• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

মাদকমুক্ত রামগঞ্জ গড়ে তুলতে চাই

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

৯০ এর দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মিছিলের সামনের কাতারে যে কজন মানুষকে দেখা যেতো, তাদের মধ্যে অন্যতম এম এ আউয়াল। যিনি অন্যায় আর অনিয়মের বিরুদ্ধে সব সময় গড়ে তুলেছেন জোর প্রতিবাদ। পরবর্তীতে নাম লিখিয়েছেন শ্রমিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে। রাজনীতি পাগল এ মানুষটির একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষের সেবা করা।

২০০৫ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন গঠনের শুরুতে তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। বর্তমানে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিবের দায়িত্বে রয়েছেন এম এ আউয়াল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তীব্র প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শীর্ষ নেতাও তিনি। সম্প্রতি রাজনীতি ও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুখোমুখি হন এম এ আউয়াল।

প্রশ্ন: রাজনীতি শুরুর গল্পটা কি বলবেন?

এম এ আউয়াল: রাজনীতি শুরু করি ছাত্র থাকাকালীন সময়। তখন থেকেই শিক্ষার্থীদের নানা দাবি নিয়ে সক্রিয় ছিলাম। পরবর্তীতে শ্রমিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে জড়াই। আপনারা জানেন, দেশে শ্রমিক অধিকার নিয়ে কথা বলার মানুষ খুব বেশি নেই। সে কথা মাথায় রেখেই শ্রমিক আন্দোলনে আত্মনিয়োগ করি। এনজিওদের নিয়ে একটি ফোরামও করেছিলাম একসময়। তারপর ২০০৫ সালে তরিকত ফেডারেশন গঠনের সূচনালগ্নে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলাম। পরবর্তীতে সাংগঠনিক সম্পাদক, মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছি।

প্রশ্ন: আপনি তো প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ী, তবুও রাজনীতির কঠিন পথে কেন নাম লেখালেন?

এম এ আউয়াল: রাজনীতির পথ অত্যন্ত কঠিন। তবুও এ পথেই মানুষের মুক্তি। সমাজ বা রাষ্ট্রে রাজনীতিই পারে পরিবর্তন আনতে। ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসা করে আমি ভালো ছিলাম, এটা ঠিক। কিন্তু মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে রাজনীতি একটি বড় প্লাটফর্ম। নিজে ভালো থাকাই মানুষের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়, সবাইকে নিয়ে ভালো থাকা দরকার। তাছাড়া রাজনীতি করি মানুষের সেবায়। এর বাইরে আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। এটা সত্য যে, ব্যবসায় আমি খারাপ নেই। তবুও যখন মানুষের কথা ভাবি, তখন তাদের জন্য কিছু করার একটা দায়িত্ববোধ জেগে উঠে। সে দায়িত্ববোধ থেকেই রাজনীতির মাঠে আমার পদচারণ।

প্রশ্ন: আপনারাই তো সবার আগে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলেছিলেন-

এম এ আউয়াল: আমি গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে রাজনীতি পছন্দ করি। আমাদের বড় অর্জন মুক্তিযুদ্ধ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এর বিরোধীতা করেছে পাকিস্তানের এজেন্ট জামায়াতে ইসলামী। তারা স্বাধীনতা সংগ্রাম চায়নি। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক দল চেয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামও করেছে। কিন্তু কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ কেউ নেয়নি। আমরাই কার্যকরি ভূমিকা রেখেছি। আমরা দেখলাম, জামায়াত রাজনীতিতে যেভাবে দিনদিন সক্রিয় হচ্ছে, তাদের মোকাবিলা কেবল রাজনীতি দিয়ে নয়, আইনীভাবেও করার প্রয়োজন রয়েছে। তাই তাদের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে রিট করেছি। এখনো সে আন্দোলন চলমান। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

প্রশ্ন: এ আন্দোলন চালিয়ে যেতে কখনো ঝুঁকি মনে হয়নি?

