• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

Find us in facebook

বেরোবি অধ্যাপক তৌফিকুলের গবেষণা করাই নেশা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

‘শিক্ষকতার বাইরে পুরো সময়টা গবেষণায় ব্যয় করছি। আমার ধ্যানই গবেষণা ও নতুন জ্ঞান তৈরি করা। যেন এ জ্ঞান থেকে উপকৃত হয় আমার দেশ ও সারা বিশ্বের মানুষ।’

কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলাম।

তিনি জানান, বর্তমানে তার গুগল স্কলার সাইটেশন দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪০০তে। সেই শ্রমের ফলাফল হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির সেরা গবেষক হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি।

ড. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, আমার গবেষণার শুরুটা সহজ ছিল না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে জিদ থেকেই গবেষণা শুরু করি। ২০১২ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। তখনো আমার কোনো গবেষণাপত্র ছিল না। চাকরি নিশ্চিত করতে গবেষণার প্রয়োজন হলেও আমার কাছে তা ছিল না। তখন বিপাকে পড়ি। একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কাজ করতে চাইলেও কেউ সঙ্গে নেয়নি। তখন নিজের মধ্যে জিদ তৈরি হলো, গবেষণাকে দেখে ছাড়ব।

তিনি আরো বলেন, এরপর দিন-রাত গবেষণার পেছনে সময় ব্যয় করতে থাকি। অনেক পরিশ্রম করে গবেষণাপত্র তৈরি করে আন্তর্জাতিক জার্নালে পাবলিশ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ব্যর্থ হই। হাই ইম্পার জার্নাল, স্প্রিঞ্জার জার্নালসহ একাধিক জার্নাল থেকেও আমার গবেষণাপত্র বাতিল হতে থাকে। কিন্তু আমিও হাল ছাড়িনি। এভাবে গবেষণাপত্র বাতিল হতে হতে একসময় পাবলিশ করতে সমর্থ হই। 

এরপর একে একে ৫ থেকে ৬টি গবেষণা পেপার পাবলিশ হয়। তখন আমার গবেষণার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। শুরুতে ভালো কোনো জার্নালে আমার গবেষণা প্রকাশিত না হলেও ২-১টি কোয়ালিটি সম্পন্ন গবেষণাপত্র থাকায় চীনের সরকারি স্কলারশিপ পাই। এরপর চীনে গিয়ে দেখি গবেষণার সমুদ্রে এসেছি। সেখানে গবেষণার সুযোগ ও গবেষণার সামগ্রী হাতের নাগালে থাকায় আমিও গবেষণায় মনোযোগী হই এবং গবেষণায় অনুপ্রেরণা পাই। এরপর বিশ্বসেরা জার্নালগুলোতে আমার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হতে থাকে।

ড. তৌফিকুল ইসলাম ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালে যখন পিএইচডি শেষ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসি, তখনও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। কয়েক বছরের পরিশ্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে গবেষণার পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করি। বর্তমানে এ বিভাগের শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও গবেষণায় মনোযোগী হচ্ছেন। আমাদের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, করোনার সময়টা আমার গবেষণার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ ছিল। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের চাপ না থাকায় গবেষণায় পর্যাপ্ত সময় দিতে পেরেছি। তখন আমি চীন, ভারত, সৌদি আরব, ব্রাজিল, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকদের সঙ্গে গ্রুপভিত্তিক কাজ করেছি। দিনে প্রায় ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেছি। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন গবেষকদের সঙ্গে কাজ করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য উৎসাহিত করার পাশাপাশি গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে কাজ করার কথাও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ড. তৌফিকুল ইসলাম চীনের নানজিং তথ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রাণিসম্পদের ওপর জলবায়ুর প্রভাব বিষয়ে গবেষণার জন্য তাকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। বিশ্বসেরা ২ শতাংশ গবেষকদের তালিকায়ও রয়েছে তার নাম। ড. তৌফিকুল ইসলাম ইসলাম সম্প্রতি থাইল্যান্ডের প্রিন্স অব সঙ্কলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট-ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

এছাড়াও গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞান সেক্টরে বিশেষ অবদান রাখার জন্য প্রথমবারের মতো তাকে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। 

Place your advertisement here
Place your advertisement here