• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

‘রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের সৃষ্টি, সমাধানও তাদেরকেই করতে হবে’

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- মিয়ানমারের ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।

তিনি বলেন- তিন বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমার সৃষ্টি করেছে। আর সমাধানও মিয়ানমারকেই করতে হবে।

শনিবার রাত সোয়া ৮টায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে ওই অঙ্গীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে কভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশের উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন। সবার জন্য কভিড ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতার কথাও জানান।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকেই বাংলাদেশ নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ ছিল ১৭তম ভাষণ। কভিড মহামারির কারণে এবার ভার্চুয়ালি আগে থেকে রেকর্ড করা ভাষণ প্রচার করা হয় জাতিসংঘে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ জাতিসংঘে উপস্থাপন করেন নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, ‘কভিড-১৯ মহামারির কারণে আমরা মানব ইতিহাসের এক অভাবনীয় দুঃসময় অতিক্রম করছি। জাতিসংঘের ইতিহাসেও এই প্রথমবারের মতো নিউ ইয়র্কের সদর দপ্তরে সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের অনুপস্থিতিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতিসংঘের এই সভাকক্ষটি আমার জন্য অত্যন্ত আবেগের। ১৯৭৪ সালে এই কক্ষে দাঁড়িয়ে আমার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সদ্যঃস্বাধীন দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে মাতৃভাষা বাংলায় প্রথম ভাষণ দিয়েছিলেন। আমিও এই কক্ষে এর আগে ১৬ বার সশরীরে উপস্থিত হয়ে বিশ্বশান্তি ও সৌহার্দের ডাক দিয়েছি। সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে এটি আমার ১৭তম বত্তৃদ্ধতা।’

প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া স্বাস্থ্যকর্মীসহ সব পর্যায়ের জনসেবকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এই দুর্যোগকালে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও বহুপক্ষীয় উদ্যোগের জন্য তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে ধন্যবাদ জানান। জাতিসংঘ মহাসচিবের যুদ্ধবিরতিসহ অন্যান্য উদ্যোগের প্রতি তিনি বাংলাদেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘কভিড-১৯ মহামারির কারণে বিদ্যমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো আরো প্রকট হয়েছে। এই মহামারি আমাদের উপলব্ধি করতে বাধ্য করেছে যে এই সংকট উত্তরণে বহুপাক্ষিকতাবাদের বিকল্প নেই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতিসংঘের ৭৫তম বছরপূর্তিতে জাতিসংঘ সনদে অন্তর্নিহিত বহুপাক্ষিকতাবাদের প্রতি আমাদের অগাধ আস্থা রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও বহুপাক্ষিকতাবাদের আদর্শ সমুন্নত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত সে সোনার বাংলাদেশ হবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত—যেখানে সবার মানবাধিকার নিশ্চিত হবে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে জাতি ও বিশ্বের নিকট এটিই আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতিকে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। তাঁরই দেখানো পথে হেঁটে আমরা আজ বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল আসনে নিয়ে আসতে পেরেছি। 

এই মহান পরিষদে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘ সনদে যে মহান আদর্শের কথা বলা হয়েছে, তা আমাদের জনগণের আদর্শ এবং এই আদর্শের জন্য তারা চরম ত্যাগ স্বীকার করেছে। এমন এক বিশ্বব্যবস্থা গঠনে বাঙালি জাতি উৎসর্গকৃত, যে ব্যবস্থায় সকল মানুষের শান্তি ও ন্যায়বিচার লাভের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে।’ তাঁর এই দৃপ্ত ঘোষণা ছিল মূলত বহুপাক্ষিকতাবাদেরই বহিঃপ্রকাশ। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে তাঁর প্রদত্ত দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য বর্তমান সংকট মোকাবেলার জন্য আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।”

Place your advertisement here
Place your advertisement here