• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

রমজানে আল্লাহভীতি অর্জনের উপায়

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

রমজান মাসের রোজা পালন করা তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’(সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

উল্লিখিত আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, ‘আল্লাহভীতি অর্জন’ রমজান মাসে রোজা রাখার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। সুতরাং রোজাদারের উচিত আল্লাহভীতি অর্জনের চেষ্টা করা।

আল্লাহভীতি সব কিছুর মূল

রাসুলুল্লাহ (সা.) আবু জর (রা.)-কে আল্লাহভীতি অর্জনের উপদেশ দেন। তিনি বলেন, ‘আমি তোমাকে আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি। কেননা তা সব কিছুর মূল।’ (মুসনাদে হাকিম ও সুনানে ইবনে হিব্বান)

আল্লাহভীরু মানুষের বৈশিষ্ট্য

আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) মুত্তাকি তথা আল্লাহভীরু মানুষের পরিচয় তুলে ধরে বলেন, ‘তাঁরা হলেন মর্যাদাশীল মানুষ। তাঁরা সত্য বলেন, জীবনযাপনে মধ্যপন্থা অবলম্বন করেন, বিনয়ের সঙ্গে চলাফেরা করেন, হারাম দৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকেন, উপকারী জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী হন। তাঁরা সামান্য আমলে সন্তুষ্ট হন না এবং বেশি আমলকে বেশি মনে করেন না। তাঁরা নিজেদের দোষী মনে করেন এবং আমলের ব্যাপারে যত্নশীল হন। তাঁদের নিদর্শন হলো তাঁরা দ্বিনের ওপর অবিচল, ঈমানে দৃঢ়, জ্ঞানে আগ্রহী, চারপাশ সম্পর্কে সজাগ, প্রাচুর্যের মধ্যেও মধ্যপন্থী, ইবাদতে বিনয়ী, দারিদ্র্যে ও বিপদে ধৈর্যশীল, হালাল অনুসন্ধানী, সুপথে উজ্জীবিত, লোভ-লালসা থেকে দূরে, সর্বাবস্থায় পুণ্যের কাজে নিয়োজিত। তাঁর সন্ধ্যা হয় কৃতজ্ঞতার মধ্যে এবং সকাল হয় আল্লাহর কৃতজ্ঞতার মধ্যে। তাঁর কথা ও কাজে মিল থাকে।’ (বিহারুল আনওয়ার, পৃষ্ঠা ৩১৫)

আল্লাহভীতি অর্জনের উপায়

কোরআন ও হাদিসে আল্লাহভীরু মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা বর্ণিত হয়েছে, যা অর্জনের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহভীরু হতে পারে। যেমন—

১. সতর্কতা অবলম্বন করা : আল্লাহভীরু ব্যক্তি সংশয়পূর্ণ বৈধ বিষয়গুলোও পরিহার করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি ক্ষতিকর কাজে জড়িয়ে পড়ার ভয়ে বৈধ অক্ষতিকর বিষয় না ছেড়ে দেওয়া পর্যন্ত আল্লাহভীরুদের স্তরে উন্নীত হতে পারে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫১)

২. অন্যকে ক্ষমা করা : ক্ষমা ও উদারতা আল্লাহভীতি অর্জনের একটি মাধ্যম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং ক্ষমা করে দেওয়াই তাকওয়ার নিকটতর।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৭ )

৩. সুবিচার করা : মানুষের প্রতি সুবিচার করা মুত্তাকি মানুষের বৈশিষ্ট্য। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সুবিচার করো, এটা তাকওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮)

৪. সত্যের অনুসরণ : সত্য স্বীকার করা ও তার অনুসরণ তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সত্য এনেছে এবং যারা সত্যকে সত্য বলে স্বীকার করে তারাই আল্লাহভীরু।’ (সুরা : জুমার,            আয়াত : ৩৩)

৫. দোয়া করা : তাকওয়া আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। তাই তা অর্জন করতে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা আবশ্যক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা প্রার্থনা করে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন, যারা হবে আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর এবং আমাদের করুন মুত্তাকিদের জন্য অনুসরণযোগ্য।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৭৪)

৬. আল্লাহভীরু সঙ্গ গ্রহণ করা : আল্লাহভীরু মানুষের সঙ্গ ও সাহচর্য মানুষকে আল্লাহভীরু হতে সাহায্য করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯)

তাকওয়ার পুরস্কার

কোরআন ও হাদিসে তাকওয়া বা আল্লাহভীতির বহু পুরস্কারের কথা এসেছে। তার কয়েকটি হলো—

১. আল্লাহর ভালোবাসা লাভ : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৭৬)

২. আল্লাহর সাহায্য লাভ : আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ আল্লাহ তাদের সঙ্গে রয়েছেন।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১২৮)

৩. সম্মান লাভ : ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে যারা বেশি আল্লাহভীরু তারাই আল্লাহর কাছে বেশি সম্মানিত। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন এবং সব খবর রাখেন।’ (সুরা : হুজুরাত,         আয়াত : ১৩)

৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি : আল্লাহ বলেন, ‘পরে আমি আল্লাহভীরুদের উদ্ধার করব এবং অবিচারকারীদের সেথায় নতজানু অবস্থায় রেখে দেব।’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৭২)

৫. জাগতিক জীবনে সহজতা : ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে জীবিকা দান করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ২-৩)

৬. পাপ মার্জনা :  ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পাপ মার্জনা করবেন এবং তাকে দেবেন মহাপুরস্কার।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৫)

৭. শত্রু থেকে রক্ষা : আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো। তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১২০)

৮. ফেরেশতাদের অভিনন্দন : ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করত তাদের দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের নিকট উপস্থিত হবে ও তার দ্বারগুলো খুলে দেওয়া হবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদের বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখী হও এবং জান্নাতে প্রবেশ করো স্থায়ীভাবে অবস্থিতির জন্য।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৭৩)

আল্লাহ সবাইকে তাঁর ভয় অর্জনের তাওফিক দিন। আমিন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here