• বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

কুড়িগ্রামে নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতঘর-জমি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

শুরু হয়েছে বর্ষাকাল। কুড়িগ্রামের নদ-নদী গুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে পানি। এর সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ও বৃষ্টিতে ভরা নদ-নদীর পানির তোড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে এখানকার নদী তীরবর্তি এলাকায়। এরমধ্যে উলিপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহমান ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। কয়েকদিনের নদী ভাঙনে বসতভিটার পাশাপাশি ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এলাকাবাসী ভাঙনে অবশিষ্ট্য বসতভিটা ও ফসলি জমি রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে বাঁশের খুঁটি গেড়ে গাছের ডাল ফেলে পাইলিং দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছেন। কিন্তু চেষ্টা যেন ব্যর্থ হচ্ছে।

ভাঙনের গ্রাস কোনো ক্রমেই যেন থামানো যাচ্ছে না। এই সর্বগ্রাসী ভাঙনে হাত থেকে মানুষজন তড়িঘড়ি করে তার বসতঘর অন্যত্রে সরিয়ে নেয়ার জীবন চেষ্টা এখন সবার মনে। এরই মধ্যে উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত থেতরাই ইউপির দড়ি কিশোরপুর গ্রামে গত এক সপ্তাহে নদীর ভাঙনের প্রায় ৩০টি পরিবার বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিয়েছেন।

ভাঙনের কবলে পড়া ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন নুরুজ্জামান, চাঁদ মিয়া, মঞ্জু মিয়া, ছকিনা, রুহুল আমীন, আম্বিয়া বেওয়া, রফিকুল, আনোয়ারা বেওয়া, মর্জিনা। আতিয়ার, আব্দুর রহমান, মরিচা, বদিয়াল, সফিকুল, সাহেরা বেওয়া, রমনা, রাবেয়া, কাজলীসহ অনেকেই।

এখানে নতুন করে তিস্তা নদীর ভাঙনের হুমকীতে রয়েছে থেতরাই ইউপির দড়ি কিশোরপুর, নগর পাড়া, হোকডাঙ্গা গ্রামের মাস্টারপাড়া, মাঝিপাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, দালালী পাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম। এর আগে এই ইউপির প্রায় ৫০টি বাড়ি-ঘর বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয় রুহুল আমীন বলেন, তিস্তা নদীর ভাঙনে সর্বশান্ত হয়েছি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের কবলে পড়তে হয়। এবারের ভাঙনে বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হওয়া পথে। জীবন বাঁচার তাগিদে তড়িঘড়ি করে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে আনতে হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত আতিয়ার রহমান বলেন, নদী ভাঙনে একে একে সবাই সর্বশান্ত হচ্ছি। বসতভিটাসহ আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে যাওয়া অসহায় আমরা। ঠিকভাবে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা না করা হলে বেঁচে থাকার মাটিটুকু নদীর পানিতে মিশে যাবে।

যুবক সফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরের বর্ষাকাল এলেই ঘুম হারাম হয়। নদীর ভাঙনে বসতভিটা, আবাদি জমিসহ সহায়-সম্বল ধ্বংস হয়। তিস্তা পাড়ের মানুষদের ভাঙন থেকে রক্ষার ব্যবস্থা কেউ করে না।

ক্ষতিগ্রস্ত গৃহবধূ আম্বিয়া, ছকিনা, কাজলীসহ অনেকে জানান, নদী ভাঙনে কারণে সবাই অশান্তিতে আছি। কেউ খবর নিতে আসে না। এই নদী ভাঙন বন্ধের জন্য ব্যবস্থা করার জরুরি দাবি করছি।   

এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত হাতিয়া ইউপির হাতিয়া গ্রাম, নয়াডারা, নীলকন্ঠ গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত ইউপির শতাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বসতভিটা ভেঙে যাওয়ায় তারা বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন।

থেতরাই  ইউপি মেম্বার আব্দুল হালিম সরকার জানান, গত এক সপ্তাহের ভাঙনে থেতরাই ইউপির ৪,৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নদীর পাড়ের অনেক বাড়ি-ঘর ও বসত ভিটার জায়গা জমি তিস্তা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী অনেক দূরে ছিল, হঠাৎ গতি পরিবর্তন করে ভাঙন শুরু হয়।

তিনি আরো জানান, এখানকার নদী ভাঙন রোধ ও ভাঙন কবলিত মানুষদের জন্য ত্রাণ সহায়তা প্রদান জরুরি হয়েছে। বিষয়টি ইউএনওসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণকে অবগত করেছি।

থেতরাই ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, তিস্তা নদীর ভাঙনের বিষয়ে উলিপুর ইউএনওকে অবগত করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছেন। ভাঙন রোধে পাইলিং করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন বলেও জানান ইউপি চেয়ারম্যান।

তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন প্রসঙ্গে উলিপুর ইউএনও আব্দুল কাদের বলেন, স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা নদী ভাঙনের বিষয়টি অবগত করেছেন। এখানকার ভাঙন রোধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণকে বিষয়টি অবগত করেছি।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, এরই মধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।  

Place your advertisement here
Place your advertisement here