• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

স্বচ্ছ নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারে ইভিএম

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

 ড. কাজী এরতেজা হাসান ::

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন। এ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। নির্বাচন কমিশন এমন সিদ্ধান্তই নিয়েছে। ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচন আরও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে ভূমিকা রাখবে। আমরা  দেখেছি গত জাতীয় নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে এটি ব্যবহার হয়েছে,  সেসব স্থানে  ভোটগ্রহণ নিয়ে খুব একটা কথা ওঠেনি। ভোটাররা তাদের কাক্সিক্ষত প্রার্থীকে ঠিকই  ভোটটি দিতে পেরেছেন। আমরা আশা করি, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ব্যাপকভাবেই ইভিএম-এর মাধ্যমে  ভোট গ্রহণ করা হলে নির্বাচন নিয়ে নানা মহল আগে থেকেই  যে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছেন এবং নির্বাচনকে বিতর্কিত করার জন্য আদাজল  খেয়ে মাঠে  নেমেছেন, তা, প্রতিহত করা সহজ হবে। 

গোটা বিশ্ব এখন তথ্যপ্রযুক্তিতে ক্রমশঃ এগিয়ে যাচ্ছে। ভোটগ্রহণের  ক্ষেত্রে  গোটা বিশ্বময় ইভিএম -এর ব্যাবহার  বেড়েছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতের প্রতিটি নির্বাচনে  সেখানকার নির্বাচন কমিশন ইভিএম এর ব্যবহারের উপর  বেশ নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতার কারণ হলো, নির্বাচনকে স্বচ্ছ করে  তোলা।  সেকেলে  ভোটগ্রহণ পদ্ধতিকে  পেছনে ফেলে সর্বাধুনিক উপায়ে ভোট গ্রহণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বড় ভূমিকা রাখছে ইভিএম।  যে  কোনো ভোটার এর মাধ্যমে তার পছন্দের প্রার্থীকে সহজেই ভোট দিতে পারেন। এতে  বেশ স্বাচ্ছন্দ্য রয়েছে। এর মাধ্যমে ভোট দেওয়া একদমই ঝামেলামুক্ত। এ ছাড়া  ভোট  কেন্দ্রে দীর্ঘসময় ধরে দাঁড়িয়ে  থেকে  ভোট দিতে  ভোটাররা যেভাবে বিরক্তিবোধ করেন এবং অনেকে অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে  থেকেও  ভোট  দেওয়ার ডাক না পেয়ে রাগে-ক্ষোভে লাইন ছেড়ে চলে যান। ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোট নেওয়া হলে এ পরিস্থিতির উদ্ভব তেমনটা হয় না। 

কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় হলো ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে ইভিএম এর ব্যবহারের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার  জোর বিরোধিতা করছে বিএনপি। এ দলটির  নেতারা অবশ্য গত জাতীয় নির্বাচনেও ইভিএম এর ব্যবহারের  ঘোর বিরোধী ছিলেন। ইভিএম এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি অনেকেরই নজরে এসেছে। তারা  ভেবে পাচ্ছেন না ইভিএম ব্যবহারের  ক্ষেত্রে বিএনপির এই বিরোধী অবস্থানের রহস্য কি ?  গোটা বিশ্বের দেশগুলো বিশেষ করে উন্নত দেশে ইভিএম-এর ব্যবহার ছাড়া  ভোট গ্রহণ আশাই করা যায় না। পার্শ্ববর্তী  দেশ ভারতেও একই অবস্থা। তাহলে বিএনপি  কেন বিরোধিতা করছে ? তারা স্বচ্ছ নির্বাচন দাবি করেন কিন্তু স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য ইভিএম এর প্রয়োগ খুবই জরুরি। তাহলে কি আমরাও ধরে নিতে পারি দলটি মান্ধাতার আমলেই পড়ে থাকতে চায়? তারা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার চান না ? না-কি তাদের মাথায় অন্য চিন্তাভাবনা কাজ করছে। ইভিএম ব্যবহার করলে স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ফলে তাদের  ভোট কারচুপির অভিযান সফল হবে না।  মোট কথা ভোট জালিয়াতি ও ডাকাতির মাধ্যমে তারা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়লাভ করতে চায়। তাদের এই মনের  গোপন অভিলাস আর  গোপন  নেই।  যে কারণে সর্বমহল  থেকেই ইভিএম এর ব্যবহারের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। 

