• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

মেডিক্যালে চান্স পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত তামান্নার

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

দরিদ্রতার চাপে পিষ্ট এক অসহায় পরিবারের মেয়ে তামান্না। দুই বোনের মধ‍্যে সে বড়। তার পরো নাম তারজিনা আক্তার তামান্না। চলতি শিক্ষাবর্ষে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। জাতীয় মেধাতালিকায় তার স্থান ২২৬৭তম। মেধা স্কোর অনুযায়ী রংপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ হয়েছে তামান্নার।

তবে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েও তার চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। ভর্তির এত টাকা আর পড়ালেখার খরচ জোগাবে কিভাবে তার দরিদ্র বাবা? শেষ পর্যন্ত দরিদ্রতার কাছে কি হেরে যাবে তামান্না? তামান্নার অক্লান্ত পরিশ্রম আর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নগুলো নিয়ে এখন দুশ্চিন্তা ও হতাশাগ্রস্ত তার পরিবার।

সে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম বেলদহ গ্রামের দরিদ্র ফেরিওয়ালা তারা মিয়ার মেয়ে। তামান্না জয়মনিরহাট উচ্চ বিদ‍্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ ও ভুরুঙ্গামারী মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পায়।

তামান্নার বাবা তারামিয়া বলেন, বাড়ির ভিটাটুকু ছাড়া চাষাবাদ করার মতো তার কোনো জমি নেই। সংসার চালাতে ভ্যানগাড়িতে করে বিভিন্ন হাট-বাজারে কাপড় ফেরি করে বিক্রি করেন তিনি। তা দিয়ে যে আয় হয় তাতে কোনোমতে সংসার চলে। সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই তার।

তিনি আরো বলেন, এর আগে মেয়ের লেখা-পড়ার খরচ চালাতে এনজিও আরডিআরএস থেকে ঋণ নেন। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়ায় দুই বছরের জন‍্য ২৪ হাজার টাকা বৃত্তি প্রদান করে ওই এনজিওটি। বৃত্তির টাকা খরচ না করে সেই টাকা দিয়ে মেয়েকে রেটিনা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করান। করোনায় কোচিং বন্ধ থাকায় অনলাইনে ক্লাস করার জন‍্য মালয়েশিয়াপ্রবাসী তার এক পরিচিত ব‍্যক্তি একটি মোবাইল ফোন কিনে দেন মেয়েকে। আল্লাহর রহমতে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছে তামান্না।

দরিদ্রতাকে জয় করে অজপাড়া গাঁ থেকে তামান্না মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় পরিবারের পাশাপাশি গ্রামবাসীর মাঝেও বইছে আনন্দের বন্যা। এত আনন্দের মাঝেও তামান্নার ভর্তি হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। ভর্তির এত টাকা কিভাবে জোগাবে আর দীর্ঘ পাঁচটি বছর পড়ালেখার খরচই বা মেটাবে কিভাবে? এ কথাগুলো বলার সময় তার ছলছল চোখ দুটি দিয়ে ঝরছিল অশ্রু।

তামান্না জানান, মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়ে খুব আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু সেই আনন্দ আর সুখানুভূতি হারিয়ে চোখে-মুখে এখন হতাশা আর দুশ্চিন্তার ছাপ। মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পেয়েও চরম দরিদ্রতার বাধা অতিক্রম করে কিভাবে মেডিক্যালে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা করব সেই চিন্তাই করছি। এই কথা বলেই কেঁদে ফেলেন তামান্না।

তামান্নার মা লাইলী বেগম বলেন, তাদের কোনো জমি নেই। শুধু ভিটাটুকুই সম্বল। স্বামীর সামান‍্য আয়ে কোনো রকমে চলে সংসার। মেডিক্যালে ভর্তি ফি ও আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ নগদ প্রায় ৯০ হাজার টাকার প্রয়োজন। যা তাদের পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব। এ অবস্থায় মেয়েটি কিভাবে ডাক্তারি পড়বে এ নিয়ে তারা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না।

তামান্নার বিষয়ে ভুরুঙ্গামারী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ‍্যক্ষ খালেদুজ্জামান বলেন, মেয়েটি দরিদ্র পরিবারের হলেও অসম্ভব মেধাবী। কলেজে পড়ার সময় আমরা তাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছি। এমন এক প্রতিভা যেন দারিদ্র্যের কশাঘাতে হারিয়ে না যায়, সে জন‍্য তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।

Place your advertisement here
Place your advertisement here