• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

Find us in facebook

প্রিয়নবী (সা.) এর শারীরিক গঠন (পর্ব- ১)

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, বিশ্বমানতার অনুকরণীয় ও অনুসরণযোগ্য আদর্শ।

তাঁকে নিয়ে রচিত হয়েছে হাজারো ছন্দ, কবিতা ও রচনা।

হাদিসে পাকে শুধু তাঁর প্রশংসায় ছন্দ, কবিতা আর গ্রন্থই রচিত হয়নি বরং তাঁর আকার-আকৃতির বর্ণনাও রয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মধ্যে যেমন উত্তম গুণাবলীর সর্বাধিক সমাবেশ ঘটেছিল; তেমনি তার দৈহিক সৌন্দর্য্য ছিল অতুলনীয়।

হাদিসের আলোকে প্রিয়নবী (সা.) এর গঠন সম্পর্কে কয়েকটি হাসিদ তুলে ধরা হলো-

> বিশ্বনবী (সা.) উচ্চতা:

হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব দীর্ঘ (লম্বা) ছিলেন না; আবার খাটোও ছিলেন না। তিনি ধবধবে সাদা আবার বাদামি বর্ণেরও ছিলেন না। তাঁর চুল একেবারে কোকড়ানো ছিল না আবার একদম সোজাও ছিল না।

৪০ বছর বয়সে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নবুয়ত দান করেন। এরপর তিনি মক্কায় ১০ বছর এবং মদিনায় ১০ বছর কাটান। আল্লাহ তায়ালা ৬০ বছর বয়সে তাকে ওফাত দান করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর মাথা ও দাড়ির ২০টি চুলও সাদা ছিল না।’ (বুখারি, মুসলিম, মুয়াত্তা মালেক, ইবনে মাজাহ)

যদিও হাদিসে প্রিয়নবী (সা.) এর হায়াতে জিন্দেগি ৬০ বছর উল্লেখ করা হয়েছে, মূলত তিনি ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন এবং মক্কায় ১৩ বছর এবং মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করেছিলেন।

> প্রিয়নবী (সা.) এর বর্ণ:

হজরত আনাস ইবনে মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যমাকৃতির ছিলেন। বেশি লম্বা বা বেশি খাঁটোও ছিলেন না। তার দেহ ছিল খুবই আকর্ষণীয়। তাঁর চুল খুব কোকড়ানো কিংবা একেবারেই সোজাও ছিল না। তিনি ছিলেন গৌরবর্ণের। পথ চলার সময় তিনি সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে চলতেন।’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা, শরহুস সিন্না)

> বিশ্বনবী (সা.) এর আকৃতি:

হজরত বারা ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যমাকৃতির ছিলেন। তাঁর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী অংশ ছিল তুলনামূলক প্রশস্ত। তাঁর ঘন চুলগুলো কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল। তাঁর দেহে লাল লুঙ্গি ও লাল চাদর শোভা পেত। আমি তাঁর তুলনায় সুদর্শন কাউকে দেখিনি।’ (বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ) হাদিসে উল্লেখিত লাল রং বলতে লাল বর্ণের ডোরাকাটা অনুজ্জ্বল কাপড়কে বুঝানো হয়েছে।

> প্রিয়নবী (সা.) এর কাঁধের বর্ণনা:

হজরত বারা ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুল বিশিষ্ট লাল চাদর ও লাল লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে সুদর্শন কাউকে দেখিনি। তার কেশগুচ্ছু ছিল কাঁধ বরাবর। তার দু’কাধের মধ্যবর্তী স্থান অন্যদের তুলনায় কিছুটা প্রশস্ত ছিল। তিনি অধিক খাটো কিংবা অধিক দীর্ঘাকৃতির ছিলেন না।’ (মুসলিম মুসনাদ আহমাদ)

> বিশ্বনবী (সা.) হাত-পা-তালু ও আঙ্গুলসমূহের বর্ণনা:

হজরত আলি ইবনে আবু তালিব রাদিয়াল্লাহর আনুহু বর্ণনা করেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি দীর্ঘ এবং বেশি খাটো ছিলেন না। তাঁর উভয় হাত ও পায়ের তালু এবং আঙুলসমূহ ছিল মাংসল।

