• শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ২০ ১৪৩১

  • || ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

কুড়িগ্রামে পাওনা টাকার জন্য গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

পাওনা টাকা আদায়ে এক গৃহবধূকে দুই মাস ধরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। মোবাইল ধারণ করা হয় সেই ধর্ষণের ভিডিও। ঘটনাটি প্রকাশ না করতে দেওয়া হয় হুমকি। এরপর ব্লাকমেইল করে জয়নাল ও শুক্কুর মিলে তাকে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করে। পাশবিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ এই গৃহবধূ শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বাধ্য হয়ে বিষয়টি তিনি তার স্বামীকে জানান। পরে স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে বিচার দিলেও মেলেনি বিচার। এতে লজ্জায় বিষপান করেন স্বামী-স্ত্রীর। এতে স্বামী জাহাঙ্গীর আলম বেঁচে গেলেও মারা যান স্ত্রী আশা খাতুন। এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা সদরের কলেজ পাড়া এলাকায়।

গত ২৪ মে ওই দম্পতি একসঙ্গে বিষপান করেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবশেষে বুধবার (২৯ মে) দুপুরে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়। অভিযুক্তরা হলেন- উপজেলার সদর ইউনিয়নের হলপাড়া গ্রামের আবুসামার ছেলে জয়নাল মিয়া এবং তার সহযোগী কারিগর পাড়ার শুক্কুর কসাই, ডাকাত পাড়ার আলম কসাই ও টাঙ্গাইল পাড়ার সোলেমান।

মৃত্যুর আগে ২২ মে স্থানীয় কয়েকজনের কাছে দেওয়া গৃহবধূর জবানবন্দির একটি অডিও রেকর্ড এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। এতে পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। বর্ণনায় উঠে এসেছে কীভাবে জয়নাল ও সহযোগীরা মাসের পর মাস তাকে ধর্ষণ করেছে।

বর্ণনায় গৃহবধূ বলেছেন, আমার বাবা নেই। মা গৃহকর্মীর কাজে বিদেশে থাকেন। স্বামী টাঙ্গাইলে শ্রমিকের কাজ করেন। স্বামীর ধারের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় জয়নাল গত রমজান মাসের শুরু থেকে ধর্ষণ শুরু করে। পরে তার সহযোগী আলম কসাই, শুক্কুর কসাই ও সোলেমান দিনের পর দিন পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে তাদের নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে বাধ্য হয়ে স্বামীকে বিস্তারিত ঘটনাটি জানাই। পরে স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো বিচার পাইনি।

মৃত্যুর আগে গৃহবধূ আরো জানান, পাওনা টাকার জন্য প্রথমে জয়নাল তাকে নিয়মিত ধর্ষণ করতে থাকে। পরে তার সহযোগী আলম, শুক্কুর ও সোলেমানকে নিয়ে এসে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। মোবাইলে সে ভিডিও ধারণ করে, তা প্রকাশের হুমকি দিয়ে ধর্ষণের ঘটনা কাউকে জানাতে ভয় দেখায়। এরপর নানাভাবে হুমকি দিয়ে জয়নাল ও শুক্কুর বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণ করেছে। তাদের পাশবিক নির্যাতনে বাধ্য হয়ে বিষপান করেন।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, ‘এরপরও জয়নাল আবার ফোন দিয়ে আমার কাছে টাহার (টাকা) চাপ দেয়। আমি বলি কীসের টাহা। টাহার জন্য এতো কিছু। সংসারে অশান্তি। টাহা ফেরত দিলে আমার ইজ্জত ফেরত দিবা। দিনের পর দিন আমারে শেষ করছো। তখন জয়নাল হুমকি দিয়া কয়, টেহা কীভাবে তোলা লাগে দেখমু।’

ওই গৃবধূর স্বামী বলেন, আমি টাঙ্গাইল থাইকা ফিইরা দেখি বউয়ের শরীর ভাইঙ্গা গেছে। আমি জিগাইলে হে খালি কান্দে। পরে সব জানতে পারি। বিচার চাইলে তারা ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়। জয়নাল আমারে মাইরা ফেলার হুমকি দেয়।

কত টাকা ধার নিয়েছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘর করার জন্য আমি ২০ হাজার আর স্ত্রী ২০ হাজার নিয়েছিল। পরে ২০ হাজার পরিশোধ করেছি। বাকি টাকার জন্য এত কিছু ঘটে গেল।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্যসহ স্থানীয়দের কাছে বিচার দিলেও কোনো সমাধান মেলেনি। গত শুক্রবার গৃহবধূ ও তার স্বামী বিষপান করেন। গুরুতর অবস্থায় তাদের রাজিবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে জামালপুর হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু টাকা না থাকায় এই দম্পতি বাড়িতে চলে আসেন। বুধবার বাড়িতেই গৃহবধূর মৃত্যু হয়। পরে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

জানা যায়, ওই দম্পতি বিষপানের পর স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে থানা পুলিশ ভুক্তভোগীদের ২০ হাজার টাকা দেওয়ার বিনিময়ে ঘটনা মীমাংসার করার সিদ্ধান্ত দেয়। জয়নাল ভুক্তভোগীদের চিকিৎসার জন্য ২০ হাজার টাকা দিলেও তা নিতে অস্বীকৃতি জানান ওই দম্পতি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে জয়নাল মিয়ার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাটি গোপন ছিল। আমরা জানতাম না। গৃহবধূর স্বামী একেকবার একেক কথা বলে। বিষ খাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য জয়নাল ২০ হাজার টাকা দিয়েছে।

ধর্ষণের ঘটনা পুলিশকে নিয়ে কীভাবে টাকা দিয়ে মীমাংসার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে এই ওয়ার্ড মেম্বার বলেন, অভিযুক্তরাই মীমাংসার কথা বলেছিল। এখন জয়নাল ও শুক্কুর কোথায় আছে আমার জানা নেই।

রাজিবপুর থানার ওসি আশিকুর রহমান বলেন, ধর্ষণের কোনো অভিযোগ পাইনি। স্বামী-স্ত্রী বিষপান করেছিল। স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। স্বামীর অবস্থা ভালো। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here