আমরা লক্ষ্য করে  দেখেছি,  দেশের স্বার্থান্বেষী কিছু মহল ইভিএম সম্পর্কে তথ্য বিকৃত করে প্রচার চালাচ্ছেন। এটি প্রয়োগ করা হলে ভোট জালিয়াতি হবে বলে তারা জোর দিয়ে প্রচার করছে। কিন্তু আমরা জানি যে, আসলে এসব মানুষ ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ-নিরপেক্ষ  হোক এটা তারা চায় না। তারা  যেকোনো উপায়ে বিএনপির দুই  মেয়র প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার জন্য স্বচ্ছ নির্বাচন বিরোধী এবং স্বচ্ছ নির্বাচন বিরোধী কর্মকা- প্রতিরোধ করতে পারে ইভিএম। এটা জেনেই তারা এর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে  লেগেছে। 

আমরা  ভেবে তাজ্জব বনে গেছি যে, বিএনপির বড় বড়  নেতারা ইভিএম এর বিরুদ্ধে পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে  নেমেছেন। বারবার তারা বলছেন এর প্রয়োগ নির্বাচনকে বিতর্কে  ফেলে  দেবে। এসব কথা বলা  থেকে দলটির নেতাদের সরে আসা উচিত বলে আমরা মনে করি। দলটির  নেতাদের এসব বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ ব্যাপারে গত রোববার গণমাধ্যমের পরিবেশিত খবর  থেকে জানা যায়, - বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘ইভিএম নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে। ঢাকা সিটি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ ও  পেছানোতে নির্বাচন কমিশনের অজ্ঞতা প্রকাশ পাচ্ছে’। মির্জা ফখরুলের এমন কথার জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) এসব আচারণ কথাবার্তায় একটা বিষয় ক্রমেই দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, তা হলো, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে সেটা  লোক  দেখানো।’ বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে  জেতার টার্গেটের  চেয়ে তাদের বড় লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। ইভিএম নিয়ে তারা বিষোদ্গার করছে, ইভিএম নিয়ে যতটা না তার  চেয়ে  বেশি হচ্ছে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার জন্য। নির্বাচনে তাদের পরাজয়ের যে আভাস,  সেটা এড়ানোর জন্য তারা ইভিএমকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। আসলে তারা নির্বাচনটাকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাদের নির্বাচনে  জেতার  কোনো লক্ষণ নেই। পরাজয় নিশ্চিত জেনেই তারা আজকে আবোল-তাবোল বলছে। কখনো নির্বাচন কমিশন, কখনো ইভিএম ও কখনো সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন।’

ওবায়দুল কাদের একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ। তিনি বাস্তবতা বর্জিত কোনো কথা বলেন না। ইভিএম  যে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে বড় ঢাল এটা তিনি জানেন। কিন্তু বিএনপি মহাসচিব সেটা জানেন না তা আমরা স্বীকার করতে চাই না। তারা এটা ভালভাবেই জানেন, কিন্তু তাদের মনে রয়েছে গোপন অভিসন্ধি। তারা সে পথেই হয়তো আগাবার  চেষ্টা করবেন। কথায় আছে ‘চোর না শোনে ধর্মের  কথা।’ বিএনপির হয়েছে সেই দশা।

পরিশেষে আমরা বলতে চাই, নির্বাচন কমিশন আসন্ন ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে সংশয়হীনভাবেই ইভিএম-এর প্রয়োগ ঘটাবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। স্বচ্ছ ভোট গ্রহণে এই যন্ত্রটি অত্যন্ত কার্যকর। এ  থেকে নির্বাচন কমিশন যে কোনোভাবেই পিছিয়ে না আসে। তারা ব্যাপকভাবে এর প্রয়োগ ঘটাবেন বলেও আমরা মনে করি।

দৈনিক ভোরের পাতা থেকে সংগৃহীত

Place your advertisement here
Place your advertisement here