• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১২ মে ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

'টেকসই ভবিষ্যতের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি এবং অংশীদারিত্ব'- প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকায় আজ বসছে ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের ষষ্ঠ আসর। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দুই দিনের এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশন এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনে মরিশাসের রাষ্ট্রপতি, মালদ্বীপের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং আনুমানিক আরও ২৫টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিসহ দেড় শতাধিক

প্রতিনিধি অংশ নেবেন। এছাড়া ডি-৮, সার্ক ও বিমসটেকের মহাসচিবসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষাবিদ, পন্ডিত, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীসহ আরও প্রায় ১৫০ জন বিদেশি অতিথি সম্মেলনে যোগ দেবেন। অতিথিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বৃহস্পতিবার ঢাকায় পৌঁছেছেন। তবে সম্মেলনে মিয়ানমারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ভারত মহাসাগরীয় পাঁচটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৬ সালে প্রথম সিঙ্গাপুরে এ সম্মেলন হয়। এরপর ২০১৭ সালে শ্রীলংকা, ২০১৮ সালে ভিয়েতনাম, মালদ্বীপে ২০১৯ এবং ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পঞ্চম সম্মেলন হয়। এক বছর বিরতি দিয়ে এবার ঢাকায় হচ্ছে ষষ্ঠ সম্মেলন।

সম্মেলনের বিষয়ে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াও শুক্রবার চারটি প্রাক-সম্মেলন সেশন ও শনিবার দিনব্যাপী মন্ত্রী পর্যায়ের চারটি থিমেটিক সেশন হবে, যাতে আমন্ত্রিত মন্ত্রী ও মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তারা আশা করছেন এই সম্মেলনের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় অনেক সুপারিশ ও মতামত উঠে আসবে, যা এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সম্মেলন বাংলাদেশে আয়োজন করার মাধ্যমে আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিমন্ডলে ভারত মহাসাগর উপকূলবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব সুদৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমি মনে করি, পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-অর্থনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে ওই সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিশেষ অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুসংহত হবে। বিশ্বের এতগুলো দেশ থেকে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মন্ত্রী পর্যায়ের অংশগ্রহণ আমাদের সার্বিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফসল এবং এটি ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব প্রমাণ করে।'

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে ষষ্ঠ ভারত মহাসাগর সম্মেলন এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে একটি 'ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক' নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকের সর্বাধিক লক্ষ্য হলো এই অঞ্চলে সম্পৃক্ততার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম, ভারতের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা এবং অন্য দেশগুলোর অভিন্ন সমস্যাগুলো সমাধান করা। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির ব্যাপক সমর্থন সত্ত্বেও, কিছু দেশ দাবি করেছে যে এটি কেবল আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি, চীনের প্রবৃদ্ধি শ্লথ করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের ঝোঁককে বাড়িয়ে তুলবে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো ও চীনের মধ্যকার সংঘাতে বাংলাদেশ কোনো পক্ষ নিতে দ্বিধাবোধ করছে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অভিমুখিতার রূপরেখা তৈরি করে অন্যান্য উপকূলীয় দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশ একটি ভারসাম্যপূর্ণ উদাহরণ স্থাপন করেছে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো এই পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে অনায়াসে। এর লক্ষ্য আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করা, সামুদ্রিক বাণিজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, বিনিয়োগের সুযোগ এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে নতুন কৌশলগত জোট প্রবর্তন করা। আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা, ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি এবং সব দেশের সার্বভৌম সমতা সমুন্নত রাখার মাধ্যমে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি একটি উন্মুক্ত, অবাধ ও ন্যায্য ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। এ ছাড়া বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চায়।

পৃথিবী গত কয়েক বছরে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারত দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে 'নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার'-এর ধারণাপ্রচার করে আসছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই), চতুর্ভুজ নিরাপত্তা সংলাপ (কোয়াড), ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস), ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (আইপিইএফ) এবং অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (ইউকেইউএস) মতো নতুন কৌশলগত ও নিরাপত্তা উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি এখন বিকশিত হচ্ছে। এ ছাড়া ভারত সাগর ভিশন (এই অঞ্চল, ভারত ও তার প্রতিবেশী সবার জন্য নিরাপত্তা ও প্রবৃদ্ধি) ঘোষণা করেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর মোমেন বলেন, 'এই সম্মেলনের আলোচনা থেকে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো চলমান বৈশ্বিক ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে সে সম্পর্কে ধারণা পাবে এবং বিভিন্ন সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলা ও তা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে।'

প্রসঙ্গত ভারত মহাসাগর বিভিন্ন কারণে তার কৌশলগত তাৎপর্য পায়। এটি বহু বছর ধরে এশিয়ান, ইউরোপীয় এবং আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলোর জন্য একটি দুর্দান্ত সামুদ্রিক রুট ছিল। মার্কিন সরকারও ভারত মহাসাগরকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরে তার কৌশল পরিবর্তন করেছে। জাপান ও ভারতের প্রস্তাবিত 'কটন রুট' একটি বড় ইসু্য যা বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। জাপান-ভারত-বাংলাদেশ কৌশলগত ত্রয়ীও সাম্প্রতিক সময়ে বিবেচনার বিষয়।

বাংলাদেশ নীল অর্থনীতির দিকে মনোনিবেশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে ইন্টার কন্টিনেন্টাল ঢাকায় ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) 'প্রমোটিং সাসটেইনেবল বস্নু ইকোনমি- ভারত মহাসাগরের সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার' শীর্ষক তৃতীয় মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও ভারত এ ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করতে পারে। এই সমস্ত রাষ্ট্রগুলো বিমসটেক এবং সার্কের মতো কিছু আঞ্চলিক পস্ন্যাটফর্মের সদস্য। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ এবং ভারত মহাসাগরের সব দেশই এখন একই সমস্যার সম্মুখীন। দুর্যোগকালীন সময়েও আঞ্চলিক সহযোগিতা খুব প্রয়োজন।

বিশ্লেষকরা আশা করছেন, এই সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিমন্ডলে ভারত মহাসাগর উপকূলবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব আরও সুদৃঢ় হবে এবং বিভিন্ন সংকট পরিস্থিতি মোকাবিলা ও তা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here