তাঁর মাথা ছিল কিছুটা বড় এবং হাত ও পায়ের জোড়াগুলো ছিল মোটা। বুক থেকে নাভি পর্যন্ত পশমের একটি সরু রেখা প্রলম্বিত ছিল। (তিনি) যখন পথ চলতেন মনে হতো যেন কোনা উঁচু স্থান থেকে নিচে অবতরণ করছেন।

বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর আগে কিংবা পরে আমি তাঁর মতো (অনুপম আকর্ষনীয়) আর কাউকে দেখিনি।’ (মুসনাদে আহমদ, মুসতাদরেকে হামেক, ইবনে হিব্বান)

> প্রিয়নবী (সা.) মুখ-চোখ ও গোড়ালির বর্ণনা:

হজরত জাবির ইবনে সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ ছিল প্রশস্ত। চোখের শুভ্রতার মাঝে কিছু লালিমা ছিল। পায়ের গোড়ালি স্বল্প মাংসল ছিল।

শুভা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘ আমি সিমাক রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকে বললাম, ‘জলিউল ফাহমি’ কী? তিনি বললেন, বড় মুখগহ্বর বিশিষ্ট।

আমি আবার বললাম, আশকালুল আইন কী? তিনি বললেন, ডাগর চোখ বিশিষ্ট। আমি বললমা, মানহুসুল আক্বিব কী? তিনি বললেন, চিকন গোড়ালী বিশিষ্ট।

> বিশ্বনবী (সা.) এর তুলনা:

হজরত জাবির ইবনে সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি একবার পূর্ণিমার রাতের স্নিগ্ধ আলোতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাল চাদর ও লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় দেখলাম।

তখন আমি একবার তার দিকে ও একবার চাঁদের দিকে তাকাতে থাকলাম। মনে হলো তিনি আমার কাছে পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও অধিকতর চমৎকার।’ (মুসতাদরেকে হাকেম, মিশকাত)

অন্য বর্ণনায় হজরত আবু ইসহাক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘একবার বারা ইবনে আজেবকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা কি তরবারির ন্যায় ছিল। তিনি বললেন, না বরং তিনি ছিলেন চাঁদের মতো।’ (বুখারি, মুসনাদে আহমদ, দারেমি, ইবনে হিব্বান)

> প্রিয়নবী (সা.) এর শুভ্রতার বর্ণনা:

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুভ্রতায় ছিলেন রৌপ্যের ন্যায় এবং তাঁর চুলগুলো ছিল কিছুটা কোকড়ানো।’ (জামেউস সগির, সিলসিলা)

> প্রিয়নবী (সা.) এর সাদৃশ্যতা:

হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ বর্ণনা করেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার কাছে নবিগণকে পেশ করা হয়। মুসা আলাইহিস সালামের মধ্যে বিভিন্ন লোকের সাদৃশ্য বিদ্যমান ছিল। তিনি যেন শানুয়াহ গোত্রের লোক। আমি ঈসা ইবনে মরিয়মকে উরওয়া ইবনে মাসঊদের সাদৃশ্যপূর্ণ দেখতে পাই।

অতঃপর আমি হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে দেখতে পাই এবং তাঁকে পাই তোমাদের সঙ্গীর সঙ্গে সর্বাধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। তোমাদের সঙ্গী বলে তিনি নিজেকে বুঝিয়েছেন। আর জিবরিলকে হজরত দাহিয়াতুল কালবি এর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ দেখতে পাই। (মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, ইবনে হিব্বান, মিশকাত)

পরিশেষে… হজরত আবু তুফায়েল রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি। তবে তাঁকে যারা দেখেছেন তাঁদের মধ্যে আমি ছাড়া কেউ ভূপৃষ্ঠে বেঁচে নেই। (বর্ণনাকারী বললেন) আমি বললাম আপনি আমার কাছে তাঁর বিবরণ পেশ করুন। তিনি বললেন, প্রিয়নবী ছিলেন, শুভ্রকায় ও লাবণ্যময় সুসামঞ্জস্যপূর্ণ।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, ইবনে হিব্বান, মিশকাত)

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকৃতিগত বর্ণনায় আশেকে রাসূল তাঁকে ফিরে খোঁজে অন্তর দিয়ে। কামনা করে স্বপ্নযোগে প্রিয়নবী (সা.) একান্ত দিদার। যে দিদারে তৃপ্ত হবে নবী প্রেমিকদের মন।

মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মাদির অন্তরে তাঁর জেয়ারত লাভের স্পৃহাকে বৃদ্ধি করে দিন। আল্লাহুম্মা আমিন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here