• বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

  • || ০৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

Find us in facebook

তিস্তা মহাপরিকল্পনা: আশার আলো দেখছে তিস্তা পাড়ের মানুষ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

অবেশেষে আশার আলোর সন্ধান পেতে যাচ্ছে রংপুরের তিস্তা নদীপাড়ের মানুষ। সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবনা পাওয়ার পর তিস্তা নদীর দুই তীর পরিদর্শন করে ফান্ডিংয়ের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করেছে চীন। দ্রুত এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলে ফান্ডিংয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন দেশটির ঢাকাস্থ চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

গতকাল রোববার (৯ অক্টোবর) বিকেলে রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুরে শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু এলাকায় নদীর দুই পাড় পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ চীনা রাষ্ট্রদূতের কাছে ছয় দফা দাবি সংবলিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত এবং আন্দোলন-সংগ্রামের উপস্থাপন করেন সচিত্র পত্র।

জীবন-জীবিকা ও প্রকৃতি বাঁচাতে নদীপাড়ের মানুষ প্রথমে বিচ্ছিন্নভাবে এবং পরে দুই দশক ধরে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে তিস্তা চুক্তি সই, বিজ্ঞান সম্মতভাবে নদী খনন, দুই তীর সংরক্ষণ, শাখা-উপ-শাখা ও প্রশাখা নদীর সঙ্গে তিস্তার পূর্বেকার সংযোগ স্থাপনসহ ছয় দফা দাবিতে নজিরবিহীন আন্দোলন করেছে। সংগঠনটির ব্যানারে দুই পাড়ের ২১৬ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী মানবববন্ধন, স্তব্ধ আয়োজন, কনভেনশন, উঠান বৈঠক, চর বৈঠক, নৌকা সমাবেশ, বাজার সমাবেশ, প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এক লাখ মানুষের গণস্বাক্ষর প্রদান, ভার্চুয়াল বৈঠকসহ শত-শত কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে পালন করে আসছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।

রংপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, এর প্রেক্ষিতে ২০১৭-২৮ অর্থবছরে তিস্তা নদীর খনন নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি সমীক্ষা করে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা তিস্তা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প নামের এই সমীক্ষা প্রতিবেদনের নিরিখে বাংলাদেশ সরকার অর্থায়নের জন্য চীন সরকারের কাছে সম্প্রতি প্রস্তাবনা দেয়। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিস্তা নদী চুক্তি সই না হওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চাপ বাড়তে থাকে সরকারের ওপর। হঠাৎ প্রকল্পটির বিষয়ে চীনা রাষ্ট্রদূতের আগমনের খবর এলে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা নড়েচড়ে বসেন।

গতকাণ রোববার চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সকাল সাড়ে ৮টায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে এসে সোজা চলে যান দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্প নীলফামারী ডালিয়া এলাকায়। সেখানে তিনিসহ তার সঙ্গে থাকা অভিজ্ঞ নদী বিশেষজ্ঞ দল নদীর দুই পাড় নিবিঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। চীনা রাষ্ট্রদূতের নদী পাড়ে আসার খবর শুনে তিস্তার দুইপাড়ে জড়ো হন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে শতশত মানুষ। 

এদিন বেলা ৩টায় চীনা রাষ্ট্রদূত তিস্তা ব্যারেজ থেকে রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুরে শেখ হাসিনা তিস্তা সেতু এলাকা পরিদর্শনে এলে সেখানে তাকে ফুলেল অভ্যর্থনা জানান পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী ও সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমানের নেতৃত্ব স্ট্যান্ডিং কমিটিসহ নদীপাড়ের মানুষ। এ সময় তারা চীনা রাষ্ট্রদূতের কাছে ভারত কর্তৃক একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে খরা-বন্যা ও ভাঙ্গনে নিঃস্ব হওয়া তিস্তা অববাহিকার জীবন-জীবিকা ও প্রকৃতির বিশাল ক্ষয়ক্ষতির সচিত্র তথ্য-উপাত্ত এবং বিজ্ঞান সম্মত ভাবে তিস্তা মহা-পরিকল্পনা সহ ছয় দফা দাবি সংবলিত লিখিত ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেন। এ সময় চীনা রাষ্ট্রদূত তাদের দাবি সংবলিত নথিপত্র গ্রহণ করে সেতুর দুই পাড় ঘুরে ঘুরে দেখেন। পরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে কথা বলেন তিনি।

এ সময় চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, সবেমাত্র আমরা সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থায়নের প্রস্তাবনা পেয়েছি। সমীক্ষা প্রতিবেদন আমাদের হাতে পৌঁছেছে। প্রাথমিকভাবে তিস্তা নদীর দুই তীর সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শেষে সরকারের সাথে আলোচনাসাপেক্ষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

চীনা রাষ্ট্রদূতের এই সফরকে ইতিবাচক ও আশার প্রদীপ হিসেবে দেখছে আন্দোলনকারী তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেন, তিস্তা অববাহিকার জীবন-জীবিকা ও প্রকৃতি বাঁচাতে দীর্ঘ দুই দশক ধরে যুগপৎ আন্দোলন-সংগ্রাম করছে ভুক্তভোগী মানুষ। ২১৬ কিলোমিটারজুড়ে মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর, স্তব্ধতা, কনভেনশন, নৌকা সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের আমরা জাগরিত করেছি। চীনা রাষ্ট্রদূত তিস্তা নদীর পাড়ে এসে তিস্তায় নিঃস্ব মানুষের মধ্যে আশার আলো সঞ্চারিত করেছেন। তিনি বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি রংপুর বিভাগের মানুষের কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হবে।

পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে টানেলের ভিতরে যে অন্ধকার ছিল, চীনা রাষ্ট্রদূতের সফরের মধ্য দিয়ে সেই অন্ধকার আলোর ভেদ করে আলো ছড়া শুরু হলো। এই আলোয় খরা-বন্যা-ভাঙ্গনে নিঃস্ব, অসহায়, উদ্বাস্তু তিস্তা অববাহিকার মানুষদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। এই আলোর বর্তিকা ছড়ানোর কাজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। আমরা চাই দ্রুত অর্থায়ন নিশ্চিতের মাধ্যমে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করার দাবী করছি।পরে তিনি লালমনিরহাটের তিস্তা নদী এলাকা পরিদর্শন করেন। 

চীনা রাষ্ট্রদূত আজ সোমবার গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরে নির্মাণাধীন তৃতীয় তিস্তা সড়ক সেতু এলাকা পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদী নীতিমালা বিপরীতে গিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের তিস্তানদীর উজানে গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে নদীর বাংলাদেশ অংশের ৩৫২ কিলোমিটার অববাহিকাজুড়ে শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার চলছে দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। আবার বর্ষা কিংবা অসময়ে পানি ভাসিয়ে দেয় তিস্তা নদীর দুই কূল। একদিকে পানির জন্য হাহাকার, আবার অন্যদিকে বন্যা আর ভাঙ্গনে তিস্তা অববাহিকার মানুষ এখন নিঃস্ব আর উদ্বাস্তু। 

Place your advertisement here
Place your advertisement here