হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধের সময়ে ধর্ষিত নারীদের বীরাঙ্গনা খেতাব প্রদান করেন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত নারীদের যথাযোগ্য সম্মান এবং মর্যাদা’ দেয়ার জন্য আহ্বান জানান এবং বীরাঙ্গনাদের নিজের মেয়ে হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এদের অনেকে আত্মহত্যা করেন, অনেকে দেশ ছেড়ে বাইরে চলে যান। অনেক বীরাঙ্গনা অপ্রশিক্ষিত ধাত্রীদের মাধ্যমে গর্ভপাত করানোর সময় বরণ করে নেন মৃত্যুকে। এর ফলে সরকার ‘সেবা সদন’ প্রতিষ্ঠা করে তাদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় মহিলা পুনর্বাসন সংঘ প্রতিষ্ঠা করা হয় যাতে এই নিপীড়িত নারীদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড, দ্য ইন্টারন্যাশনাল এ্যাবরশন রিসার্চ এ্যান্ড ট্রেইনিং সেন্টার ও ক্যাথলিক চার্চের সহায়তায় কারিগরি এবং মানবিক সমর্থন প্রদান করা যায়। পরবর্তীতে সরকার তাদের জন্য ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের আয়োজন করে এবং তাদের বিয়ে দেয়ার জন্য একটি ক্যাম্পেন চালু করে। এর ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ বীরাঙ্গনাদের আড়াল করতে চাইছে বলে অভিযোগ ওঠে। বীরাঙ্গনাদের পরিবার এবং সমাজ থেকে বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে নারী অধিকার কর্মীরা বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানান।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে বীরাঙ্গনাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করার জন্য একটি পিটিশন পেশ করা হয়। ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি উচ্চ আদালত বীরাঙ্গনাদের মর্যাদাকে কেন বর্ধিত করা হবে না এ ব্যাপারে সরকারের কাছে জানতে চায়। পরে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা দেয়ার প্রস্তাব পাস করে। ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার প্রথমবারের মতো ৪৩ জন বীরাঙ্গনাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ওই সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, এখন থেকে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই সমান সুযোগ-সুবিধা লাভ করবেন।

পরবর্তীতে একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনী ও তার দোসরদের হাতে নির্যাতিত আরও ১৬ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৭৩তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২১ সালের ৬ জুন গেজেট প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর ফলে ২০১৫ সালের ১২ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৪৫৪ জন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পান। এর বাইরেও ১১৬ জনকে এবার বিনামূল্যে বাড়ি উপহার দিতে যাচ্ছে সরকার। যা ১৫ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা দেবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের দেশের স্বাধীনতায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন অবদান রয়েছে সমানভাবে অবদান রেখেছেন বীরাঙ্গনারাও। যারা ইতোমধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আর্থিক কষ্টে জীবন-যাপন করছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় নানা সময় নানাভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সহযোগিতা। এরই ধারাবাহিকতায় এবার আমরা ৫৭০ জন বীরাঙ্গনাকে ঘর উপহার দিতে চলেছি। সব পরিকল্পনা সম্পন্ন। ১৫ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই ঘোষণা দেব। এতে কিছুটা হলেও বীরাঙ্গনাদের উপকার হবে বলে আমি মনে করি। বীরাঙ্গনারা নিজ নিজ এলাকায়ই এ বাড়ি উপহার পাবেন।

সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সমাজের নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, বর্তমান সরকারের আমলেই আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রাপ্য সম্মান পেয়েছেন। সরকার তাদের কল্যাণে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে বীরাঙ্গনাদের জন্য নেয়া নতুন এই উদ্যোগ সত্যি অত্যন্ত আনন্দের। ইতোমধ্যে অনেক বীরাঙ্গনা মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকে আবার দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। যারা বেঁচে আছেন তারা রোগে-শোকে কাতর। দেরিতে হলেও এমন সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে সেজন্য সরকারকে ধন্যবাদ।

সরকারকে ধন্যবাদ জানান সংসদ সদস্য এ্যারোমা দত্তও। তিনি বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এ স্বাধীনতা। এই অর্জনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা যেমন মাঠে যুদ্ধ করেছেন অস্ত্র হাতে তেমনি আমাদের মা-বোনেরা পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন। অনেকে আবার যুদ্ধও করেছেন সরাসরি ময়দানে। তবে সবচেয়ে বেশি ত্যাগ করেছেন যাদের সম্ভ্রমহানি হয়েছে পাক হানাদারদের হাতে। দেরিতে হলেও সরকার সেই বীরাঙ্গনাদের বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব দিয়েছে। এবার তাদের বসবাসের জন্য ঘর দিচ্ছে। সত্যি অনেক আনন্দের খবর এটি।

এর আগে ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সময়কালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করে ‘ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্প’। যেই প্রকল্পের আওতায় ২শ’ সাতাশ কোটি ৯৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ভূমিহীন ও অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধারের জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়।
কে/

Place your advertisement here
Place your advertisement here