• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

ইতেকাফে বসার সময় ও বিধি-বিধান

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ এপ্রিল ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

আজ আরবি হিজরি সন ১৪৪৫ এর ২০ রমজান মোতাবেক ইফতারের আগেই মসজিদে অবস্থান নিয়ে ইতেকাফে বসবে রোজাদার ইতেকাফের নিয়তকারীরা।

বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফে বসা। তিনি রমজানের শেষ ১০ দিন এ ইবাদত করতেন। এ দশকে লাইলাতুল কদর পাওয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইতেকাফ অনেক জরুরি বিষয়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম নিয়মিত ইতেকাফ করতেন।

ইতেকাফ কী?

ইতেকাফ শব্দটি আরবি। এর অর্থ হচ্ছে- অবস্থান করা, স্থির থাকা বা আবদ্ধ থাকা। ইসলামি শরিয়েতের পরিভাষায় রমজানের শেষ দশক তথা ২০ রমজান ইফতারের আগেই মসজিদ কিংবা ঘরের নির্ধারিত নির্জন স্থানে অবস্থান গ্রহণ করা। দুনিয়ার সব প্রয়োজন থেকে মুক্ত হয়ে শুধু আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেকে আত্মনিয়োগ করাই হলো ইতেকাফ।

ইতিকাফে বসবেন যে কারণে

মহান আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুহাম্মাদির জন্য দান করেছেন মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর। যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যা রমজানের শেষ দশকের যে কোনো এক বেজোড় রাতে সংঘঠিত হয়। ইতেকাফকারীদের অধিকাংশেরই এ রাতটি পাওয়ার সৌভাগ্য হয়ে থাকে। কারণ আগের সব নবী-রাসূলগণ তাদের উম্মতগণ শ’ কিংবা হাজার বছর হায়াত (জীবন) পেয়েছেন। তারা বছরের পর বছর আল্লাহ ইবাদাত-বন্দেগিতে কাটাতেন। সে হিসেবে আল্লাহ তাআলা আমাদের অল্প আয়ু বা জীবনকাল দিয়েছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য এটি বড় এক নেয়ামত।

এ কারণেই মুসলিম উম্মাহ রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর পাওয়ার আশায় ইতেকাফে বসেন। ইতেকাফে বসা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যখন তোমরা মসজিদ ইতেকাফে বসো তখন স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করো না। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা; এর ধারে কাছেও যেও না’।

ইতিকাফে বসার অর্থই হচ্ছে, রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে অবস্থান করা এবং এই দিনগুলোকে আল্লাহর জিকিরের জন্য নির্দিষ্ট করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার জীবনে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করে গেছেন। (বুখারি, মুসলিম)

ইতেকাফের বসার নিয়ম

(১) ২০ রমজান সূর্যাস্তের আগে অর্থাৎ ইফতারের আগেই ইতেকাফের নিয়তে মসজিদে উপস্থিত হওয়া আবশ্যক।

(২) ইতেকাফের জন্য নিয়ত করা আবশ্যক। এক সঙ্গে ১০ দিনের জন্য নিয়ত না করলে সুন্নত ইতেকাফ আদায় হবে না, বরং তা নফলে পরিণত হবে।

(৩) মাসনুন ইতেকাফের নিয়ত করলে অবশ্যই তা পূর্ণ করা আবশ্যক। ওজর ছাড়া তা ছেড়ে দেওয়া বৈধ নয়।

(৪) ইতেকাফকারীর জন্য ইতেকাফ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘আর যতক্ষণ তোমরা ইতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সঙ্গে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেওয়া সীমানা’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৭) এমনকি স্ত্রীকে চুমু খাওয়া, আলিঙ্গন করাও বৈধ নয়।

(৫) মাসনুন ইতেকাফ শুরু করার পর কোনো ব্যক্তির যদি দু’একদিন ছুটে যায়, তখন ছুটে যাওয়া দিনের ইতেকাফ পরে কাজা করে নিতে হবে।

