• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

সমাজ নিয়েই স্বপ্ন দেখতে হবে: মেহেদী হাসান

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

কেমন আছেন পাশের বাড়ির মানুষটি? এমন প্রশ্ন করার মতো সময়ও আমাদের নেই। ক্রমেই আমরা যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি, এতে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমাদের চিন্তার পরিবর্তর জরুরি।

একটি কথা মনে রাখা ভালো- সমাজ নিয়ে ভাবনার বয়স লাগে না, প্রয়োজন চিন্তা ও মানসিকতা। শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকলে সমাজের কোন পরির্তন আসবে না। ভাবতে হবে চারপাশের মানুষ নিয়ে। পরিবর্তন ছাড়া সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। যখন সমাজের পরিবর্তন হয়, তখন কুসংস্কার সমাজ থেকে দূরিভূত হয়। শিক্ষা, সেবা, কমর্সংস্থান ও উন্নয়ন নিয়ে যখন ভাবেন কেউ তখন সমাজ আদি সমাজ ব্যবস্থার কুসংস্কার ছেড়ে নতুন সত্য, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন সংস্কারমূলক সমাজ সৃষ্টির পথ আলোকিত হয়। সকল পরিবর্তনের জন্য প্রথমে প্রয়োজন তারুণ্য। যখন আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব পুরো সমাজের জন্য ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনছে, তখনই কিছু তরুণ কল্যাণমুখী কাজে নিয়োজিত করছেন, সমাজ, দেশ ও রাজনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন করার জন্য অদম্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

অদম্য এক তরুণ মেহেদী হাসান। জন্ম চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানার চন্ডিপুর গ্রামে। তিনি নিঃস্বার্থভাবে সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে আশপাশের মানুষদের জন্য কিছু করতে সচেষ্ট হন। এমন মনোভাব নিয়েই গড়ে তুলেছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আরপি ফাউন্ডেশন।’ যে সংগঠন সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। মেহেদী হাসান আত্মকেন্দ্রিক না থেকে সমাজ কিংবা দেশের জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে কথা হলো নানা বিষয়ে।

আপনার স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে চাই

আমাদের সমাজের দিকে তাকালে প্রতিনিয়ত আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য, যা অতি দুঃখের হলেও সত্য। আজকের আধুনিক বিশ্বের ছোঁয়া সত্ত্বেও আমরা সেকেলে সমাজ ব্যবস্থা হতে বেরিয়ে আসতে পারিনি। প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থার কুসংস্কার, বৈষম্য ও অবমূল্যায়ন আমাদেরকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। শ্রেণি বৈষম্যের দিকে তাকালে দেখা যায় সমাজের একটি গরিব লোক শিক্ষিত, মেধাবী এবং নেতৃত্ব দেবার মত যোগ্যতা রাখলেও আমাদের ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা এই লোকটিকে সুযোগ না দিয়ে তাকে অবমূল্যায়ন করে পিছনে ফেলে রাখে যা আমাদের জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। পক্ষান্তরে, একজন সম্পদশালী ব্যাক্তি মেধা ও নেতৃত্বের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সমাজ তাকে নেতৃত্বের ভার দেয় যা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার জন্য হুমকি স্বরূপ। এই সমাজ নিয়ে আমাদেরই ভাবতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে সমাজ নিয়ে।

এছাড়া নারী পুরুষের বৈষম্য, জাতিগত বৈষম্যসহ নানান স্তর ও মাত্রার বৈষম্যে ছেঁয়ে গেছে আমাদের সমাজ। তাই আমি এই আধুনিকতার যুগে দাঁড়িয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছি যে আসুন আমরা সকলের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে এমন একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার অঙ্গীকার করি যে সমাজ আমাদের নিয়ে যাবে উন্নতির চরম শিখরে।

সমাজের পরিবর্তন কিভাবে আসতে পারে?

মানবতাবোধই পারে সমাজের রূপ বদলে দিতে, তাই আমাদের সবার মধ্যে মানবতাবোধ জাগাতে হবে। একজন মানুষ সঠিক শিক্ষাগ্রহণ না করলে তার প্রভাব সমাজের ওপর পড়ে। সে কারণে আমাদের সঠিক শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে।

মানুষের পাশে কিভাবে দাঁড়াতে চান?

