• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

ভার্চুয়াল কোর্টে জামিন পেলেন ৪৮৯ শিশু

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

করোনা পরিস্থিতিতে নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায়, ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে জামিন পেয়েছে সমাজসেবা অধিদফতরের অধীন ৩টি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ৪৮৯ শিশু।

১১ বছরের শিশু রায়হান (ছদ্মনাম)। মাদকসহ ঢাকার মহাখালী রেললাইন এলাকা থেকে গত ৩০ মার্চ পুলিশের হাতে আটক হয় সে। পরে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে শিশুটিকে টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কারাগারে পাঠানো হয়। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে নিয়মিত শিশু আদালতে বিচারকাজ বন্ধ থাকায় তখন জামিনের আবেদন করারও সুযোগ হয়নি তার। দীর্ঘ অপেক্ষার পর গত ১১ মে ভার্চুয়াল আদালতে বিচারকাজ শুরু হলে আশান্বিত হয়ে ওঠে শিশুটি।

বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় ২০ মে জামিন হয় তার। পরে শিশুটিকে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। ঈদের আগেই ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুশি তার বাবাও। তিনি বলেন, 'ছেলেকে দেখে তার মা কান্নায় ফেটে পড়েছিলেন। এটা খুশির কান্না। ওরে নিয়ে এবার ঈদ করতে পারব ভাবি নাই।'

শুধু রায়হান নয়, আইন সংশোধন করে ভার্চুয়াল আদালতে বিচারকাজ শুরু করার পর ৪৮৯ শিশু জামিনে মুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঈদের আগে জামিনে মুক্ত হয় ২৪৭ শিশু। তাদের অধিকাংশই পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে সক্ষম হয়েছে।

এ বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, বিশেষ সরকারি ব্যবস্থাপনায় জামিনপ্রাপ্ত ২৪৭ শিশুকে ঈদের মধ্যেই তাদের অভিভাবকের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। আর পরে যারা জামিন পেয়েছে, তাদেরও দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিবার ও স্বজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

করোনা দুর্যোগে গত ২৫ মার্চ থেকে দেশের উচ্চ ও অধস্তন আদালতে নিয়মিত বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ৯ মে 'আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০' জারি করে। একই সঙ্গে উচ্চ আদালত থেকে জারি করা হয় বিশেষ নির্দেশনা। এর ফলে ১১ মে থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার পথ উন্মুক্ত হয়। তখন প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা অনুযায়ী শিশুদের জামিনের বিষয়ে উদ্যোগ নেয় 'সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস'। তাদের সহযোগিতা করে সমাজসেবা অধিদপ্তর।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত ১১ মে থেকে এ পর্যন্ত ভার্চুয়াল আদালতের (শিশু আদালত) মাধ্যমে প্রায় ৪৮৯ শিশুর জামিন হয়েছে। তারা গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে, গাজীপুরের কোনাবাড়ী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (বালিকা) এবং যশোরের পুলেরহাটের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) আটক ছিল। জামিনপ্রাপ্তদের সবাইকে তাদের অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা ও মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, শিশু আদালত থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এ পর্যন্ত ৪৮৯ শিশুর জামিন হয়েছে। পরে তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। ইউনিসেফ শিশুদের জামিন-পরবর্তী সুরক্ষা তদারক করছে। শিশুদের জামিন এবং পরবর্তীতে তাদের অভিভাবকদের কাছে পৌঁছানোর বিষয়টি শিশু অধিকার-সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কমিটি (স্পেশাল কমিটি অব চাইল্ড রাইটস) নিয়মিত মনিটর করছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশের ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা প্রধান ন্যাটালি ম্যাককলে। তিনি বলেন, বিভিন্ন অভিযোগে আটক শিশুদের মামলা নিষ্পত্তিতে অনেক বছর লেগে যায়। এ কারণে আটক শিশুরদের নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। শিশুদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী, দেশে ১৮-এর কম বয়সী শিশুদের সম্পর্কে প্রায় ২৩ হাজার মামলা বিচারাধীন।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সমাজসেবা অধিদপ্তর দেশের তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র পরিচালনা করে আসছে। কেন্দ্র তিনটি গাজীপুর জেলার টঙ্গী, কোনাবাড়ী ও যশোরে অবস্থিত। এর মধ্যে টঙ্গী ও যশোরের কেন্দ্র দুটি বালকদের জন্য ও কোনাবাড়ীর কেন্দ্রটি বালিকাদের জন্য নির্ধারিত। ভার্চুয়াল আদালত চালু হওয়ার সময় এই তিনটি সংশোধন কেন্দ্রে শিশু ছিল এক হাজার ১৪০ জন।

শিশু আইন-২০১৩ অনুযায়ী, বিভিন্ন অভিযোগে আটক এসব শিশু যাতে সাধারণ কারাগারে বড়দের সংস্পর্শে এসে বড় অপরাধী না হয়ে পড়ে, সে জন্য তাদের আলাদা রেখে সংশোধন করার জন্যই এই শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখা হয়।

Place your advertisement here
Place your advertisement here