(৬) পারিশ্রমিক বা ইফতার-সেহরির বিনিময়ে ইতেকাফ করা ও করানো কোনোটিই বৈধ নয়।

(৭) ইতেকাফকালীন সময়ে কোরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল করা, দ্বীনি বিষয়াদি আলোচনা করা, নিজে শিক্ষা অর্জন করা এবং অন্যকে শিখানো উত্তম এবং বৈধ।

(৮) ইতেকাফে বসে চুপচাপ থাকাকে ইবাদাত-বন্দেগি মনে করলে সে চুপচাপ থাকা ইতেকাফ মাকরূহ হবে। তবে মুখের গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাকতে চুপ থাকাও অনেক বড় ইবাদাত।

(৯) ইতেকাফের স্থানকে ব্যবসাস্থল বানানো মাকরূহ। ওয়াজিব ইতেকাফ ফাসিদ বা বাতিল হয়ে গেলে তার কাজা আদায় করা ওয়াজিব। ইতেকাফকারী নিজের কারণে ফাসিদ/বাতিল হোক অথবা হায়েজ (ঋতুস্রাব) বা নিফাসের (রক্তস্রাব) কারণে বাতিল হোক। পরবর্তীতে তা আদায় করা ওয়াজিব।

(১০) নারীরা নিজেদের ঘরে ইতেকাফের স্থানকে কাপড় দিয়ে পর্দা টেনে নেবে, যাতে বেগানা পুরুষসহ যে কেউ এলে ইতেকাফের স্থান ত্যাগ করতে না হয়।

ইতেকাফের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

রমজানের ইতেকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। রমজানের বাইরে অন্য সময় ইতেকাফের জন্য রোজা শর্ত নয়। রমজানে শেষ দশ দিন ইতেকাফ করা। ন্যূনতম শেষ ৩ দিন ইতেকাফ করা। রমজানের বাইরে ইতেকাফের নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ নেই।

ইতেকাফ বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত

(১) মুসলমান হওয়া;
(২) জ্ঞানবান হওয়া; প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া ইতেকাফের জন্য শর্ত নয় বরং জ্ঞানবান নাবালেগের জন্যও ইতেকাফ শুদ্ধ হবে।
(৩) জানাবাত (অপবিত্রতা), হায়েজ (ঋতুস্রাব) ও নিফাস থেকে পবিত্র হওয়া।
(৪) নারীদের ইতেকাফের জন্য স্বামীর অনুমতি শর্ত। স্বামী অনুমতি দেওয়ার পর ইতেকাফ থেকে বারণ বা বিরত রাখা যাবে না।

ইতেকাফ কোথায় করবেন

(১) ইতেকাফ এমন মসজিদে করা, যেখানে নামাজের জামাত হয়।
(২) ইতেকাফের জন্য সর্বোত্তম স্থান হলো মসজিদুল হারাম (বাইতুল্লাহ)।
(৩) এরপর মসজিদে নববী (মদিনা)।
(৪) তারপর বাইতুল মুকাদ্দাস (মসজিদে আকসা)।
(৫) যে মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা বেশি হয়।
(৬) যেকোনো জামে মসজিদ।

ইতেকাফে বসার আদব

(১) ইতেকাফ করাকালীন সময়ে ভালো কথা ও কাজ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা। শ্রেষ্ঠ মসজিদকে ইতেকাফের জন্য নির্ধারিত করা।

(২) ইতেকাফ অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন, হাদিস অধ্যয়ন, দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা এবং শিক্ষা দেওয়া। সর্বোপরি দুনিয়াবি কাজ-কর্ম থেকে বিরত থেকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও লাইলাতুল কদর পেতে ইবাদাত-বন্দেগিতে মশগুল থাকাই হলো ইতেকাফের আদব।

ইয়া আল্লাহ! মুসলিম উম্মাহকে সহি-শুদ্ধ ভাবে ইতেকাফ আদায় করার তাওফিক দান করুন। বিশেষ করে লাইলাতুল কদর নসিব করুন এবং এর পরিপূর্ণ ফজিলত দান করুন। আমিন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here