এম এ আউয়াল: ঝুঁকি তো আছেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাজনীতি করছি। জামায়াত তো সহিংস সন্ত্রাসী দল। তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া সহজ কথা নয়। কিন্তু কোনো কিছুর পরোয়া না করে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এ দলটির বিপক্ষে অবস্থান নেই। যতোদিন বেঁচে আছি, জামায়াতের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অটল থাকবে।

প্রশ্ন: আপনার নির্বাচনকে ঘিরেও তো রামগঞ্জে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে-

এম এ আউয়াল: ঠিক বলেছেন। আমার নির্বাচন করাটা ছিলো এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে স্বাধীনতার পর কেউ কোনো দিন নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হতে পারেনি। এবারই প্রথম তরিকত ফেডারেশন থেকে আমি প্রার্থী হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীকে জয় ছিনিয়ে এনেছি। সেজন্যও আমাকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। সারাদেশে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হলেও, সেদিন আমার নির্বাচনী এলাকার ২২টি কেন্দ্র জামায়াত বিএনপি জ্বালিয়ে দিয়েছিলো। পরবর্তীতে ১৬ জানুয়ারি আবার নির্বাচন হয়। শক্ত প্রতিন্দ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে আমি বিজয়ী হই।

প্রশ্ন: এমপি হওয়ার পর আপনার এলাকার কোন বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন?

এম এ আউয়াল: সবার আগে আমি সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে জোর দিয়েছি। রামগঞ্জে তিনটা সীমান্ত থাকায় অবাধে মাদক আনা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। আমি সবার আগে সেটা নির্মূলের উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে আমি সব সময়ে সচেষ্ট। স্কুল রাস্তাঘাট, মসজিদ মন্দির, কালভার্টসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছি। প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কাজ করেছি। তবে আমার স্বপ্ন, রামগঞ্জকে মডেল এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সেজন্য প্রয়োজন আরো এক হাজার কোটি টাকা। আগামীতে নির্বাচিত হলে সে কাজটি করতে চাই।

 

2.মাদকমুক্ত আদর্শ রামগঞ্জ গড়ে তুলতে চাই

প্রশ্ন: আপনারা তো সরকারেরও অংশীদার। সরকারের সমালোচনা কীভাবে করেন?

এম এ আউয়াল: আমরা অংশীদার হলেও, সংসদে এবং সংসদের বাইরে সবসময় সরকারের ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো সমালোচনা করি, সেগুলো নিয়ে মতামতও দেই। লক্ষ্য করলে দেখবেন, দলের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজিবুল বশর মাইজভান্ডারিও বিভিন্ন সময়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে এসব নিয়ে কথা বলেন। আমিও বলি। যেমন ৩২ ধারার বিষয়ে আরো বিবেচনার দাবি তুলেছিলাম আমি।

প্রশ্ন: আপনার সংসদীয় আসনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন?

এম এ আউয়াল: এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে যেমন আছে, তা আরো উন্নত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত এলাকা গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি চাই, পুলিশ যেনো মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের বন্ধু না হয়ে যায়। তেমনই নির্দেশনা দেয়া আছে। তবে এ অবস্থার আরো উন্নয়ন প্রয়োজন। সেজন্য কাজও করে যাচ্ছি।

প্রশ্ন: আগামী দিনের পরিকল্পনা কী?

এম এ আউয়াল: পরিকল্পনা তো একটাই। আর তা হলো- এলাকার উন্নয়ন আর মানুষের সেবা করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব সেক্টরে যেভাবে উন্নয়নের ধারা শুরু করেছেন, সে ধারা যেনো আমার এলাকাতেও অব্যাহত থাকে, সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরইমধ্যে এলাকার অবকাঠামোগত খাতে এক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। আমি রামগঞ্জ নিয়ে যে স্বপ্ন দেখি, সেটা বাস্তবায়নে আরো এক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রয়োজন। আমি চাই সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত, আর্থসামাজিকভাবে উন্নত রামগঞ্জ গঠন করতে। যা হবে একটি আধুনিক, আদর্শ ও মডেল এলাকা। সে পরিকল্পনা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here