আমি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। এখানে গুরুত্ব পায় ইচ্ছা এবং কাজ করার স্পৃহা। যেখানে থাকি যেভাবেই থাকি যে পেশায়ই থাকি মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে চাই সবসময়। আমি যা করি গরীব দুঃখী মানুষদের ভালোবেসেই করি। এ ধরণের কাজ করে আমি আনন্দ পাই। সেজন্য বর্তমান ডিজিটাল মিডিয়াকে, সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সবাইকে একসুতোতে বাঁধতেই গড়ে তুলেছি আরপি ফাউন্ডেশন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছি।একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মানে সরকারকে সাহায্য করতে চাই। আমরা আর.পি ব্যানার থেকে ইতিমধ্য অনেক কাজ করেছি। সামনে অনেকগুলো কাজের বাস্তবায়ন খুব শীঘ্রই হবে।

আপনি শিশুদের জন্য কতটুকু ভূমিকা রাখছেন?

বস্তিবাসীর মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, জীবিকা, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রতি বছর কয়েক হাজার শিশু এবং তাদের পরিবারকে উপকৃত করছি। শিক্ষা উভয় উপায় এবং পাশাপাশি একটি ভাল জীবন সমাপ্তি। বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি- স্বাস্থ্যসেবা, উপযুক্ত সামাজিক আচরণ, উন্নত নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার সহায়তা। একটি শিশু স্কুলে যাবে কেবলমাত্র যদি পরিবার, বিশেষ করে মা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে এবং ক্ষমতায়ন করা হয়। সবকিছু উপলব্ধি করেই বাংলাদেশের একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান আর.পি ফাউন্ডেশন, শিক্ষার গন্তব্যের শুরুতে উন্নয়নের একটি জীবনচক্র পদ্ধতি গ্রহণ করে, শিশুদের, তাদের পরিবার এবং বৃহত্তর সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপের উপর মনোনিবেশ করে। আর.পি ফাউন্ডেশন বিশ্বাস করে যে, সুশীল সমাজের সদস্যদের উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে জড়িত না হওয়া পর্যন্ত টেকসই পরিবর্তন ঘটবে না। সিভিক চালিত পরিবর্তনের এই মডেল অনুসরণ করে নাগরিক সমাজকে সংবেদনশীল করে তোলে এবং তার সমস্ত কল্যাণ উদ্যোগে সক্রিয় অংশীদার করে।

দেশের রাজনীতি আপনি কিভাবে দেখছেন?

খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং বর্তমান তরুণ সমাজসহ সকলেরই ভাবনার বড় জায়গাটি হচ্ছে- বর্তমান রাজনীতি আসলে কোন পথে যাচ্ছে (?)। জাতির জনক বঙ্গবন্ধর সুযোগ্য কন্যা, দেশমাতা শেখ হাসিনার অধীনে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে দেশ আজ অনেকদূর এগিয়েছে এটা এক নির্মোহ সত্য। এমনকি বিরোধীরাও আজ একথা স্বীকার করতে বাধ্য। শিক্ষা,স্বাস্থ্য, কৃষি,প্রযুক্তি সহ সকল খাতে, জিডিপি বৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় ঈর্ষণীয়। তবে রাজনীতিতে অতিকথন (কথা চালাচালির রাজনীতি), সমতা, অধিকার, দুর্নীতি, শ্রেণিবৈষম্য আজ রাজনীতিকে বিষাক্ত করেছে। আমাদের ছোটবেলার স্বপ্নের দেশ কিংবা ভাবনার দেশটাকে অদৃশ্যভাবে অনেক দূর পিছিয়েছে। মানবিকতার রাজনীতি আজ অনুপস্থিত। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও সোনার বাংলাদেশ কোন্ অবস্থানে আছে তা সবাই অনুভব করতে পারছে কিন্তু নিরুপায় হয়ে আছে । ধনী দরিদ্রের ব্যবধান দিন দিন বেড়েই চলেছে । দিন দিন অরাজকতা, জীবনের অনিশ্চয়তা বেড়েই চলেছে। অথচ এমন অবস্থায় যাদের মাথা ব্যাথা হওয়ার কথা তাদের কোন ব্যথা নেই। মিথ্যাচার করাই যেন একমাত্র কাজ ।

রাজনীতিবিদদের দেখে মনে হয় দেশ ও দেশের জনগন রসাতলে যাক তাতে তার কি? তার জন্য বড় কথা হলো নিজে কত ব্যংক ব্যালেন্স বাড়াতে পেরেছে কত বাড়ী গাড়ী করতে পেরেছে কত প্রতিষ্ঠান রাস্তাঘাটে নিজের নামে করতে পেরেছে এটাই বড় বিষয় ।

শিক্ষা নিয়ে কী ভাবছেন?

