• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

শবে বরাতে হালুয়া-রুটির প্রচলন যেভাবে

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

হাজার বছরের ইবাদতের চেয়ে এই রাতের ইবাদত আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। মহিমান্বিত এক রাত এই শবে বরাত। পুরো বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ মশগুল থাকেন আল্লাহর ইবাদতে। এ-রাতে সেহরে খেয়ে পরদিন রোজা রেখেছেন রাসূল (সা.)। তবে শবে বরাতে আলোকসজ্জা করা কিংবা হালুয়া রুটি খেতেই হবে এমন কিছুর উল্লেখ পাওয়া যায়নি কোথাও। 
গ্রামে-গঞ্জের নারীরা বলে থাকেন, এমনিক বহু শহুরে শিক্ষিত মেয়েদের মুখেও শোনা যায়, রাসূল (সা.) বলেছেন- শবে বরাতে রুটি বানিয়ে খেলে আল্লাহ তায়লা তার আরশের নীচে ছায়া দেবেন । কেউ কেউ বলেন, হাদিসে আছে, কেয়ামতের কঠিন দিনে রুটি বড় হয়ে বান্দার মাথার ছাতা হবে। অথচ রাসূল (সা.) এর অজস্র হাদীসের কোথাও এমন কোনো বাক্যের উল্লেখ নেই । হাদিসের বর্ণনার সঙ্গে এর দূরতম সম্পর্কও নেই।

হালুয়া- রুটি খাওয়ার প্রচলন হলো যেভাবে
ওহুদ যুদ্ধে রাসুলের (সা.) দাঁত মোবারক শহিদ হলে পরে কিছুদিন তিনি কোনো শক্ত খাবার খেতে পারতেন না। তখন তাকে চালের নরম রুটি ও হালুয়া করে খাওয়ানো হয়। আল্লাহ তায়ালা তা-ই শবে বরাতের এই দিনে হালুয়া রুটি খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে এই নিয়ে রয়েছে যুক্তি তর্ক, ওহুদ যুদ্ধের সঙ্গে  শবে বরাতের সম্পর্ক কী? ওহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে শাওয়াল মাসের ৭ তারিখে, আর শবে বরাত হয় শাবান মাসের ১৫ তারিখে। তবে শাবানের পনের তারিখের রাতের ফজিলত ও এ রাতের ইবাদত-বন্দেগির সাওয়াবের কথা বহু বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তার সৃষ্টির দিকে আপন রহমতের দৃষ্টি দান করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন । (সহীহ ইবনে হিববান ও বায়হাকি)

অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে- কেউ যদি আরশের ছায়া জাতীয় কোনো ভুল ধারণা না রেখে বা নিজের ইবাদতে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে শবে বরাত উপলক্ষে এ ধরনের হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা করে, তাহলে কি তা না জায়েজ হবে? উত্তর হলো- না, কিছুতেই নয়। উপরন্তু কেউ যদি ইবাদত গুজার বান্দাদের ইবাদত-বন্দেগি ও রোজা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি অথবা আমাদের দেশে প্রচলিত কোনো খাবারের ব্যবস্থা করে, তাহলে তা অবশ্যই অশেষ ফজিলত ও সাওয়াবের কারণ হবে।

হাদিসে আছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন,- হে লোক সকল, তোমরা সালামের প্রচলন করো, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষা করো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজ পড় তাহলে শান্তির সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ)

হালুয়া-রুটির সঠিক ইতিহাস
আসলে এই রাতের সঙ্গে হালুয়া-রুটির বিষয়টি এলো কোথা থেকে- তার পেছনে এক ইতিহাস রয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ববর্তী যুগে এখনকার মতো মুসাফির যাত্রীদের থাকার জন্যে আবাসিক হোটেল-মোটেলের ব্যবস্থা ছিল না। তখন পথচারীদের বিশ্রামের জন্যে ছিল সরাইখানা কিংবা মুসাফিরখানা। সফর অবস্থায় প্রয়োজনে মানুষ সেখানে রাত্রিযাপনও করতেন।

আর এখানকার দায়িত্বশীল যারা ছিলেন, তারাই মুসাফিরদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন। তাই কোনো মুসাফির পবিত্র শবে বরাতে এসব স্থানে রাত্রি যাপন করলে হয়তো তিনি সারারাত ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাতেন ও পরের দিন রোজা রাখতেন। যেহেতু স্বাভাবিকভাবে হালুয়া-রুটি ও গোশত-রুটি খাওয়া সুন্নাত, তাই তারা হালুয়া, রুটি, গোশত ব্যবস্থা করতেন সচরাচর। এ ছাড়াও আরব এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য রুটি-হালুয়া বা রুটি-গোশত। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটির প্রচলন আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। (আত্‌তাহযীব মিনাল বিদা) 

ইসলামের ইতিহাস যারা বিশ্লেষণ করেন, তাদের অনেকেই মনে করেন যে বাংলাদেশের সমাজ বৃহত্তর মুসলিম উম্মাহর অংশ। শবে বরাতের সময় হালুয়া-রুটি বানানো। বিতরণ করার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেয়ার একটি সম্পর্ক আছে। আনন্দের ভাগটা অন্যদের দেয়ার জন্যই বিতরণ করার রেওয়াজটা হয়েছে। এর সঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতি এবং সামাজিকতা রক্ষা- দুটো বিষয় জড়িত আছে। আবার রাসূল (সা.) যেহেতু মিষ্টি খেতে পছন্দ করতেন। তাই তার উম্মতও মিষ্টি খাওয়াকে সুন্নত মনে করেন। আর এই পবিত্র দিনে মিষ্টি খাওয়া বাড়তি সুন্নত আদায় করা। এটি ভেবেই অনেকে মিষ্টির আয়োজন করে। মিষ্টি বা মিষ্টান্নর মধ্যে হালুয়া অন্যতম এক উপকরণ হতে পারে। এভাবেই বাংলাদেশ ভূখণ্ডে শবে বরাত পালনের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয় ১৯শ’ শতকের শেষের দিকে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here