• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

রংপুরে বিনামূল্যে ১১০ লাখের বেশি মাস্ক বিতরণ করেছে পুলিশ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

রংপুরে  করোনার হটস্পটের শঙ্কা কাটাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে জোর দেয় জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। ২০২০ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলায় ১২ লাখের বেশি মাস্ক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ১০ লাখের বেশি মাস্ক বিতরণ করেছে পুলিশ। দুই লাখ মাস্ক বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন। একই সময়ে রংপুর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৩৫৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। মাস্ক না পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ৯৪৪টি মামলায় প্রায় ১১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড আদায় করা হয়। বর্তমানে দেশে আবারও করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। প্রভাব পড়েছে রংপুরেও। এ অবস্থায় মাস্ক পরাসহ করোনা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে দ্বিতীয় দফায় মাঠে নেমেছে পুলিশ প্রশাসন।

‘মাস্ক পরার অভ্যাস, করোনামুক্ত বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে পুলিশের বিশেষ উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি। এর অংশ হিসেবে রোববার (২১ মার্চ) দুপুর ১২টায় রংপুর সিটি বাজার এলাকায় মাস্ক বিতরণ করেছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি)।

এর আগে সেখানে করোনার কবল থেকে বাঁচার উপায় শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এতে সভাপতিত্ব করেন আরপিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল আলীম মাহমুদ। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুলিশের পক্ষ থেকে মাস্ক বিতরণ ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছে সচেতন মহল। 

করোনা প্রতিরোধ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, রংপুরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুরু থেকেই দিনরাত কাজ করছে পুলিশ। বিনামূল্যে ১০ লাখের বেশি মাস্ক বিতরণ করেছে তারা। কিন্তু পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই সাধারণ মানুষের মাঝে এখন মাস্ক পরার অভ্যাস কমে গেছে। সারাবিশ্বে ফের করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। দেশেও পরিস্থিতি আবার উদ্বেগজনক মনে হচ্ছে। এখন পুলিশ ও জেলা প্রশাসন যদি তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে তাহলে করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমবে।

তিনি বলেন, অর্থনীতি ও জীবন চালিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে শহরে, গ্রামগঞ্জে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করা হবে। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে কারুপণ্যের দেওয়া ১০ লাখ মাস্ক বিতরণ করেছি। প্রয়োজনে আবারও বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থবিধি মানতে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

রংপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরিন জাহান বলেন, করোনা মহামারির শুরু থেকে সরকারি নির্দেশনায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে প্রশাসন মাঠে আছে। আমরা এখনো কাজ করছি। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থবিধি মানতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। আমাদের এসব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত বছরের মার্চ মাস থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রংপুর জেলায় ৩৫৭টি অভিযান চালানো হয়েছে। এতে স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারী ৯৪৪ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ৯৪৪টি মামলায় ১০ লাখ ৮৬ হাজার ৮৯০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়ছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় দুই লাখ মাস্ক বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে রংপুর জেলা ও পুলিশ প্রশাসন ছাড়াও রংপুরে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে করোনার ক্রান্তিকালে নগরে-বন্দরে, গ্রামগঞ্জে বিনামূল্যে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক সাবান বিতরণ করা হয়। লকডাউনে ঘরে-বাইরে সবখানে মানবিকতার হাত বাড়ায় বিভিন্ন সংগঠন।

রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ও জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব হিরম্ব কুমার রায় বলেন, কয়েকদিন ধরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আরও সচেতন হতে হবে আমাদের। দোকানপাট খুললেও সামাজিক দূরত্ব বজায় থেকে কেনাকাটা করতে হবে। বাজারে চলাচল করতে গেলেও নিয়ম মানতে হবে। না হয় করোনা প্রতিরোধ সম্ভব হবে না।

তিনি আরও বলেন, ১৫ মার্চ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত ছয়দিনে রংপুরে ২৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এখন প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে রংপুর জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৮৮ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭৩ জনের।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, রংপুর বিভাগে শনিবার (২০ মার্চ) পর্যন্ত  করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার পাঁচজনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ৫৩৩ জন। বিভাগের আট জেলায় করোনার টিকা নিয়েছেন চার লাখ ৬৬ হাজার ২৫১ জন।

এ পর্যন্ত দিনাজপুুর জেলায় চার হাজার ৭৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছেন ১১১ জন। রংপুর জেলায় চার হাজার ৮৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৫২০ জন, মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের। 

গাইবান্ধা জেলায় এক হাজার ৪৭৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন; মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। নীলফামারী জেলায় এক হাজার ৩৬৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলায় এক হাজার ২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৫ জন।  লালমনিরহাট জেলায় ৯৬৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পঞ্চগড় জেলায় ৭৯৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের।

বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, করোনা মোকাবেলায় পুলিশের ভুমকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনামূলক কর্মসূচি ও মাস্কবিতরণসহ করোনা মোকাবেলায় নানা ধরণের কর্মসূচি পালন করেন পুলিশ। কিছুক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন পুলিশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা।

Place your advertisement here
Place your advertisement here