যদি সামনের দিকে তাকাই, শিক্ষাব্যবস্থায় দেখতে পাই আমূল পরিবর্তন। প্রথাগত শিক্ষার গণ্ডি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে শুরু করছি, কিন্তু তার চাইতেও বড় কথা হলো, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষাক্ষেত্রের বৈষম্যকে দূর করতে খুব সফলভাবে আমরা কাজে লাগাতে পারি এই তথ্যপ্রযুক্তিকে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এখনো বড় একটা সমস্যা হলো গ্রাম ও শহর, অথবা আরও ভালো করে বলতে গেলে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ কয়েকটি বড় শহর বনাম বাংলাদেশের বাকি অংশের পার্থক্য। বিশেষ করে গণিত, বিজ্ঞান, কিংবা ইংরেজি শিক্ষার ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের স্কুল কলেজে যথাযথ সুযোগ নেই। আর.পি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশের নানা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষকদের কাছ থেকে বার্তা পেয়েছি। এই সুযোগটা আমরা পৌঁছে দিতে পারি তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সবচেয়ে বড় অবদান হলো যোগাযোগ বা তথ্য আদান প্রদানকে সহজ করে তোলা। গ্রামের একটি স্কুলে গণিতের শিক্ষক যদি নাও থাকে, তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আমরা সেই সুযোগটা এনে দিতে পারি। শহরের স্কুলে যা পড়ানো হয়, সেটার ভিডিও রেকর্ড করতে খরচ একেবারেই নগণ্য। সেই লেকচারগুলোকে দেশের নানা জায়গার স্কুলে সরবরাহ করা, এবং প্রতিটি স্কুলে একটি ডিজিটাল ক্লাসরুম করে সেখানে সেটা শিক্ষার্থীদের কাছে এনে দেওয়াটা খুব বেশি খরচ সাপেক্ষ না। ডিজিটাল বলতে কিন্তু আমি অত্যাধুনিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের কথা বলছি না, সামান্য একটা টিভি আর ভিডিও দেখানোর জন্য একটা ডিভিডি প্লেয়ার, এই দুইটা জিনিস থাকলেই চলে, যার খরচ এখনকার যুগে অনেক কমে এসেছে।

দেশের সর্বত্র শিক্ষা উপকরণ পৌঁছে দেওয়ার আরেকটা সহজ উপায় হলো দেশের মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা। দেশের সব জায়গায় বিদ্যুৎ না গেলেও মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক গেছে। সেটাকে এবং দেশের প্রতিটি গ্রামে প্রতিটি বাজারের মোবাইল ফোনের যেসব খুচরা দোকান আছে, যেখানে সবাই নিয়মিত ফোন কার্ড কিনতে বা অন্য কারণে যান, সেগুলাকে খুব সহজে কাজে লাগানো যেতে পারে। স্কুল-কলেজের নানা বিষয়ের লেকচার ভিডিওগুলোকে মোবাইল ফোনের উপযোগী করে এসব দোকানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। এর পাশাপাশি সরকারি ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রগুলোকেও লাগাতে হবে কাজে।

দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

স্বাধীনতার ৪৭ বছর অতিক্রম করেছে দেশ। একটি দেশের জন্য এই সময় খুব কম না হলেও অনেক বেশিও না। নানাবিধ সমস্যা মোকাবিলা করে বিগত ৪৭ বছরে আমাদের অর্জন ঈর্ষণীয়। বর্তমানে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ। এ দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রযুক্তি, শিল্প, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সব উন্নয়নের মূলে রয়েছে আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন। শিক্ষার হার বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে শিক্ষার মান। শিক্ষার্থীরা আজ শুধু পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ না থেকে করছে ইন্টারনেটভিত্তিক জ্ঞানচর্চা। স্বাধীনতার এই ৪৭ বছরে আজ আমার প্রত্যাশা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে উন্নয়নের যে জোয়ার বইছে, সেই জোয়ারে যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে। মেলে ধরতে চাই আমাদের বাংলাকে, বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে।

সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে

আপনাকেও ধন্যবাদ।

Place your advertisement here
Place your advertisement here